অভিমত

বন্যা উপদ্রুত এলাকায় জরুরি ত্রাণ প্রয়োজন

Looks like you've blocked notifications!

প্রতিবছরের বর্ষা মৌসুমের ঠিক এ রকম সময়েই ছোট-বড় আকারের বন্যা মোকাবিলা করতে হয় বাংলাদেশের কোনো না কোনো অঞ্চলের মানুষের। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। বিগত কয়েক দিন ধরে অব্যাহতভাবে বিভিন্ন মিডিয়ায় দেশের বেশ কয়েকটি অঞ্চলে, বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলে দিন দিনই বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, জামালপুর, সুনামগঞ্জ, লালমনিরহাট, পঞ্চগড় ছাড়াও প্রতিদিনই নতুন নতুন এলাকা বন্যাকবলিত হচ্ছে। সেই বন্যায় উপদ্রুত হয়েছে কমপক্ষে ১০ লাখ মানুষ। এসব অঞ্চলের বেশিরভাগ নদ-নদীর পানিরই বিপৎসীমার অনেক ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বন্যা উপদ্রুত এসব এলাকার বানভাসি মানুষ খুবই সমস্যার মধ্যে পড়ে যায়। কারণ, বন্যার পানি চলে আসে হঠাৎ করে। সে জন্য কোনো পূর্বপ্রস্তুতি নিতে না পারার কারণে তাঁদের কোনো প্রয়োজনীয় জিনিসই তাঁরা রক্ষা করতে পারেন না। কৃষি ফসল, গবাদিপশু, হাঁস-মুরগি, এমনকি ঘরের ধান-চাল কোনো কিছুই রক্ষা করার ফুরসত পান না তাঁরা। সে জন্য অনেক সচ্ছল পরিবারের মানুষকেও তাঁদের তাৎক্ষণিক নিত্যদিনকার খাবার-দাবার, সুপেয় পানি, পশু রাখার স্থান, পশুর খাদ্য ইত্যাদির জন্য মারাত্মক কষ্টের মধ্যে পড়তে হয়।

বানের পানির তোড়ে নদ-নদীর পাড়ের মানুষের ফসলি জমি, বাড়িঘর, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মসজিদসহ অন্যান্য উপাসনালয় ভাঙনের মুখে পড়ে যায়। তা ছাড়া সে সময় ছড়িয়ে পড়ে কিছু বন্যাজনিত রোগ, যেমন—বিশুদ্ধ পানি না পাওয়ার কারণে পেটের পীড়া, বিভিন্ন চর্মরোগ ইত্যাদি। এ সময় বানভাসি মানুষের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন তাৎক্ষণিক সাহায্য-সহযোগিতা। আর সাহায্য-সহযোগিতার মূল জিনিসগুলো হলো শুকনা খাবার, নগদ অর্থ, বিশুদ্ধ খাবার পানি, যোগাযোগের জন্য পর্যাপ্ত নৌযান, প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য মেডিকেল টিম ইত্যাদি। এসব ত্রাণসামগ্রী যত তাড়াতাড়ি উপদ্রুত এলাকায় পৌঁছানো যায়, তত ভুক্তভোগীদের জন্য মঙ্গল। এখানে প্রায়ই একটি জিনিস অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে লক্ষ করা যায়, যখনই এ ধরনের কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ নেমে আসে, আমরা কেন জানি ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্যার্থে এগিয়ে আসতে সব সময়ই একটু পিছিয়ে থাকি। আর সবাই শুধু সরকারি সাহায্যের জন্য বসে থাকি। অথচ এসব তাৎক্ষণিক দুর্যোগ মোকাবিলার জন্যই স্থানীয় প্রশাসন কিংবা স্থানীয় সরকারের প্রতিনিধিরা রয়েছেন, রয়েছেন স্থানীয় জাতীয় সংসদ সদস্যরা।

এ তো গেল সরকারি সাহায্য-সহযোগিতা এলে তা বিতরণের ব্যবস্থাকরণের জন্য কর্তৃপক্ষগুলো। তার পরেও তো দেশে এবং সংশ্লিষ্ট এলাকায় অনেক সচ্ছল ও ধনাঢ্য ব্যক্তি রয়েছেন, যাঁদের হাত একটু সম্প্রসারিত করলেই উপদ্রুত এলাকার এসব মানুষের কষ্ট অনেকাংশেই লাঘব হতে পারে সহজে। এগুলো হলো বন্যা চলার সময়কার কথা। বন্যা-পরবর্তীকালে করতে হবে পুনর্বাসন কাজ। কারণ, এখন বন্যা চলমান অবস্থায় শাকসবজি, ফলমূল, আমন ধানের বীজতলা, কোনো কোনো এলাকার ক্ষেতে লাগানো আমন ধান, পুকুর ও অন্যান্য মুক্ত জলাশয়ে নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে চাষকৃত মাছের ঘের। তা ছাড়া বন্যাজনিত রোগে গবাদিপশু, হাঁস-মুরগি ইত্যাদিও মারা গিয়ে কৃষককে সর্বস্বান্ত করে ফেলে। সে জন্য এসব প্রতিটি ক্ষেত্রে সরাসরি আর্থিক সহায়তার প্রয়োজন পড়ে। আর দীর্ঘমেয়াদি আর্থিক সহযোগিতার জন্য সহজ শর্তে ব্যাংক ঋণের ব্যবস্থা তো রয়েছেই। বন্যার সময়ে যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পানিতে ডুবে যায়, সেগুলোতে শিক্ষার্থীদের সে সময়ে যে ক্ষতি হয়, তা পরে অতিরিক্ত ক্লাস নিয়ে পুষিয়ে দিতে হবে।

তা ছাড়া বন্যা-পরবর্তী সময়ে সেসব এলাকার কাঁচা ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট সবই ভেঙে গ্রামীণ যোগাযোগ নেটওয়ার্ক বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। সে জন্য বন্যার পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অন্তত রাস্তাঘাটগুলো ঠিক করে দিতে হবে। তবে পরে যা কিছুই করা হোক না কেন, এখন প্রয়োজন সর্বজনীন ভিত্তিতে একটি উদ্যোগ, যার মাধ্যমে বন্যার্তরা তাড়াতাড়ি ত্রাণসামগ্রী পাবে। সেখানে তাদের পাশে মানবিক সাহায্য নিয়ে যত আগে পৌঁছা যাবে, ততই মঙ্গল। সংশ্লিষ্ট এলাকার সরকারি-বেসরকারি সব প্রতিষ্ঠানকে একযোগে কাজ করলে তা মোকাবিলা সহজ হবে।

লেখক : ডেপুটি রেজিস্ট্রার, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়।