ক্রিকেট

বাংলাদেশের টেস্ট স্ট্যাটাস প্রসঙ্গে

Looks like you've blocked notifications!

নাইমুর রহমান দুর্জয়ের নেতৃত্বে ২০০০ সালের ১০ নভেম্বর ভারতের বিপক্ষে ঢাকায় সেই প্রথম ঐতিহাসিক অভিষেক টেস্ট ম্যাচ বাংলাদেশ দলের, যে ম্যাচে প্রথম ইনিংসে ৪০০ রান করেও ৯ উইকেটে হেরেছিল বাংলাদেশ। আজকে ২০১৬ সালের ৩০ অক্টোবর মুশফিকুর রহিমের নেতৃত্বে নিজেদের ৯৫তম টেস্ট ম্যাচে প্রথম ইনিংসে ২২০ করেও ১০৮ রানে জেতার এক অবিশ্বাস্য স্বাদ পেল বাংলাদেশ। ২০০০ থেকে ২০১৬—মাঝখানে হয়ে গেছে অনেক কিছুই। বাংলাদেশের সঙ্গে টেস্ট খেলা মানেই যেখানে প্রতিপক্ষ টিমগুলোর নিয়মিতভাবে ইনিংস ব্যবধানে জেতা নিশ্চিত ছিল, সেখানে টেস্টে প্রাপ্তি বলতে শুধু জিম্বাবুয়ে এবং তৎকালীন তুলনামূলক নড়বড়ে ক্যারিবিয়ানদের সঙ্গে টেস্ট সিরিজ জয়ের সুখস্মৃতিটুকুই ছিল বলার মতো। কিন্তু পূর্ণ শক্তির ইংল্যান্ড দলের সঙ্গে আজকের এই সিরিজ ভাগাভাগি করে নিতে পারাটা আপাতত টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের সেরা অর্জন বলেই বিবেচিত হবে নিঃসন্দেহে।

হয়তো আজ দেখা যেত ইংল্যান্ডের মতো ক্রিকেটের অন্যতম পরাক্রমশালী দলকে হোয়াইটওয়াশের লজ্জায় ডুবিয়েছে বাংলাদেশ। কিন্তু সেটা হলো না চট্টগ্রামে ২২ রানের পরাজয়ের কারণে। এর আগেও মনে পড়ে বিদেশে ২০০৩ সালে মুলতানে পাকিস্তানের বিপক্ষে, নিজ দেশে ২০০৬ সালে ফতুল্লায় অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে এবং ২০০৮ সালে চট্টগ্রামে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে শেষ মুহূর্তে এসেও শেষ হাসি হাসতে পারেনি বাংলাদেশ। চট্টগ্রামের ওই জিততে জিততে হেরে যাওয়া ম্যাচটা যেন এক নতুন আশার জন্ম দিয়েছিল ক্রিকেটপাগল কোটি বাঙালির হৃদয়ে।

ঢাকা টেস্ট জয়। ২৭৩ টার্গেটটা অনেক বেশি আশার সঞ্চার করছিল সবার মনে। কারণ, স্পিনে ইংলিশরা কতটুকু নড়বড়ে, তা তাদের গত তিন ইনিংসেই দেখা গেছে। কিন্তু ক্যাপ্টেন কুক আর বেন ডাকেট যেন সেই স্বপ্নের পথে অনেক বড় বাধা হয়েই দাঁড়িয়ে যেতে চাইছিলেন। একসময় যখন বিনা উইকেটে ১০০ রান তুলে নিল ইংল্যান্ড, তখন চিন্তার চাপ সবার চোখেমুখেই। কে জানত, বিধাতা যে সব নাটক সাজিয়ে রাখবেন তৃতীয় দিনের চা বিরতির পরেই। এই চা বিরতিই যেন ম্যাচের মূল টার্নিং পয়েন্ট হয়ে দাঁড়াল। তরুণ মিরাজ যেন অন্য এক উদ্দীপনায় বল ছুড়তে শুরু করলেন, পাশাপাশি অভিজ্ঞ সাকিব আল হাসানের অসাধারণ সব ঘূর্ণি। আবারও এই স্পিনের কাছেই ধরাশায়ী হয়ে বিনা উইকেটে ১০০ থেকে ১৬৪ রানেই অলআউট ইংলিশরা। সঙ্গে সঙ্গে লেখা হয়ে গেল নতুন এক ইতিহাসও।

আজকের এই ঢাকা টেস্ট জয় ক্রিকেটবিশ্বের কাছে হয়তো খুব বেশি স্মরণীয় কোনো কিছু হয়ে থাকবে না। কিন্তু বাংলাদেশ দলের প্রতিটি সদস্য, দেশের প্রতিটি ক্রিকেটপ্রেমী মানুষের কাছে এটি অনেক বড় একটি অর্জন হয়ে সামনের দিনগুলোতে সাহস নিয়ে এগিয়ে চলার প্রেরণা দিয়ে যাবে। জাতি হিসেবে আমরা কতটুকু অতিথিপরায়ণ, তার প্রমাণ আমরা অনেক আগে বিভিন্নভাবেই দিয়ে এসেছি। কিন্তু সফরজুড়ে একজন সহ-অধিনায়ক হয়েও বেন স্টোকস প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়দের সঙ্গে যে রকম আচরণ দেখিয়ে গেছেন, সাকিবের এই সালামটা হয়তো তার জবাবের জন্যও নয়। হয়তো এ জন্য যে প্রিয় ইংল্যান্ড, যে সময়ে যে অবস্থায় আপনারা বাংলাদেশ সফরে আসতে রাজি হয়েছেন, আমরা আপনাদের কাছে সত্যি অনেক বেশি কৃতজ্ঞ। আবারও এ দেশের ভালোবাসায় সিক্ত হবেন—এ কামনাই রইল।   

একদিনের ক্রিকেটে বাংলাদেশ যেভাবে আধিপত্য দেখাতে শুরু করেছে, সেই চোখে চোখ রেখে খেলার সাহসটুকু তারা কিছুটা হলেও টেস্ট ক্রিকেটে বয়ে নিয়ে আসতে শিখছে বলেই বিশ্বাস। হয়তো এখানে এখন একজন মাশরাফি নেই, কিন্তু বিশ্ববাসী আজ অবাক হয়ে দেখেছে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ কতটুকু সম্ভাবনাময়। সেই সম্ভাবনার পালে নতুন শক্তি সঞ্চার করে যাবে বিশ্বসেরা সাকিব আল হাসান, সাইলেন্ট কিলার মাহমুদউল্লাহ, ডিপেন্ডেবল ও আত্মবিশ্বাসী দলপতি মুশফিকুর রহিম এবং নতুন বিস্ময় মেহেদি মিরাজের মতো কাণ্ডারিরা।

দেশের মাটিতে অন্য দলগুলোর কাছে আমরা এখন কতটুকু সমীহ-জাগানিয়া দল, সেটা গত কয়েক মাস ধরেই দেখানোর সুযোগ হয়েছে। সময় এখন দেশের বাইরেও ভালো করার। আমরা ভালো করবই। হাথুরুসিংহে, কোর্টনি ওয়ালশদের সাহচর্যে বংলাদেশ একদিন র‍্যাংকিংয়ের প্রথম দিকে থেকে ক্রিকেটনৈপুণ্য দেখিয়ে যাবে, সেটাই এখন প্রত্যাশা ক্রিকেটপ্রেমী কোটি বাঙালির।

 

লেখক : সাবেক সভাপতি, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, ক্রীড়া।