মার্কিন নির্বাচন
শুভবুদ্ধির জয় হবে তো!
মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন যতই এগিয়ে আসছে ততই বাড়ছে উদ্দীপনা ও উদ্বেগ। দুই প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বীর ভোটারদের মন জয়ের চেষ্টা তুঙ্গে উঠেছে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত জনমত জরিপে সামান্য ব্যবধানে এগিয়ে আছেন হিলারি। হাড্ডা-হাড্ডি লড়াইয়ের আশা করছেন নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা। শেষমুহূর্তে উলট-পালট হয়ে যেতে পারে সবকিছু। একদিকে শুভবুদ্ধি-শুভকামনা, অপরদিকে হিংসা-বিদ্বেষের প্রতিযোগিতা। শুভ কামনার আবেদন নীরব এবং সুন্দর আর অশুভকামনার আবেদন সরব এবং সাংঘর্ষিক। বিবেক বুদ্ধির কথা বলে যতটা না মানুষকে আকর্ষণ করা যায় স্বার্থ সুবিধার কথা বলে তারচেয়ে বেশি উত্তেজনা ছড়ানো যায়।
বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসিদের রাষ্ট্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভিতরে অভিবাসী প্রশ্নে যে বিভেদ দেখা দিয়ে তা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় সংহতিকে এক সময়ে বিপন্ন করে তুলতে পারে। মুসলমানদের বিরুদ্ধে যে ঘৃণার বিষ বৃক্ষ ডোনাল্ড ট্রাম্প রোপণ করলেন তা ভবিষ্যতে সামাজিক সম্প্রীতি বিনষ্টের কারণ হয়ে দেখা দিতে পারে।
জাতির অভিভাবক হিসেবে প্রেসিডেন্ট ওবামা ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিষয়ে সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, ৮ নভেম্বরের নির্বাচনের ওপর শুধু যুক্তরাষ্ট্রের নয়, বিশ্বের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে। নর্থ কেরোলিনা অঙ্গরাজ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের উদ্দেশ্যে দেওয়া এক ভাষণে প্রেসিডেন্ট ভোটারদের রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের ব্যাপারে আবারো সতর্ক করে দেন। তিনি বলেন, রিপাবলিকান প্রার্থী দেশের সেনাবহিনীর সর্বাধিনায়ক হওয়ার অযোগ্য। প্রেসিডেন্ট হওয়ার যোগ্যতা তাঁর নেই। এর আগের দুই নির্বাচনে তাঁকে দুই রিপাবলিকান প্রার্থী জন মেককেইন ও মিট রমনির সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হয়েছে- এ কথা উল্লেখ করে ওবামা বলেন, তিনি একবারও ভাবেননি তাঁদের কেউ নির্বাচিত হলে বিপর্যয় নেমে আসবে। কিন্তু ট্রাম্পকে নিয়ে তিনি সেই ভয় পাচ্ছেন।
এদিকে সর্বশেষ এক জনমত জরিপে দেখা যাচ্ছে, ট্রাম্পের চেয়ে ৩ পয়েন্টে এগিয়ে রয়েছেন হিলারি। ইতিমধ্যে অঙ্গরাজ্য পর্যায়ের জরিপে ট্রাম্প উল্লেখ যোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছেন। নিউইয়ার্ক টাইমসও সিবিএস নিউজের নতুন জরিপে এই মুহূর্তে হিলারির পক্ষে রয়েছে ৪৫ শতাংশ এবং ট্রাম্পের ৪২ শতাংশ। নেভাদার ও আরিজোনায় ট্রাম্প এগিয়ে রয়েছেন এবং নিউ হ্যাম্পশায়ারে সমানে সমান। তবে পেনসিলভেনিয়ায় হিলারি ৪ পয়েন্ট এগিয়ে রয়েছেন। বিশিষ্ট্য জনমত বিশেষজ্ঞ নেট সিলভার জানিয়েছেন, ‘ব্যাটেলগ্রাউন্ড’ নামে পরিচিত অঙ্গরাজ্যগুলোর যেখানে দুই প্রার্থীর কারোরই স্পষ্ট জনপ্রিয়তা নেই) কোনো কোনোটিতে ট্রাম্প উল্লেখ্যযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছেন। ভার্জিনিয়া, মিশিগান ও পেনসিলভেনিয়ায় এই মুহূর্তে হিলারি এগিয়ে কিন্তু ট্রাম্প তার দুর্গে আঘাত হেনে চলেছেন।
যেকোনো প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী যদি জয়লাভ করতে চান তাঁকে সংবিধান মোতাবেক ২৭০টি ইলেক্ট্ররাল কলেজ ভোট পেতে হবে। সে ক্ষেত্রে হিলারি এখনো সুবিধা জনক অবস্থানে আছেন বলে মনে হচ্ছে। ট্রাম্পকে রিপাবলিকান বিবেচিত অঙ্গরাজ্যগুলোতে তার অবস্থান নিশ্চিত করতে হবে। সেই সাথে হিলারির নিশ্চিত অঙ্গরাজ্যগুলোতেও হানা দিতে হবে। আর ডোনাল্ড ট্রাম্পের জন্য এটি অসম্ভব আশা। জনমত বিশেষজ্ঞ নেট সিলভার আশঙ্কা করছেন, আফ্রিকান আমেরিকান ও হিস্পানিকদের মধ্যে যর্থেষ্ট উৎসাহ-উদ্দীপনা সঞ্চারে ব্যর্থ হলে হিলারির জন্য বিজয় অর্জন কঠিন হয়ে উঠতে পারে।
পর্যবেক্ষক মহল বিস্ময়ের সাথে লক্ষ করছে যে, শুরুতে হিলারির জনপ্রিয়তা যে তুঙ্গে ছিল এখন আর তা নেই। ধীরে ধীরে ট্রাম্প এগিয়েছেন এবং হিলারি পিছিয়েছেন। আগেই ভালো-মন্দের যে প্রতিযোগিতার কথা বলা হয়েছে তা একটি বাস্তব সত্য। পৃথিবীব্যাপী মন্দের যে উদাহরণ বার বার সৃষ্টি হচ্ছে তাতে শুভকামনার লোকেরা আশ্বস্ত থাকতে পারছেন না। ইতিমধ্যে ট্রাম্পের সমর্থনের পাল্লা একটু ভারি হওয়ায় বিশ্ব শেয়ার বাজারে নেতিবাচক প্রভাব লক্ষ করা যায়। আর অভ্যন্তরীণ হিসাব করলে হিস্পানিক, মুসলিম এবং অন্য অভিবাসীদের মধ্যে উদ্বিগ্নতার ছাপ লক্ষ করা যাচ্ছে। এই উদ্বিগ্নতা, অস্থিরতা এবং বিদ্বেষকে সম্বল করে যদি নির্বাচনের দিন বৈরি গোষ্ঠী- তৃতীয় বিশ্বের কায়দায় নির্বাচন ভঙ্গ করে তবে তা হবে মার্কিন গনতন্ত্রের জন্য বিপজ্জ্নক। গোটা বিশ্বের ‘শুভকামনার মানুষ’ আশা করে শুভবুদ্ধির উদয় হবে।
লেখক : গবেষক ও প্রাবন্ধিক , সরকার ও রাজনীতি বিভাগ , জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ।