স্বাধীন ভাবনা

কতটুকু এগিয়েছে নারী?

Looks like you've blocked notifications!

প্রত্যাশা, প্রাপ্তি, অগ্রগতি এগুলোর তো কোনো শেষ নেই। আমি বলব, ১৯৭১ সালের পর থেকে নারী অনেক এগিয়ে গেছে সেটা ঠিক। কর্মক্ষেত্রে, বিভিন্ন সূচক, গড় আয়ু, মাতৃত্বকালীন মৃত্যুর হার বা সন্তান জন্মদানের সময় মৃত্যুর হার কমে গেছে। নারীশিক্ষার হার বেড়ে গেছে। কর্মক্ষেত্রেও নারীর সংখ্যা বেড়ে গেছে। এ ক্ষেত্রগুলোতে নারীদের প্রাপ্তি ও প্রাপ্য অগ্রগতি হয়েছে।

সঙ্গে সঙ্গে কয়েকটি জায়গায় প্রাপ্তি প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। সেটা হলো নারীদের সর্বক্ষেত্রে যে সমান অধিকার পাওয়ার কথা, তা পূরণ হয়নি। বিশেষ করে উত্তরাধিকার আর বিভিন্ন পারিবারিক বিষয়ে তার যে সমান সম্পত্তি পাওয়ার কথা, সেটা পূরণ হয়নি। রাষ্ট্রীয়ভাবে যে স্বীকৃতি বা রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে সমান অধিকার পাবে, সেটা এখনো পূরণ হয়নি। সেটা অনেক দূরের কথা। নারীদের চলাফেরা করার অনেক বিচরণ হয়েছে, অনেক সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে, কিন্তু অন্যদিকে তার ওপর যৌন হয়রানি, তার নিরাপত্তাহীনতা এগুলো অনেক বেড়ে গেছে। আমি বলব যে দুই দিক থেকেই একটা অবস্থানে আছে। নারীরা অনেক জায়গা এগিয়ে গেছে, আবার অনেক জায়গায় তাদের বাধা আরো বেড়ে গেছে, হুমকি বেড়ে গেছে, নিরাপত্তাহীনতা বেড়ে গেছে। এ বিষয়গুলো বেড়ে গেছে। সচেতনতা যেমন বেড়েছে, অন্যদিকে তার ওপর জুলুম আর দমন বেড়ে গেছে।

এখনো নারীরা স্বাধীনতার দিক দিয়ে, ক্ষমতায়নের দিক দিয়ে প্রত্যাশার জায়গায় পৌঁছাতে পারেনি বিভিন্ন বাধ্যবাধকতার বা বাধার কারণে। রাজনীতির ক্ষেত্রে নারীদের অংশগ্রহণ আগে খুব একটা দেখা যেত না, অনেক কম সংখ্যক দেখা যেত। এখন যেটা অনেক বাড়তে শুরু করেছে। ১৯৫৬-তে নূরজাহান মুর্শেদ প্রতিমন্ত্রী হয়েছিলেন। তারপর ১৯৭২ সালে বদরুন্নেছা আহমেদ মন্ত্রী হয়েছিলেন। কোনো সময় যে আমরা নারী মন্ত্রী পাইনি সেটা নয়, এসেছেন মাঝেমধ্যে। কিন্তু এখন মন্ত্রীর সংখ্যায় বেড়েছে। আমরা অনেক নারী মন্ত্রী পাচ্ছি। ১৯৯১ সালের পর থেকে আমরা নারী প্রধানমন্ত্রীও পেয়ে আসছি। আমরা এখন মহান জাতীয় সংসদের নারী স্পিকারও পেয়েছি। বর্তমানে রাজনৈতিক দলগুলো এখন পর্যন্ত কিছু নারীকে গ্রহণ করতে রাজি আছে। কিন্তু সম্পূর্ণভাবে নারীকে গ্রহণ করতে রাজি নয়। সেখানে এখনো পিছিয়ে আছে। ব্যক্তি দক্ষতা দিয়ে হয়তো কোনো নারী এগিয়ে গেছে। কিন্তু তারা সংখ্যায় অনেক কম।

আমি মনে করি যে নারীর দক্ষতা-ক্ষমতা সবকিছু আছে। অনেক সময় বলা হয় যে নারী ওই জায়গায় এখনো এগিয়ে আসতে পারেনি। নারীদের সমানভাবে গ্রহণ করার মধ্যে একটা গ্যাপ রয়ে গেছে। এই জায়গায় আরো কাজ করার আছে বলে আমি মনে করি।

বাংলাদেশের নারীরা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে অনেক জায়গায় নিজেদের তুলে ধরতে পেরেছে। একাডেমিক অঙ্গনে যারা আছে মানে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াচ্ছে, বই লিখছে। আমাদের কিছু নারী আছে, যারা আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে অত্যন্ত খ্যাতি অর্জন করেছে, যেমন—উজ্জ্বল নক্ষত্র অধ্যাপক নাইলা কবির। আমিরা হক, উনি ইউএনডিপির অফিস থেকে আন্ডার ফ্যাকালটি জেনারেল হিসেবে অনেক সুনাম অর্জন করেছেন। এ রকম আমাদের আরো অনেক নারী আছেন, যাঁরা আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে লেখক হিসেবে নাম করতে পেরেছেন বাংলাদেশের। আর বাংলাদেশে অনেক নাম করতে পেরেছে, যাঁদের ছাপ আন্তর্জাতিকভাবে দেখা যায়। সে রকম আমাদের অনেক নারী আছে, যে রকম ওয়াসফিয়া নাজরীন পর্বতে গিয়ে সে যে শুধু পর্বত্য চূড়ায় উঠেছে, সেটা না ন্যাশনাল জিওগ্রাফি দু-দুবার তাঁকে পুরস্কার প্রদান করেছে, সেটা খুব কম সংখ্যক লোক পায়। সেটা সে পেয়েছে। তারপর আমাদের মেয়েরা অনূর্ধ্ব-১৬ ফুটবল খেলে বিজয় নিয়ে এসেছে। আমাদের নারীরা সার্কে স্বর্ণ পেয়েছে। আমার মনে হয় যে আমাদের নারীরা অনেকে অনেক খ্যাতিমান জায়গা চলে আসছে। আরো আসবে। নারীদের সুযোগ বাড়ছে।

নারী গবেষক, নারী বিজ্ঞানী হিসেবে এরা এখন অনেক নাম করছে। এটাই আমরা প্রত্যাশা করছি। আমরা এযাবৎ বলতে পারব, বাংলাদেশি নারীরা আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে তারা দেখাতে পেরেছে তাদের শ্রেষ্ঠত্ব। আমাদের বাংলাদেশি নারীদের মেধা, তাদের মনন তাদের শ্রম সবকিছু দিয়ে তারা একটা ভূমিকা পালন করছে। আর সবচেয়ে বড় আমি বলব যে আমাদের গ্রামীণ নারী শ্রমিক সবচেয়ে বেশি বিদেশে প্রমাণ করেছেম ওদের যতই অনাচার বা ওদের ওপর যতই শোষণ হোক, তারা যে দক্ষতার সঙ্গে এই গার্মেন্টটাকে একটা পর্যায় নিয়ে গেছে কঠোর পরিশ্রমের মধ্য দিয়ে। দুর্নাম তো এসেছে মালিকপক্ষ তাদের কথা রাখেনি, সে জন্য। সুনাম তো এসেছে নারী শ্রমিকদের শ্রমের মাধ্যমে। জিনিসটা খুব গুরুত্বপূর্ণ।

লেখক : মানবাধিকারকর্মী।