স্বাধীন ভাবনা

‘আমরা স্বাধীনতার সঠিক মূল্যায়ন করতে ব্যর্থ’

Looks like you've blocked notifications!

বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৪৫ বছর পূর্ণ হতে চলেছে। বাঙালি জাতি ও জনগণের সবচেয়ে বড় ও শ্রেষ্ঠ অর্জন এই স্বাধীনতা। রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর অর্জিত হয় এই বিজয়। স্বাধীনতার এই ৪৫ বছরে কী ভাবছে আজকের তরুণ সমাজ? তাঁদের প্রাপ্তি এবং প্রত্যাশা কী, তা নিয়েই এনটিভির বিশেষ আয়োজন। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার অভিমত তুলে ধরা হলো। তাঁদের সঙ্গে কথা বলেছেন মাজেদুল হক তানভীর।

রাফিয়া জাবিন

দশম সেমিস্টার, ইংরেজি বিভাগ

আমি স্বাধীনতা যুদ্ধ দেখিনি, কিন্তু একটি দেশে স্বাধীন হয়ে জন্ম নেওয়ায় আমি গর্বিত। স্বাধীনতা দিবসে বারবার মনে পড়ে মুক্তিযোদ্ধা আর মুক্তিযুদ্ধের কথা। যার সবকিছুই শুনেছি বড়দের কাছ থেকে। পরে বই পড়ে জেনেছি। আমাদের স্বাধীনতার ইতিহাস জানাটা খুব জরুরি। আর আমার কাছে দেশপ্রেম মানে নিজের কাজটা সঠিকভাবে করতে পারা। সেটা না পারলে, সেই ব্যর্থতাই ধীরে ধীরে রূপ নেয় জাতিগত ব্যর্থতায়। যারা দেশের কথা চিন্তা করে না, শুধু নিজেদের পকেট নিয়ে চিন্তিত, তাদের শুভবুদ্ধির উদয় হোক—এই কামনা করি।

অপু মোস্তফা

তৃতীয় সেমিস্টার, জার্নালিজম অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগ

‘আমি স্বাধীন দেশের স্বাধীন নাগরিক’—এ কথা বলার অধিকার যাঁরা দিয়েছেন, বিজয়ের এই মাসে তাঁদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাই। নয় মাস যুদ্ধের পর ৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে আমাদের এই স্বাধীনতা। সে সময়ের মানুষরা দেশের প্রতি তাঁদের কর্তব্য পালন করে নিজেদের জীবন উৎসর্গ করে গেছেন। অথচ স্বাধীনতার ৪৫ বছর পর আজও আমরা পুরোপুরি স্বাধীনতার সঠিক মূল্যায়ন করতে ব্যর্থ। আজ যখন যুদ্ধাপরাধীর বিচারের বিরুদ্ধে সমাবেশ হয়, তখন নিজের প্রজন্মকে প্রচণ্ড অকৃতজ্ঞই মনে হয়। যখন দেখি, আমার পাশে দাঁড়ানো মানুষটিই দাবি করে বলে, নিজামী, কাদের মোল্লাদের প্রতি অবিচার করা হয়েছে, তখন মুখ লুকানোর জায়গা থাকে না। দেশ মুক্ত হলেও আমরা মানসিক মুক্তি হয়তো এখনো পাইনি। শুধু নির্দিষ্ট দিবসে নয়, প্রতিটি মুহূর্তে স্বাধীনতার ত্যাগের কথা আর স্বাধীনতার সঠিক ইতিহাস স্মরণ করে বেড়ে উঠুক প্রতিটি প্রজন্ম—এ আশাবাদ ব্যক্ত করছি।

হাসানুর রহমান শাহীন

ষষ্ঠ সেমিস্টার, কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ

ডিসেম্বর এলেই আমরা মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার চেতনার কথা বলি। শুধু তাই নয়, এসব চেতনা শুধু বক্তৃতা আর রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতেই ব্যবহার করি। বিজয় দিবসের আগে-পরে সপ্তাহজুড়ে আমরা বিশাল বক্তৃতা ও আলোচনার অনুষ্ঠানে ব্যস্ত হয়ে পড়ি। কিন্তু এক সপ্তাহ পরেই আমাদের আর স্বাধীনতার সেই চেতনা থাকে না। এটাই কি মুক্তিযুদ্ধের চেতনা? যেখানে কেবল রাজনৈতিক বক্তৃতায় শুধু রাজনৈতিক কারণেই আমরা হঠাৎ করে সচেতন হওয়ার ভান করি মাঝেমধ্যে। এটিই আমাদের কাল হয়ে দাঁড়াচ্ছে। জাতীয় স্বার্থে সকলে মিলে একসঙ্গে, একই লক্ষ্যে যেদিন কাজ কাজ করতে পারব সেদিনই সফল হবে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে জাগ্রত করতে না পারলে ভবিষ্যতে প্রয়োজনে আর আমরা দেশের জন্য আত্মত্যাগ করতে কাউকে দেখব না।

ফারজানা ফাইজা

সপ্তম সেমিস্টার, বিজনেস স্টাডিজ

মুক্তিযুদ্ধ করেই অর্জিত হয়েছে আমাদের কাঙ্ক্ষিত বিজয়। এই মুক্তিযুদ্ধের ফল বাঙালি জাতির এই স্বাধীনতা। মুক্তিযুদ্ধ না হলে আমরা পরাধীনতার বেড়াজাল থেকে বেরিয়ে আসতে পারতাম না। স্বাধীনতা পেতাম না, পালন করতে পারতাম না আজকের এই বিজয় দিবস। আমরা বর্তমান প্রজন্ম দেখিনি মুক্তিযুদ্ধ। তারপরও একাত্তরের সেই বিভীষিকাময় দিনগুলোর কথা শুনলে শরীর শিউরে ওঠে। বাঙালি জাতির বহু কাঙ্ক্ষিত যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকাজ অনেক সম্পন্ন হয়েছে, যা জাতির জন্য এক বড় প্রাপ্তি। এ বছর কয়েকজন যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসির রায় দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। আশা করব, এই বিজয়ের মাসে অন্তত একজন যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসির রায় কার্যকর করে বাংলাদেশ কলঙ্ক মোচনে আরো এক ধাপ এগিয়ে যাবে। এটি শুধু বর্তমান সরকারের সাফল্য নয়, দেশবাসীর সাফল্য। তবে এ বিজয় দিবসে যেন লোক দেখানো না হয়, এই আশা রাখি। বিজয় দিবসকে অন্তরের অন্তস্তল থেকে শহীদদের প্রতি ফুলেল শ্রদ্ধা জানিয়ে পালন করব।

সাইদুর রহমান সুমন

পঞ্চম সেমিস্টার, আইন বিভাগ

স্বাধীন দেশের নাগরিক আমরা। এই স্বাধীনতা এসেছে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে। কিন্তু যে মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে আমরা এই স্বাধীনতা পেয়েছি, তার প্রকৃত ইতিহাস নতুন প্রজন্মের কাছে অস্পষ্ট ও অজানা। স্বাধীনতার ৪৫ বছর পরও আমাদের কাছে মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস পরিপূর্ণরূপে জানাতে পারেনি কেউ। রয়েছে বিতর্ক। এটি অনেক বড় ব্যর্থতা। এরপরও আজকের তরুণ সমাজের সবাই যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে সোচ্চার। তারা সকলেই যুদ্ধাপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চায়। এর মাধ্যমে একদিকে আমাদের যেমন দায়মুক্তি হবে, অন্যদিকে আবার মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবোধ তাঁদের মাঝে সুদৃঢ় দেশপ্রেমের ভিত্তি স্থাপন করবে।