শিক্ষা

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে কিছু ভাবনা

Looks like you've blocked notifications!

উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা শেষ হতে না হতেই এক অজানা গন্তব্যে যাত্রা শুরু করে বাংলাদেশের হাজার হাজার শিক্ষার্থী। আশা-আকাঙ্ক্ষার আকাশে দুলতে থাকে দেশের নামকরা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর যে কোনো একটি আসন। আর এ জন্য কোচিং সেন্টার বা সামর্থ্যানুযায়ী অন্য কোনো পথে ছোটাছুটি করতে হয়। পরিবার-পরিজনও কম চিন্তা করে না তার প্রিয় সন্তানটির জন্য। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পর্যাপ্ত আসনের তুলনায় অনেক বেশি শিক্ষার্থী উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে প্রতি বছর। স্বাভাবিকভাবেই ভর্তি পরীক্ষায় প্রতিযোগিতার নামে রীতিমতো যুদ্ধে অবতীর্ণ হওয়া ছাড়া উপায় থাকে না তাদের।

একেকটি আসনের বিপরীতে শখানেক শিক্ষার্থীর মধ্যে লড়াই হয়। এত কঠিন ও পরম নিষ্ঠুর সময় শিক্ষার্থীদের জীবনে আসে শুধু ভর্তি পরীক্ষার সময়েই। অথচ এর বিপরীতে এই চরম কঠিন সময়ে নাম করা বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ইচ্ছামতো তাদের ভর্তি পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করে প্রতি বছর। এ বছরও করেছিল। সে অনুয়ায়ী পরীক্ষাও নেওয়া হয়েছে এবং হচ্ছে।

বরাবরের মতো এবারও পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে এসে দাঁড়িয়েছিল যে, বেশ কয়েকটি প্রথম সারির বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষার তারিখ কাছাকাছি ছিল। এতে একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দিতে গেলে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দেওয়ার আশা জলাঞ্জলি দিতে হয়েছে। একই সময়ে দুইয়ের অধিক প্রথম সারির বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষার তারিখ কাছাকাছি বা একই দিন পড়া কতটা যৌক্তিক? একটা চিত্র তুলে ধরছি তাহলে বিষয়টি চাক্ষুষ হবে। যেমন : জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ইউনিটের এ বছরের ভর্তি পরীক্ষার তারিখ ছিল নভেম্বরের ১৯ থেকে ২৭ তারিখ। কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়- নভেম্বরের ১৯ থেকে ২৪ তারিখ, সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়-২৬ নভেম্বর, ময়মনসিংহের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় নভেম্বরের ২৪ থেকে ২৮ তারিখ, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় ১৮ ও ১৯ নভেম্বর, বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয় ১৮ নভেম্বর এবং সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ২৫ নভেম্বর।

এখানে দেখা যাচ্ছে ছয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষার তারিখ সমসাময়িক। এখানে উল্লেখ্য, তীব্র সমালোচনার মুখে পড়ে কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় তাদের রুটিনে পরিবর্তন এনেছিল শেষ মুহূর্তে। এটা তো শিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত করা। একজন শিক্ষার্থীকে প্রথম সারির বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি পরীক্ষায় তার যোগ্যতা আছে অথচ বিশ্ববিদ্যালিয়ের অযৌক্তিক নিয়মের বলির পাঁঠা হতে হচ্ছে তাকে। কেন এই নিষ্ঠুরতা?

পরীক্ষার জন্য বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে রেজিস্ট্রেশন, যাতায়াত, থাকা-খাওয়া প্রভৃতির কারণে প্রচুর টাকা-পয়সা লাগে। কতজন গরিব অথচ মেধাবী শিক্ষার্থীকে আমরা এভাবে প্রতিবছর হারাচ্ছি তা হিসাব করা যায়? বিড়ম্বনা বা ঝক্কি-ঝামেলা তো আছেই। একজন পরীক্ষার্থীর সঙ্গে অভিভাবকদেরও একই বিড়ম্বনার শিকার হতে হয়। সবাই মিলে আজ ঢাকায়, কাল রাজশাহী, পরের দিন খুলনায়, তার পরের দিন চট্টগ্রামের পানে দৌড়। ভাবা যায়? যেন একটা দৌড় প্রতিযোগিতা!

সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা বিষয়ে আলোচনা-সমালোনা হয়েছে বা হচ্ছে যে, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে আলাদাভাবে পরীক্ষা নেওয়ার নেতিবাচক দিকগুলো এখন সবার কাছে পরিষ্কার হয়ে গেছে। এখন প্রায় ৩৭টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় মিলে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া সময়ের দাবি, মানবিকতার দাবি, জাতির আগামীর সন্তানদের সবচেয়ে সুন্দর করে গড়ে তোলার দাবি এবং নাগরিক অধিকার হিসেবে শিক্ষার অধিকার নিশ্চিত করার দাবি হিসেবে প্রতীয়মান। এটা মোটেও অসম্ভব না। মেডিকেলের সমস্বিত পরীক্ষা কীভাবে সম্ভব হচ্ছে? পাবলিকে কেন নয়? বিজ্ঞান অনুষদগুলোর জন্য একটি, বাণিজ্য অনুষদের জন্য একটি, কলা ও মানবিক অনুষদের জন্য একটি এভাবে তিন বা চারটা পরীক্ষা নেওয়ার মাধ্যমে সব ভর্তি পরীক্ষার্থীকে এই অসহনীয় এবং রীতিমতো উদ্ভট একটা প্রক্রিয়া থেকে মুক্তি দেওয়া কি অসম্ভব কিছু?

শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন বেশ আগেই বহুবার এই সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার জন্য সুপারিশ করেছে এবং করছে। তবু বিশ্ববিদ্যালয়গুলো স্বায়ত্তশাসনের দোহাই দিয়ে থোড়াই কেয়ার করে যাচ্ছে তো যাচ্ছে। কেন? শুধুই বাণিজ্যিক স্বার্থে? দেশের আগামীর পরিচালকদের সঙ্গে কেন এই নিষ্ঠুরতা কীভাবে দিনের পর দিন সম্ভব হচ্ছে? 

 সর্বশেষ রাষ্ট্রপ্রতি যিনি বাংলাদেশের অভিভাবক তিনি এক অনুষ্ঠানে প্রকাশ্যেই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে ছেলেমেয়েদের কষ্ট লাঘব করার আহ্বান জানিয়েছেন। রাষ্ট্রপতির এই আহ্বান সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আমলে নেওয়া উচিত।  

লেখক : শিক্ষার্থী, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।