স্বাধীন ভাবনা

‘বাংলাদেশিরা খুব আশাবাদী’

Looks like you've blocked notifications!

বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৪৫তম বছর চলছে। এই দীর্ঘ সময়ে বাংলাদেশ আবর্তিত হয়েছে বিভিন্ন ঘটনার মধ্য দিয়ে, পার হয়ে গেছে বেশ কয়েকটি প্রজন্ম। তাঁদেরও রয়েছে কিছু প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির হিসাব-নিকাশ। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত তেমনি কিছু শিক্ষার্থীর চিন্তাভাবনাকে সংকলিত করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রতিনিধি প্রদীপ সরকার।

মো. নাজমুল হুদা 
শিক্ষার্থী, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্ক ইতিহাসের যেকোনো সময়ের মধ্যে সবচেয়ে ভালো পর্যায়ে আছে। দুই দেশের ভালো সম্পর্কের মাঝে যে কাঁটা বিঁধে আছে, তা হলো তিস্তা পানি বণ্টন চুক্তি। তিস্তার পানি যথাসময়ে না পাওয়ায় প্রতিবছর ফসলহানির কারণে সর্বস্বান্ত হয় নদীর তীরবর্তী অঞ্চলের কৃষক। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা সরকারি সহায়তা না পেয়ে মহাজনি ও এনজিও ঋণের দ্বারস্থ হয়। এই ঋণ পরিশোধ করতে গিয়ে মধ্যচাষি জমিজমা বিক্রি করে গরিব ক্ষেতমজুর, দিনমজুরে পরিণত হয়। তিস্তার নদীর ওপর অবস্থিত গজলডোবা বাঁধ একদিকে শুল্ক মৌসুমে ফসলি জমিকে শুকিয়ে মারে, আবার বর্ষা মৌসুমে প্রবল পানির স্রোত ফসল-বাড়িঘর ডুবিয়ে মারে। ফসলি জমি বালুচরে পরিণত হয়। শুধু তাই নয়, রুক্ষ আবহাওয়ায় ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে এ অঞ্চলের হাজার বছরের জীববৈচিত্র্য, পরিবেশ ও প্রকৃতি। নদীভাঙনে সর্বস্বান্ত হয় মানুষ। এভাবেই চলতে থাকে উত্তরাঞ্চলের মানুষের জীবনযুদ্ধ। তাই তিস্তা চুক্তি এ দেশের মানুষের প্রাণের দাবি উঠে এসেছে। তিস্তা চুক্তির প্রয়োজন শুধু শুষ্ক মৌসুমে পানির জন্য নয়, প্রয়োজন বর্ষা মৌসুমে বন্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য। 

স্বাধীনতা-সংগ্রামে আমাদের অকৃত্রিম বন্ধুর সঙ্গে বেশ কিছু দায়দেনা সুন্দরভাবে মিটে গেছে। যেমন গঙ্গার পানি বণ্টন ও পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে যাওয়া শরণার্থীদের প্রত্যাবাসনে ভারত বাস্তব ভূমিকা রেখেছে। শেখ হাসিনার টানা দুই মেয়াদের শাসনামলে বাংলাদেশ-ভারত কূটনৈতিক সম্পর্কে দৃশ্যমান উন্নতি ও অর্জন রয়েছে। বিশেষত, ছিটমহল বিনিময় এবং অচিহ্নিত সীমান্ত চূড়ান্ত ও অপদখলীয় ভূমি নিষ্পত্তির মতো ঐতিহাসিক ত্রুটি শুধরে নিতে সক্ষম হয়েছে দুই পক্ষ। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফর, হস্তান্তর চুক্তি, করিডর বা কানেক্টিভিটি, বিভিন্ন পর্যায়ের সফর প্রভৃতি কারণে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক বন্ধুত্বপূর্ণ বলেই ধারণা করা যায়, যা বর্তমান সরকারের জন্য বড় সাফল্য। তাই আমরা মনে করি, ভারত সীমান্ত হত্যা বন্ধ, অবৈধ অনুপ্রবেশকারীকে গ্রেপ্তার, হস্তান্তরের সমঝোতা চুক্তি কার্যকর ও তিস্তা চুক্তি সম্পাদনের মাধ্যমে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে জোরদারের উদ্যোগ গ্রহণ করবে। 

পিংকি বিশ্বাস 
শিক্ষার্থী, নাট্যকলা বিভাগ

স্বাধীনতা-পরবর্তী বাংলাদেশের নাট্যচর্চার প্রাণকেন্দ্র হিসেবে গড়ে ওঠে ঢাকা মহানগরী। যুদ্ধফেরত কিছু প্রতিশ্রুতিশীল তরুণ-তরুণী অস্ত্র ফেলে নাটককে গ্রহণ করে সমাজ বদলের হাতিয়ার হিসেবে। সামাজিক দায়বদ্ধতা ও শিল্পবোধের অঙ্গীকার থেকে পদ্ধতিগত রূপ ও রীতিতে পরিবর্তন আসে বাংলা নাট্যচর্চায়। এ সময় নির্দেশকের কর্তৃত্ব, অভিনেতা-অভিনেত্রীদের দায়িত্ববোধ, অভিনেত্রীর সংকট থেকে উত্তরণ এবং নাট্যরচনা ও প্রয়োগ পদ্ধতিতেও পরিবর্তন আসে। প্রয়োগগত নতুনত্বে আসা দেশজ রীতি ও পাশ্চাত্য নাট্যকাঠামোর অবলম্বনে মঞ্চস্থ হয় সুসংগঠিত ও আধুনিকতম মৌলিক নাটক। অনুবাদ ও ভাবানুবাদ হয়ে বিখ্যাত বিদেশি নাটক সেইসঙ্গে রবীন্দ্রনাথের শ্রেষ্ঠ নাটকগুলো।

নাট্যকারদের ভিড়ে নাট্যকার রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অস্তিত্ব অনেকটাই অনুচ্চকিত। অথচ উপনিবেশিক প্রভাবমুক্ত হয়ে নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে প্রত্যক্ষ করলে দেখা যায়, রবীন্দ্রনাথের হাতে বাঙালির পরিণত থিয়েটারের প্রথমদিকার উন্মেষ। অর্থাৎ বাঙলা নাট্যের শুদ্ধতম নিকর্ষটি উদঘাটনের প্রয়াস রবীন্দ্রনাথের হাতেই লক্ষণীয়। যেখানে অনুকরণ নির্ভর বাস্তবতাকে বর্জন করে বিষয়ের অন্তনিহিত সত্যই মুখ্যরূপে প্রতিভাত হয়।

যাহোক বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি ও বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশান আয়োজিত জাতীয় নাট্যোৎসব ঢাকার মঞ্চে রবীন্দ্র নাট্যচর্চার অগ্রসর মানবতায় বিশেষ ভূমিকা পালন করেছে। পরবর্তী সময়ে নাট্যচর্চার সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে লাগল বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের বেশ কিছু নাট্যদল। আয়োজিত হতে লাগল নাট্যোৎসব। স্বাধীনতার পরবর্তী বাংলাদেশে বিশ শতকের নাট্যচর্চায় জ্যেষ্ঠদের পাশাপাশি শিশু-কিশোরদের নাট্যপ্রয়াস যথেষ্ট গুরুত্বের দাবি রাখে। পক্ষান্তরে, ঢাকার মঞ্চে বিদেশি নাটকের, বিশেষ করে শেকসপিয়র, মলিয়ের, ব্রেখটের প্রতি যতখানি আগ্রহ দেখানো হয়েছে—সে তুলনায় রবীন্দ্রনাথ রয়ে গেছেন সযত্নে উপেক্ষিত এক নাট্যকার হিসেবে। অথচ ঢাকার মঞ্চে রবীন্দ্র প্রয়োজনার ক্ষেত্রে কখনো দর্শক আগ্রহের কমতি ছিল বলে জানা যায় না; বরং আন্তরিকতাপূর্ণ আগ্রহের সঙ্গে প্রযোজনাগুলো দর্শকরা উপভোগ করেছে।
রবীন্দ্রনাথের নাট্য-ভাবনা ও প্রয়োগ থেকে আমরা মুক্ত হতে পারতাম পাশ্চত্য নাট্যরীতির বলয় থেকে। তিনি তাঁর নাট্য-ভাবনায় পাশ্চত্যের সব প্রভাবকে অস্বীকার না করেও বাংলা থিয়েটারের ঐতিহাসিক আধুনিক নাট্যধারায় সমৃদ্ধ করার প্রয়াস নিয়েছিলেন, যার আদর্শ অনুসারে আমরা মুক্ত হতে পারতাম পাশ্চাত্য মঞ্চরীতির বলয় থেকে। আমাদের নাট্যকার ও নির্দেশকগণের হাতে নির্মিত হতো বাঙালি ঐতিহ্যগত নাট্যচর্চার নতুন দিগন্ত। কিন্তু কোনো এক অদৃশ্য কারণে এ অসীম সম্ভাবনাটি অধরাই থেকে গেল।

নাজ
শিক্ষার্থী, চারুকলা বিভাগ

আবহাওয়া জলবায়ুর জন্য দেশভেদে মানুষের গঠন, আচরণ ও সংস্কৃতির পার্থক্য লক্ষ করা যায়। কোনো দেশ বা অঞ্চলের সব মানুষের মধ্যে সাধারণ কিছু সাদৃশ্য থাকে, আবার ব্যক্তিভেদেও ভিন্নতা থাকে। তেমনি কোনো অঞ্চলের শিল্পের একটি সাধারণ বৈশিষ্ট্য থাকবে। কেননা, শিল্পী তাঁর পারিপার্শ্বিকতাকেই ক্যানভাসে ধারণ করে। আবার প্রত্যেক শিল্পীরই ছবির নিজস্বতা থাকতে হবে।

হেমেন্দ্রনাথ মজুমদার বহু পূর্বে বলে গেছেন, ‘স্টইল, অর্থাৎ ঢং বা পদ্ধতি ব্যক্তিবিশেষের সামগ্রী-জাতির নহে।’

হ্যাঁ ব্যক্তিভেদে স্টইল থাকবে, তাই বলে সামগ্রিকতা হারালে তো চলবে না।

বাংলাদেশের স্বধীনতার ৪৫ বছর পরও কি বাংলাদেশের ছবির দেশীয় কোনো রীতি বা শৈলী তৈরি হয়েছে? ছবিতে সামগ্রিকতা এসেছে?

বাংলাদেশের প্রাতিষ্ঠানিক শিল্পের পিতৃপুরুষ জয়নুল আবেদিনের মাধ্যমে, ১৯৪৮ সালে বাংলাদেশে প্রাতিষ্ঠানিক শিল্পের চর্চা শুরু হয়। জয়নুল আবেদিনের ছবিতে দর্শন আছে, দুর্ভিক্ষের ছবিতে সময়কে ধরেছেন। ‘বিদ্রোহী’, ‘সংগ্রাম’ মানুষকে শেখায় বিরূপ পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে। ‘পায়নার মা’, ‘গুনটানা’ ছবির যে লম্বা গলা তা বাংলার টেপা পুতুল থেকে নেওয়া হয়েছে। অথচ বিষয়বস্তুতে সেই সময় ধরা হয়েছে।

আবেদিন তাঁর শিষ্যদের এই দর্শন দিয়ে যেতে পারেননি। কিন্তু কেন? তা এখনোও প্রশ্নবিদ্ধ।

এস এম সুলতানের ডিগ্রি না থাকলেও শিল্পের জগতে ছিল তাঁর পাণ্ডিত্য। তা সত্ত্বেও প্রতিষ্ঠানে শেখানোর ভার তাঁকে দেওয়া হয়নি। প্রথম প্রজন্ম ও দ্বিতীয় প্রজন্মের শিল্পীদের অনেকে (রশিদ চৌধুরী, আবদুর রাজ্জাক, আমিনুল ইসলাম প্রভৃতি) পাশ্চাত্যে উচ্চশিক্ষার জন্য গিয়ে, সেখানকার স্টাইলের নিছক অনুকরণের প্রবণতা নিয়ে এসেছেন। শিষ্যপরম্পরা বাংলাদেশে ফর্ম ধরে ধরে ছবি আঁকা চলছে। যে ফর্মের অস্তিত্ব বাংলায় কখনো ছিল না। 

তাহলে এই বাংলায় কী ছিল? বাংলার প্রাচীন ছবির নিদর্শন পালযুগের পুঁথিচিত্র। টেপা পুতুলের আদলে গড়া মাটির টেরাকোটা, টেপা পুতুল, আলপনা চিত্র, নকশিকাঁথা প্রভৃতি, যার কোনো অস্তিত্ব বাংলার ছবিতে নেই। তাই বলে ছবিতে রিভাইভাল বা পুনরুজ্জীবন প্রধান নয়, প্রধান হলো রেনেসাঁস। বাংলাদেশের ছবির এখনো শৈলী তৈরি হয়নি। দেশকে প্রেজেন্ট এমন বিষয়বস্তু ছবিতে আসেনি। বাংলাদেশের ছবির জগতে চলছে অন্ধকার যুগ।

তবে বর্তমানে অনেকে এমন ছবি আঁকছেন, যার নিজস্ব দর্শন আছে ও শিকড়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত। ফলে বাংলার ছবিতে সূর্য একদিন উঠবেই, আর আলোকিত সূর্যোদয়ের জন্যই অপেক্ষ। 

মেহেদী হাসান সুমন 
শিক্ষার্থী, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ 

‘চিলেকোঠার সেপাই’, ‘মা’, ‘ওঙ্কার’, ‘একাত্তরের যীশু’, ‘শ্যামল ছায়া’ থেকে ‘অপারেশন জ্যাকপট’, ‘একাত্তরের রণাঙ্গন’, ‘বাঙালির মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস’ বইগুলো পড়ে কিংবা, ‘পিতা’, ‘ওরা ১১ জন’, ‘মাটির ময়না’, ‘আগুনের পরশমণি’, ‘আবার তোরা মানুষ হ’ সিনেমাগুলো দেখে হয়তো মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে ধারণা পাওয়া সম্ভব। কিন্তু যে স্বপ্নের জন্য মুক্তিযোদ্ধারা প্রাণবাজি রেখেছিলেন, তা ঠিকঠিক অনুভব করা সম্ভব না। হয়তো স্বপ্ন ছিল ‘শুধু শান্তিতে বুক ভরে নিশ্বাস নেওয়া’। কিন্তু স্বাধীনতার ৪৫তম বছরে তরুণদের স্বপ্ন তার থেকে অনেক অনেক বেশি। আর তাই তো হিসাব কষতে বসা এই ৪৫ বছরে কী অর্জন করলাম আমরা।

কৃষির ক্ষেত্রে আমরা অভূতপূর্ব কী অর্জন করতে পেরেছি? খাতা-কলমের হিসাব আর বাস্তবচিত্র অনেক ভিন্ন। আমার পরিবার কৃষিজীবী। পারিবারিক সম্পত্তির হিসাব অনুযায়ী আমরা কোটিপতি। উৎপাদনশীল এই সম্পত্তি ও শ্রম দিতে পারা সত্ত্বেও আমার পরিবারের ‘নুন আনতে পান্তা ফুরাবার জো’। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া ছেলেকে ঠিকমতো টাকা দিতে পারছে না। অন্য সন্তানদের লেখাপড়ার সুব্যবস্থা বলতে যা বোঝায়, তা দিতে পুরোপুরি ব্যর্থ। 

আমরা কৃষিকে তুলনা করি প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে। তাদের অনেকে আজো না খেয়ে মারা যায়, সে অবস্থা অন্তত আমাদের না এসব উদাহরণ দিই। আসলে এটা কি উন্নয়নের কোনো পরিমাপক হতে পারে। মৌলিক চাহিদার প্রশ্নে এই মানুষগুলো তাদের চাওয়ার অতি সামান্য পাচ্ছে।

এ তো গেল কোটিপতি কৃষকের কথা, যাকে আমরা গেরস্ত কৃষক বলি। তাহলে বর্গাচাষি, ভাগচাষি কিংবা নিছক কৃষিশ্রমিকের কী অবস্থা। তারা প্রাণপণে চাচ্ছে মাথা তুলে বাঁচতে, কিন্তু শেষমেশ চাষার ছেলে চাষাই থেকে যাচ্ছে। কজনকে আমরা তুলে আনতে পেরেছি? 

কৃষকরা পালংশাক, মুলা দিয়ে পেট পুরে ভাত হয়তো খাচ্ছে, টিনের চালায় থাকছে, ছেলেমেয়ে স্কুলেও যাচ্ছে। স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে গেলে চারটা করে প্যারাসিটামল, নাপা, ইমোটিল কিংবা খাবার স্যালইনও পাচ্ছে; কিন্তু মৌলিক চাহিদার প্রশ্নে তা কিছুই না। ঋণ ও দেনায় জর্জরিত হয়ে বেঁচে থাকার তাগিদে বেঁচে আছে তারা।

টেকসই কৃষি উন্নয়ন বলতে ঠিক যা বোঝায়, তার কয় সিকে পূরণ হয়েছে, তার ওপরে গবেষণার প্রয়োজন। বিশ্ববাজারের এক টাকা মূল্যমানের একটি পণ্য গ্রামে পৌঁছে গেছে অথচ কৃষকের পণ্য এখনো মাথায় করে, কাঁধে করে, কাদা রাস্তায় ভ্যান ঠেলে স্থানীয় হাট-বাজারে আনতে হয়। 

যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ইরতিশাদ আহমদ তাঁর একটি লেখায় বলেছেন, “এ যুগে ‘স্বাধীন দেশ কী ও কত প্রকার’ এই প্রশ্নের উত্তর খুব একটা সহজ নয়।” তাই আমি এই প্রশ্নে কিংবা উত্তরে যেতে চাই না। আমরা বাংলাদেশিরা মানুষ হিসেবে খুব আশাবাদী। 

প্রদীপ মার্ডী 
শিক্ষার্থী, অর্থনীতি বিভাগ

বাংলাদেশ ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে বিশ্বের বুকে স্বাধীন দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। দীর্ঘ ২৬ বছর পাকিস্তানি শাসনের অধীনে এ ভূখণ্ডের মানুষের বাক-স্বাধীনতা পদে পদে ভূলুণ্ঠিত হলেও বাংলাদেশ স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে এই বিষয়ে অভিজ্ঞতা বিশেষ সুখকর নয়। বিভিন্ন সময়ে ক্ষমতাসীন সরকারগুলোর দলীয় স্বাধীনতা বা স্বেচ্ছাচারিতা সমুন্নত থাকলেও জনগণের বাক-স্বাধীনতার বিষয়টি বরাবর উপেক্ষিত থেকেছে। 

বাংলাদেশে ১৯৭৫ সাল-পরবর্তী একটি দীর্ঘ সময়ের সামরিক শাসন ও রাজনৈতিক অস্থিরতা বিদ্যমান থাকায় এ সময়ে মানুষের বাক-স্বাধীনতা তো দূরের কথা, ন্যূনতম প্রতিবাদ বা মতামত প্রকাশের বিষয়টি একটি দিবাস্বপ্নে পরিণত হয়, বিশেষত এ অবস্থা চরম আকার ধারণ করে আশির দশকে স্বৈরাচারী এরশাদ সরকারের শাসনাধীন অবস্থায়। অতঃপর তীব্র গণআন্দোলনের দরুন স্বৈরাচারী সরকারের পতনের মাধ্যমে ১৯৯০ সালে বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক সরকারের পদচারণা ঘটলেও জনগণের বাক-স্বাধীনতা বিষয়টি শুধু স্বাধীনতার কাঠামোতেই সীমাবদ্ধ থাকে। 

বাংলাদেশ একটি গণতান্ত্রিক দেশ, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ৩৯ নম্বর অনুচ্ছেদে ‘চিন্তা, বিবেক ও মতামত প্রদানের স্বাধীনতা’ উক্ত বাক্যে বাক-স্বাধীনতার অধিকারকে নিশ্চিত করা হয়েছে। উক্ত অনুচ্ছেদে চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতা, নাগরিকের স্বাধীন মত প্রকাশের স্বাধীনতা, গণমাধ্যমের স্বাধীনতার নিশ্চয়তা প্রদান করা হয়েছে। একই সঙ্গে বাংলাদেশের রাষ্ট্রের নিরাপত্তার প্রশ্নে, কূটনৈতিক সম্পর্ক বিপন্ন করে এমন কিছু, আদালত অবমাননামূলক এমন মতামতের ওপর সীমাবদ্ধতা বা বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। সর্বোপরি সংবিধান এ দেশের মানুষের বাক-স্বাধীনতার অধিকার নিশ্চিত করলেও বিগত সরকারগুলোর ক্ষমতাবস্থায় সংবিধানের পরিবর্তন ও বিভিন্ন আইন প্রণয়নের মাধ্যমে জনগণের বাক-স্বাধীনতাকে খর্ব করেছে।

তাই গণতন্ত্রের স্বার্থেই আমাদের পুনর্বার ভাবার প্রয়োজন রয়েছে, আমরা কেমন দেশে বাস করতে চাই? কিংবা মুক্তিযুদ্ধের আকাঙ্ক্ষাই বা কী ছিল? 

মানুষের বাক-স্বাধীনতার স্বার্থে আমাদেরই সোচ্চার হতে হবে, সম্মিলিত প্রতিবাদ ব্যতীত এ সংকটের কোনো উত্তরণ নেই।