পয়লা বৈশাখ রং দেয়, উজ্জ্বলতা দেয় এবং স্বপ্ন দেখায়

Looks like you've blocked notifications!

পয়লা বৈশাখটা কিন্তু প্রকৃতিরই একটা চক্র। ঋতু চক্রের আবর্তনে দিনটা আসে। আমরা প্রকৃতি ভুলে যাই এবং গিয়েছিও আমরা। প্রকৃতি নিধনে আমরা ব্যস্ত। এবার পয়লা বৈশাখে আমার প্রত্যাশা, প্রকৃতি সমন্ধে মানুষের ভেতরে যেন একটু সচেতনতা আসে। এই প্রকৃতি হারিয়ে গেলে আমরা একেবারে অসহায় হয়ে পড়ব। এটা যেন মানুষ বুঝতে পারে।

আমাদের দেশের রাজনীতি, সমাজনীতি কোনো কিছুই রঙের পক্ষে থাকে না। এই পয়লা বৈশাখটা যেন মানুষকে একটু রং দেয়, একটু উজ্জ্বলতা দেয় এবং স্বপ্ন দেখায়। এটিই আমি চাই।

আর রবীন্দ্রনাথ তাঁর বর্ষশেষ কবিতায় বলেছিলেন যে, পুরোনো যা আছে সব যেন উড়ে যায়। আমার কেন যেন প্রতিবছর মনে একটা আশা জাগে যে এবার মানুষ আরেকটু বেশি জাগছে, আরেকটু বেশি জাগছে। এটি হোক। আমি আশা করি যে সমাজের যত সদস্য আছেন, রক্ষণশীল বলুন আর উগ্রবাদী বলুন সবাইকে বুঝতে হবে যে এই বাংলাদেশটা আমাদের সবার। আমরা যে যাই করি, যে মতাদর্শেই বিশ্বাস করি, আমাদের থাকতে হবে বাংলাদেশের ভেতরেই। আমাদের থাকতে হবে সব মানুষকে সঙ্গে নিয়ে। আমাদের থাকতে হবে মানবতার চর্চা করে। আর পয়লা বৈশাখটা হচ্ছে এই বিষয়গুলো আমাদেরকে জানিয়ে দেয় বা ঘোষণা দেয় যে আমরা সবাই এক।

আজকে যদি বাংলাদেশ, সামনে ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া চ্যাম্পিয়ন ট্রফিতে কোনো বড় দলকে হারাতে পারে বা ট্রফি জিততে পারে তাহলে রাস্তায় কি শুধু মুসলমানরা বের হবে, নাকি শহরের মানুষ বেরোবে, নাকি শুধু কালো মানুষ বেরোবে, নাকি শুধু লম্বা মানুষ বেরোবে। এ রকম বিভাজন তো আমরা করি না। এমনকি বুড়ো মানুষগুলোও রাস্তায় বেরোতে পারে। কারণ একটা জায়গায় আমরা অহংকার চাই। ওই পয়লা বৈশাখটা আমাদের কাছে অহংকারের জায়গা।

আমরা তো আমাদের আপন শক্তি নিয়ে দারিদ্র্য জয় করেছি, আমরা পদ্মা সেতু তৈরি করছি। আমাদের মেয়েরা কাজে ঝুঁকছে। অর্থনীতিতে আমাদের ছেলেমেয়েরা ভালো করছে। এশিয়ার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা একটা শক্তি হয়ে গেছি। এটি তো আমাদের অহংকার। আমি আশা করব, প্রতিবছর পয়লা বৈশাখে আমরা সেই অহংকারটা ঘোষণা করব। অহংকারটি আমাদের আত্মবিশ্বাসী করবে এবং আমাদের সারা বছরের জন্য কিছু পাথেয় দিয়ে যাবে। এইটুকু হলো আমার প্রত্যাশা।

লেখক :  কথাসাহিত্যিক ও সাহিত্যসমালোচক