বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক রাজনীতিতে লোকসভা নির্বাচনের গুরুত্ব

Looks like you've blocked notifications!

বিশ্বের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশ ভারতে সাত ধাপের লোকসভা নির্বাচনের প্রথম ধাপের ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে আজ। সাত ধাপের এ নির্বাচন চলবে ১লা জুন পর্যন্ত। লোকসভা  নির্বাচনের চূড়ান্ত ফলাফল জানা যাবে আগামী ৪ঠা জুন। আগামী পাঁচ বছর কে ভারত শাসন করবে সেই সিদ্ধান্তের জনরায় পাওয়া যাবে এই নির্বাচনের মাধ্যমে।

নির্বাচন কমিশনের তথ্যমতে, ২৮ টি রাজ্যের প্রায় ৯৭ কোটি ভোটার অংশগ্রহণ করবে এবারের নির্বাচনে। যার মধ্যে ৪৯ কোটি পুরুষ ও ৪৭ কোটি নারী ভোটার। এবং প্রথমবারের মতো ভোটাধিকার প্রয়োগ করবে প্রায় ১ কোটি ৮০ লাখ নতুন ভোটার। এনটিভি অনলাইনে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ভারতের এ লোকসভা নির্বাচন নিয়ে সার্বিক বিশ্লেষণ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. এহসানুল হক।

সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংবাদদাতা  মোঃ রিফাত আলম রিসান।

কেমন হতে যাচ্ছে ভারতের ১৮তম লোকসভা নির্বাচন? বৈশ্বিক রাজনীতিতে এ নির্বাচনের গুরুত্ব কতটুকু? এ নিয়ে আপনার বিশ্লেষণ কি?

উত্তর: ভারত যেহেতু পৃথিবীর সর্ববৃহৎ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র তাই সবসময়ই সঠিক সময়ে এবং সুসংগঠিতভাবে এখানে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। গত কয়েকটি নির্বাচনের তুলনায় এবারের নির্বাচন অনেক অর্থেই তাৎপর্যপূর্ণ। শুধু ভারতের জন্যই নয়, বরং প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর জন্যেও এই নির্বাচন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে ভারতের যেই প্রভাব-প্রতিপত্তি তা বিবেচনায় রেখে ভারতে কোন দল ক্ষমতায় আসছে তা একটা বিবেচ্য বিষয়। পাশাপাশি এটিও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যে ভারতীয় পররাষ্ট্র নীতিতে কোনোরূপ পরিবর্তন আসবে কিনা।

এছাড়াও, ভারত ব্যাতিত দক্ষিণ এশিয়ায় যে ৭ টি রাষ্ট্র রয়েছে, তাদের সাথে ভারতের কিছু ক্ষেত্রে ভালো সম্পর্ক থাকলেও বেশকিছু ক্ষেত্রে সম্পর্কের টানাপোড়েনও চলছে। সেটি নিরসনে নতুন কোনো বৈদেশিক নীতি কতটুকু প্রভাব রাখবে সেটিও খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়।

সুতরাং, আঞ্চলিক এবং বৈশ্বিক রাজনীতিতে এ নির্বাচনটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে আমি মনে করি।

বাংলাদেশের রাজনীতিতে কি রকম ভূমিকা রাখতে পারে ভারতের নির্বাচন?

উত্তর: ভারতের সাথে বাংলাদেশের দৃঢ় সম্পর্ক রয়েছে, যা অনস্বীকার্য। আমাদের যে ভৌগলিক অবস্থান সেটি আমাদের নির্দেশ করছে যে ভারতের সাথে আমাদের ভালো সম্পর্ক বজায় রাখতেই হবে। ভারতবিরোধী কোনো মনোভাব নিয়ে সে সম্পর্ক বজায় রাখা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। আমাদের ভৌগলিক অবস্থান অপরিবর্তনীয়। এই বাস্তবতা মাথায় রেখেই বাংলাদেশ সরকারের উচিত হবে, ভারতে যেই দলই ক্ষমতায় আসুক না কেন তাদের সাথে সম্পর্কের ধারাবাহিকতা বজায় রাখা। ১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর থেকে এ পর্যন্ত যে সম্পর্কের কাঠামো তৈরি হয়েছে তাতে যেকোনো ধরনের পরিবর্তন না আসে।

তিস্তার পানির সঠিক বণ্টন, সীমান্ত হত্যা, বানিজ্যিক ভারসাম্যহীনতাসহ বেশ কয়েকটি কারণে বাংলাদেশের জনসংখ্যার উল্লেখযোগ্য একটি অংশ ভারতের ব্যাপারে নেতিবাচক মনোভাব পোষণ করে। এসব সংকট নিরসন ও দু দেশের পারস্পরিক সম্পর্কে উন্নয়ন ঘটাতে এই নির্বাচন এবং নির্বাচিত সরকারের ভূমিকা ব্যাপক।

নির্বাচনে বিজেপির মূল প্রতিদ্বন্দ্বী আসলে কারা?

উত্তর: এটা নির্ভর করবে কেন্দ্রীয়ভাবে মূল দলগুলো কিভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। বিজেপির সবচেয়ে বড় প্রতিদ্বন্দ্বি ধরা হয় ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল কংগ্রেসকে। এই দলটি তৈরি হয়েছিল ১৮৮৫ সালে সেই বৃটিশ শাসনামলে। এরপর থেকেই দলটির লম্বা একটা ইতিহাস রয়েছে এবং দলটির নেতারা তাদের যোগ্যতার পরিচয় দিয়েছেন নানা সময়। তবে গত ১৫- ২০ বছর ধরে কংগ্রেসের মধ্যে একটা 'লিডারশিপ ক্রাইসিস' দেখা যাচ্ছে। যা বিজেপিতে অনুপস্থিত।

অসাম্প্রদায়িক রাজনীতিতে বিশ্বাসী হওয়ায় কংগ্রেসের বিপুল জনসমর্থন রয়েছে। অপরদিকে, ধর্ম নিরপেক্ষতার বিষয়টিকে ধরে রাখতে পারেনি বিজেপি। যার কারণে এদিক দিয়ে কংগ্রেসই হতে পারে বিজেপির শক্ত প্রতিপক্ষ। তবে নেতৃত্ব সংকট ছাড়াও আভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে যথেষ্ট পিছিয়ে রয়েছে কংগ্রেস। অত্যন্ত জাতীয়তাবাদী মনোভাব নিয়ে যারা কংগ্রেসের রাজনীতি করেন তাদেরও একটা অংশের রাহুল গান্ধীর ব্যাপারে যথেষ্ট আপত্তি রয়েছে। রাহুল গান্ধীর আরেকটা বড় সমস্যা হচ্ছে তাঁর বাবা রাজীব গান্ধী বা তাঁর বোন প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর মতো জনপ্রিয়তা তিনি এখনো তৈরি করতে পারেননি। সারা দেশ তিনি চষে বেরাচ্ছেন ঠিকই তবে তার মধ্যে যে নেতৃত্বসুলভ আচরণ থাকা দরকার তাতে কিছুটা হলেও ঘাটতি রয়েছে।

মোদীকে চ্যালেঞ্জ করার সক্ষমতা কি রাহুল গান্ধীর রয়েছে?

উত্তর: এককভাবে মোদী বর্তমানে অতুলনীয় এক নেতা হয়ে গিয়েছেন। গত ১০ বছরে নিজ দলেও তাঁর কোনো সমকক্ষ তৈরি হয়নি। এমনকি  বিজেপির মধ্যেও বর্তমানে মোদীর বিকল্প নেই। মোদীর সাথে কঠিনভাবে প্রতিযোগিতা করার মতো কোনো প্রতিদ্বন্ধিকেই আমি দেখছি না। যার কারণে অতি মাত্রায় আত্মবিশ্বাসের সৃষ্টি হয়েছে নরেন্দ্র মোদীর মধ্যে।

যদিও উগ্র হিন্দুত্ববাদকে তিনি এবং তাঁর দলের নেতারা প্রশ্রয় দিয়েছেন। একইসাথে ভারতের সামাজিক ও অর্থনৈতিক সমস্যাগুলোর দিকেও মনোযোগ দিয়েছেন তিনি। জনগণের মধ্যে একটা ধারণার সৃষ্টি হয়েছে যে ভারতে মোদীর বিকল্প কোনো নেতা নেই।

ভারতে বেকারত্বের হার কমাতে কতটুকু সফল মোদী?

উত্তর: দেশটির জনসংখ্যার ৫০% জনগণই ২৫ বছরের নিচে।যাদের বেশিরভাগই বেকার। এটিও একটি বিশাল চ্যালেঞ্জ। গত ১০ বছরে সরকার তেমন কোনো প্রভাব রাখতে না পারলেও বেকারত্বের এ সমস্যা সমাধান করতে হবে পরবর্তী সরকারকেই। তবে এ সমস্যা সমাধানে মোদীর কোনো 'পলিটিকাল ফিগার' আমার চোখে পড়েনি।

মোদী ম্যাজিকে তৃতীয় বারের মতো ক্ষমতায় আসতে যাচ্ছে কী বিজেপি?

উত্তর: এটার একটা প্রবল সম্ভাবনা আছে বলে আমার মনে হয়। অপ্রত্যাশিত কিছু না ঘটলে ধরেই নেওয়া যায় যে তৃতীয় বারের মতো নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন নরেন্দ্র মোদি। ২০১৪ এবং ২০১৯ সালে যে এজেন্ডা নিয়ে তিনি জয়লাভ করেছিলেন এবার সেটি হবে কিছুটা ভিন্ন।