রম্য
ডাস্টবিন চুরি যেভাবে ঠেকাবেন

সম্প্রতি ঢাকার রাস্তায় ময়লা ফেলার সুবিধার জন্য এক হাজার আধুনিক ডাস্টবিন বসানো হয়েছে। তার মধ্যে বেশ কিছু এরই মধ্যে চুরি হয়ে গেছে। ডাস্টবিনের এই চুরি ঠেকানোর কিছু উপায় নিয়ে সাজানো হয়েছে এই লেখা।
পাসওয়ার্ড সিস্টেম
আধুনিক যুগে ফেসবুক, ভাইবার, হোয়াটসঅ্যাপ থেকে শুরু করে যাবতীয় নিত্যপ্রয়োজনীয় ইলেকট্রনিকস যন্ত্রপাতিতে পাসওয়ার্ড দিয়ে রাখা হয়। পাসওয়ার্ড দেওয়ায় সুবিধা হচ্ছে ব্যবহারকারী ছাড়া অন্য কেউ সেসব ব্যবহার করতে পারবে না। এ রকম করে ডাস্টবিনেও যদি পাসওয়ার্ড দিয়ে রাখা হয়, তাহলেই খেল খতম। পাসওয়ার্ড এমনভাবে দিতে হবে যেন যে পাসওয়ার্ড জানে, শুধু সে-ই ডাস্টবিনকে তার জায়গা থেকে সরাতে পারবে। চোর যেহেতু পাসওয়ার্ড জানবে না, তাই সে যত চেষ্টাই করুক ডাস্টবিন চুরি করতে পারবে না।
এ ক্ষেত্রে পাসওয়ার্ড যেন বাংলাদেশ ব্যাংকের পাসওয়ার্ডের মতো দুর্বল না হয়। তাহলে দেশি চোর চুরি করতে না পারলেও বিদেশি হ্যাকার ঠিকই ডাস্টবিন হ্যাক করে ফেলবে!
প্যাটার্ন লক
স্মার্টফোনে প্যাটার্ন লক দেন না এমন ব্যক্তি খুঁজে পাওয়া সুন্দরবনে সিংহ খুঁজে পাওয়ার শামিল। অন্যের কাছ থেকে নিজের মোবাইল এবং মোবাইলের ভেতরের তথ্য চুরি ঠেকাতেই এই প্যাটার্ন লক ব্যবহার করা হয়। রাস্তার ডাস্টবিনগুলোয় যদি এ রকম প্যাটার্ন লক করে রাখা যায়, তাহলে চুরি বন্ধ হবে বলে আশা করা যায়। প্যাটার্ন যে জানবে, শুধু সেই ব্যক্তিই ডাস্টবিন সরাতে পারবে, অন্য কেউ পারবে না। এটাও অনেকটা পাসওয়ার্ড ব্যবহার করার মতোই।
অ্যালার্ম সিস্টেম
প্রায় প্রতিটি ব্যাংকেই এই অ্যালার্ম সিস্টেম থাকে। কেউ ডাকাতি করতে এলে অ্যালার্মের সুইচ টিপে দিলেই তীব্র শব্দে অ্যালার্ম বেজে ওঠে। অ্যালার্মের শব্দে আশপাশের পুলিশ বুঝতে পারে, ব্যাংক ডাকাতি হচ্ছে। অনেক সময় অ্যালার্মের সঙ্গে আশপাশের পুলিশ স্টেশনের যোগাযোগ থাকে। ব্যাংকে অ্যালার্ম বাজলে পুলিশ স্টেশনেও অ্যালার্ম বেজে ওঠে। চুরির ঝুঁকিতে থাকা ডাস্টবিনগুলোর সঙ্গে অ্যালার্ম ফিট করে রাখতে হবে। অ্যালার্মের সঙ্গে নিকটস্থ থানার যোগাযোগ থাকবে। চোর চুরি করতে এসে ডাস্টবিনে হাত দেওয়ামাত্রই থানায় অ্যালার্ম বেজে উঠবে।
তবে এ ক্ষেত্রে বলে নেওয়া ভালো, আমাদের পুলিশের আরো অনেক ধরনের কাজ থাকে। অ্যালার্ম বেজে উঠলেই যে তারা ডাস্টবিন রক্ষার্থে ছুটে যাবে, সে রকম কোনো গ্যারান্টি নেই!
সিসিটিভি ক্যামেরা
যেসব স্থানে ডাস্টবিন রাখা হয়েছে, সেখানে সিসিটিভি লাগানো যেতে পারে। এতে করে কেউ ডাস্টবিন চুরি করলে বাধা পাবে না ঠিকই, তবে সিসিটিভিতে চুরির ভিডিও থেকে যাবে। পরে পুলিশ এসে সিসিটিভির ভিডিও দেখে সহজেই সেই এলাকার চোরকে গ্রেপ্তার করতে পারবে।
তবে লক্ষ রাখতে হবে, এসব সিসিটিভি যেন গত পয়লা বৈশাখে টিএসসিতে রাখা সিসিটিভির মতো না হয়। কারণ, সেসব সিসিটিভিতে নারীর শ্লীলতাহানি করা অপরাধীদের চেহারা স্পষ্ট দেখা গেলেও আজ এক বছরেও তাদের পুলিশ ধরতে পারেনি!
রেকর্ডিং সিস্টেম
ডাস্টবিন যেখানে যেখানে রাখা হবে, তার আশপাশে একটা টেপ রেকর্ডার লুকিয়ে রাখতে হবে। রাত হলেই টেপ রেকর্ডার চালু করে দিতে হবে। টেপ রেকর্ডারে ‘কে, কে ওখানে ডাস্টবিন চুরি করতে আইছস?’ এ রকম একটা ধমক রেকর্ড করা থাকবে। সারা রাত এই একটা বাক্যই বেজে চলবে। চোর চুরি করতে এলেও রেকর্ডারের ধমক শুনে ভয়ে পালিয়ে যাবে।
ফেসবুক আসক্ত দারোয়ান নিয়োগ
এতসব ডিজিটাল সিস্টেমেও যদি চুরি ঠেকানো না যায়, সে ক্ষেত্রে অ্যানালগ সিস্টেম অনুসরণ করতে হবে। প্রতিটি ডাস্টবিনের সঙ্গে একজন করে পাহারাদার নিয়োগ দিতে হবে। হাতে লাঠি আর মুখে ফুটবল খেলার রেফারির মতো বাঁশি নিয়ে সেই পাহারাদার সারা রাত ডাস্টবিন পাহারা দেবে। চোর চুরি করার চান্সই পাবে না।
তবে হ্যাঁ, পাহারাদারের অবশ্যই ঝিমুনি রোগ থাকা যাবে না। আর থাকলেও তা দূর করতে হবে। ঝিমুনি দূর করতে পাহারাদার নিয়োগ দেওয়ার আগে ফেসবুক আসক্ত কাউকে নিয়োগ দিতে হবে। যে পাহারাদারের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট আছে, সে সারা রাত জেগে এমনিতেই ফেসবুক ব্রাউজ করে পার করবে। ঘুমানোর কথা মনেই থাকবে না!