আইটি সেক্টরের শীর্ষ অ্যাসোসিয়েশন হবে বিসিএস : সুব্রত সরকার

Looks like you've blocked notifications!
ইঞ্জিনিয়ার সুব্রত সরকার। ছবি : সংগৃহীত

দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের শীর্ষ বাণিজ্যিক সংগঠন বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতি (বিসিএস) আইটি সেক্টরের একটি শীর্ষ অ্যাসোসিয়েশন হবে; যার মাধ্যমে সবাই ‘ওয়ানস্টপ’ সার্ভিস পাবে বলে স্বপ্ন দেখেন বিসিএস-এর সাবেক সভাপতি ও সি অ্যান্ড সি ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের প্রধান নির্বাহী ইঞ্জিনিয়ার সুব্রত সরকার, যিনি ২০২২-২৪ মেয়াদে কার্যনির্বাহী পরিষদ নির্বাচনের ‘মেম্বারস ভয়েস’ টিমের নেতৃত্ব দিচ্ছেন।

সম্প্রতি এনটিভি অনলাইনের সাথে একান্ত সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন ইঞ্জিনিয়ার সুব্রত সরকার। এ সময় তিনি কেমন বিসিএস চান, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা, নিজের প্যানেল নিয়েও কথা বলেছেন।

কেমন আছেন? বিসিএস কি তার যোগ্য স্থানে যেতে পেরেছে? কী মনে করেন?

বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতি হলো আইটি সেক্টরের সবচেয়ে পুরোনো একটি সংগঠন, যাদের মেম্বার অনেক বেশি। ৩৫ বছর ধরে সংগঠনটি তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে। কিন্তু এত বছরে যে জায়গায় যাওয়ার কথা ছিল, আমরা সে জায়গায় কোনও না কোনও ভাবে নিতে পারিনি। আমরা এখন এমন বিসিএস চাই, যেটি হবে লিড একটি অ্যাসোসিয়েশন। সবাই এখানে ওয়ানস্টপ-সার্ভিস পাবে। একটি ডাটাবেজ থাকবে আর অ্যান্ড ডি সেন্টার থাকবে। রিসার্চ সেন্টার থাকবে। আমার মনে হয়, এই জায়গাগুলোতে কাজ করা কম্পিউটার সমিতির বিশেষভাবে প্রয়োজন।

মেম্বারস ভয়েস নিয়ে পরিকল্পনা করেছেন?

বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতির (বিসিএস) ২০২২-২৪ মেয়াদে কার্যনির্বাহী পরিষদ এবং ৮টি শাখা কমিটির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ১৬ মার্চ (বুধবার)। আমাদের মেম্বারস ভয়েস অর্থ হলো মেম্বারদের কণ্ঠস্বর। মেম্বারদের যত ধরনের সমস্যা আছে তাঁদের সমস্যার সমাধানে কাজ করবে মেম্বারস ভয়েস। এবারের নির্বাচনে অভিজ্ঞ সাত সদস্যের প্যানেল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে চলেছে ‘মেম্বারস ভয়েস’ টিম। টিমটির নেতৃত্বে আছি আমি। ‘মেম্বারস ভয়েস’ প্যানেলের অন্য সদস্যরা হলেন বিসিএসের বর্তমান কোষাধ্যক্ষ ও সাউথ বাংলা কম্পিউটার্সের কামরুজ্জামান ভূঁইয়া, পরিচালক ও স্টার টেক অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেডের রাশেদ আলি ভূঁইয়া, এলিফ্যান্ট রোড কম্পিউটার ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সভাপতি ও টেক হিলের মোস্তাফিজুর রহমান তুহিন, এলিফ্যান্ট রোড কম্পিউটার ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও মাইক্রোসান সিস্টেমসের এস এম ওয়াহিদুজ্জামান, পিসি গার্ডেনের মো. আহসানুল ইসলাম নওশাদ এবং গোল্ডেন ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল বিডির মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম হেলালী। আমরা সবাই মিলে করপোরেট বিজনেসে শৃঙ্খলার মধ্যে আনতে কাজ করব।

ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের অনেক সমস্যা রয়েছে? এ নিয়ে আপনাদের পরিকল্পনা কী?

আমি যখন বিসিএসের সেক্রেটারি, প্রেসিডেন্ট ছিলাম তখন সদস্যদের সার্বিক উন্নয়নের জন্যই কাজ করেছি। ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের অনেক সমস্যা রয়েছে। সেগুলোকে সলভ করার জন্য আমরা কাজ করব। অতীতেও করেছি, এখন আর ঘুচিয়ে করব। আমাদের এই টিম অত্যন্ত দক্ষ; তারা বাজারের মূল্য নির্ধারণ থেকে শুরু করে একটি স্ট্যান্ডার্ড ওয়ারেন্টি পলিসি, মেম্বারদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতকরণ এবং পাশাপাশি রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের জন্য কাজ করবে। এ ছাড়া সমস্ত বাংলাদেশে আমাদের যতগুলো ব্রাঞ্চ রয়েছে, সেগুলোকে আরও শক্তিশালী করতে কাজ করবে মেম্বারস ভয়েস। শুধু তা-ই নয়, দেশে আমাদের যে দশটি শাখা রয়েছে, এই দশটি এলাকাতে একসাথে এক্সপো করতে চাই। সরকারের সাথে যৌথভাবে কম্পিউটার সমিতি এটা করতে পারে। এখানে তরুণ উদ্যোক্তাদের এগিয়ে আনার জন্য কাজ করব। তরুণ ম্যানুফেকচারদের প্রাধান্য দিয়ে তাদের আইডিয়াকে সংগ্রহ করে বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতি একটি ইনোভেশন সেক্টর তৈরি করবে।

আপনি এর আগেও দায়িত্ব পালন করেছেন, আপনার সম্পর্কে আরও জানতে চাই।

১৯৯১ সালে থেকে এই ইন্ডাস্ট্রির সাথে জড়িত। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ইন্ডাস্ট্রির নানান কর্মকাণ্ডের সাথেও যুক্ত ছিলাম, এখনও আছি। আমি এই ইন্ডাস্ট্রিকে ভালোবাসি। এর জন্য কাজ করতে পছন্দ করি। আমি গত ২০১৮-২০২০ মেয়াদে এক বছরের জন্য বিসিএসের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি। মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করেছি। এ ছাড়া  কম্পিউটার সিটি সেন্টার শপ হোল্ডার্স সোসাইটি, মাল্টিপ্লান সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছি। আমার জন্ম ও বেড়ে ওঠা মুন্সিগঞ্জ জেলার শ্রীনগর উপজেলায়। ১৯৯০ সালে ইলেকট্রনিক অ্যান্ড কমিউনিকেশন বিষয়ে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রি লাভের পর কম্পিউটার এবং মাইক্রোপ্রসেসরের ওপর উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করি।

এরপর ১৯৯২ সালে আমি প্রতিষ্ঠা করি সি অ্যান্ড সি ট্রেড ইন্টারন্যাশনল নামের নিজস্ব প্রতিষ্ঠান। পর্যায়ক্রমে ধানমণ্ডি, এলিফ্যান্ট রোড ও বন্দর নগরী চট্টগ্রামে শাখা চালু করি। বর্তমানে রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোড ও মুন্সিগঞ্জের ব্যবসা পরিচালনা করছি।

এমআরপির ওয়ারেন্টি পলিসি নিয়ে কিছু বলুন?

আমি সারা দেশের আইটি পণ্যের বাজারের প্রত্যেকটা প্রোডাক্টের গায়ে যাতে এমআরপি লেখা থাকে, সে কাজ বাস্তবায়নে এমআরপির ওয়ারেন্টি পলিসি নিয়ে বিশেষভাবে কাজ করেছি। অনলাইনে যাতে সব আইটি পণ্যে সবার ওয়ারেন্টি ও প্রাইজ রেঞ্জ এক থাকে, এর জন্য অনেক কাজ করেছি। সেগুলোর একটা নীতিমালাও তৈরি করে বাস্তবায়নও করেছি। কিন্তু গত তিন বছরে এই এমআরপির ওয়ারেন্টি পলিসি নিয়ে তেমন কোনও কাজ হয়নি। এটা এখন আমাদের রিটেইল বিজনেসম্যানদের জন্য একটা বার্নিং ইস্যু।

করোনাকালে সৃষ্ট সংকট মোকাবিলার বিষয়গুলো নিয়ে যদি কিছু বলতেন?

করোনাকালে ও আইটি সাপোর্ট কিন্তু দরকার। আমরা কিন্তু যথারীতি আইটির একটা সাপোর্ট দিয়ে গেছি। এই সাপোর্ট ছাড়া কোনও কিছুই করা সম্ভব ছিল না। মাল্টিপ্লানে প্রায় ৭০০-এর মতো দোকান রয়েছে, যেখানে আমি সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব আমি পালন করাতে জানতে পেরেছি, এই এলিফ্যান্ড রোড থেকে যথারীতি আমরা সারা বাংলাদেশে আইটি সাপোর্ট দিয়ে গেছি। শুধু তা-ই নয়, করোনাকালে আমাদের স্টাফদের এবং আমাদের কর্মচারীদের সব ধরনের সহায়তা করেছি, সাধ্যমতো পাশে ছিলাম। এ ছাড়া করোনার সময় একটি উদ্যোগ নিয়েছিলাম, এই আইটি পণ্যকে জরুরি সেবার মধ্যে নিয়ে আসার দাবি জানিয়েছিলাম। আমরা প্রথম এলিফ্যান্ট রোডের সামনে দাবিগুলো তুলে ধরেছিলাম। সারা বাংলাদেশে এ নিয়ে দাবি উঠেছিল, আইটি সেবাকে অবশ্যই জরুরি সেবার মধ্যে আনতে হবে। পরবর্তীতে আনাও হয়েছে।

নতুন কার্যনির্বাহী কমিটিতে যাঁরা আসবেন, এই দায়িত্ব পালন করতে কিছু চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে।

২০২৩ সালে বাংলাদেশে জাতীয় সংসদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। অবশ্যই সরকারের সাথে তাল মিলিয়ে ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে আমাদের একসাথে কাজ করতে হবে। যাঁরা নতুন কার্যনির্বাহী কমিটিতে থাকবেন, তাঁদের এই দায়িত্ব পালন করতে কিছু চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে। ইন্ডাস্ট্রিকে যোগ্য ও দক্ষ নেতৃত্বের মাধ্যমে চলমান অস্থিরতার হাত থেকে স্থির অবস্থায় আনতে হবে। মনোপলি বিজনেস বন্ধ করতে হবে। নতুন কমিটির সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হবে এমআরপি বাস্তবায়ন করা। এ কাজটা বাস্তবায়ন করা অনেক কঠিন হবে। তবে সবার আন্তরিক চেষ্টা থাকলে আশা করছি সহজে করতে পারব।

কোন জায়গাগুলোতে ফোকাস দিয়ে কম্পিউটার সমিতির এগোনো দরকার বলে আপনি মনে করেন?

বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতি চাইলেই এই প্রতিষ্ঠানকে আরও এগিয়ে নেওয়া সম্ভব। সরকারের সাথে কাজ করার জন্য এমন নেতৃত্ব দরকার, যাঁদের সাথে সরকারের রিলেশন ভালো। সরকারের সাথে মেম্বারদের ডিমান্ড, মার্কেটের ডিমান্ড এবং রাষ্ট্রের ডিমান্ড কী এবং ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার ক্ষেত্রে কী ভূমিকা রাখবে বিসিএস বা ভূমিকা রাখতে পারছে কি না, এই জায়গাগুলোতে যদি কাজ না করা যায়, তাহলে কিন্তু সাকসেসফুল হওয়া যাবে না। এগুলো ফোকাস করে এগিয়ে যাওয়া দরকার বলে মনে করি।

প্রসঙ্গত, নির্বাচনি তফসিল অনুসারে ১৬ মার্চ সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত রাজধানীর কৃষি ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ (কেআইবি)-এর মিলনায়তনে ২০২২-২৪ মেয়াদকালের কার্যনির্বাহী কমিটি ও শাখা কমিটির নির্বাচন হবে। একই দিনে নির্বাচিত প্রার্থীদের মধ্যে পদ বণ্টনের নির্বাচনও হবে।