ধ্বংসের মুখে পৃথিবীর প্রাণিকুল

ষষ্ঠবারের মতো ধ্বংসের মুখে পৃথিবীর প্রাণিকুল। সাধারণত পৃথিবী থেকে একটি প্রাণী হারিয়ে যাওয়ায় যতটা সময় লাগে, বর্তমান তা ঘটছে শতগুণ বেশি গতিতে। আর প্রাণী প্রজাতির ধ্বংসের মুখে পড়লে এর মধ্যে মানুষও থাকবে। গত শুক্রবার এই দাবি জানিয়ে সতর্ক করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের গবেষকরা।
গবেষকদের দাবি, ছয় কোটি ৬০ লাখ বছর আগে পৃথিবী থেকে ডাইনোসর হারিয়ে যাওয়ার সময়ের পর থেকে এই সময় পর্যন্ত প্রাণিকুলের হারিয়ে যাওয়ার গতি বর্তমানেই সর্বোচ্চ। জলবায়ু পরিবর্তন, বন ধ্বংসসহ নানা কারণেই বর্তমান সময়ে প্রাণী প্রজাতি হারিয়ে যাওয়ার হার সবচেয়ে বেশি।
টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়, পৃথিবীর প্রাণিকুল হারিয়ে যাওয়া নিয়ে গবেষণা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্যানফোর্ড, প্রিন্সটন ও ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার একদল গবেষক। এ-সংক্রান্ত গবেষণা নিবন্ধটি প্রকাশ করেছে বিজ্ঞান সাময়িকী ‘সায়েন্স অ্যাডভান্সেস’। এতে নেতৃত্ব দেন মেক্সিকোর গবেষক জেরাল্ডো সেবালোস।
অন্যতম গবেষক স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির শিক্ষক পল এহরলিক বলেন, নিবন্ধ থেকে একটি বিষয় পরিষ্কার যে, পৃথিবীতে ষষ্ঠবারের মতো প্রাণিকুল হারানোর ঘটনা ঘটতে যাচ্ছে। আর পৃথিবী থেকে হারিয়ে যাওয়ার ঝুঁকিতে থাকা প্রাণিকুলের মধ্যে মানুষও আছে।
ভার্টিব্রাটা প্রজাতি উত্থান ও ধ্বংস হওয়ার তথ্য নিয়ে গবেষণা করা হয়। এ ছাড়া গবেষণায় ব্যব্হার করা হয় প্রাচীন প্রাণীর পাওয়া ফসিল যার মধ্যে আছে ব্যাঙ, বাঘসহ বিভিন্ন সরীসৃপের মেরুদণ্ড। পরে বর্তমান সময়ে প্রজাতি হারিয়ে যাওয়ার হারে সঙ্গে মানুষ প্রাণী প্রজাতিতে প্রভাবশালী হওয়ার পূর্বের হারের তুলনা করা হয়। গবেষক জেরাল্ডো বলেন, এভাবেই চলতে থাকলে পুনরায় জীবন পূর্বাবস্থায় যেতে লাখো বছর সময় নেবে আর এর আগে ধ্বংস হবে আমাদের প্রজাতি।
গবেষকরা বলেন, পূর্বের হারের সঙ্গে বর্তমান হারের তুলনার হারটি বেশ কঠিন। কারণ ৪৫০ কোটি বছর আগে কী ঘটেছে এ সম্পর্কে মানুষ তেমন কিছুই জানে না।
গবেষকরা বলেন, অতীতের হার অনুযায়ী প্রতি ১০০ বছরে প্রতি ১০ হাজার প্রাণী প্রজাতির মধ্যে দুটি স্তন্যপায়ী প্রজাতি ধ্বংস হতো। কিন্তু পৃথিবীতে মানুষের কর্মকাণ্ড বৃদ্ধির পর এই হার বেড়েছে ১১৪ গুণ।
গবেষকরা আরো দাবি করেন, গবেষণায় প্রাণিকুলের হারিয়ে যাওয়ায় প্রাণিবৈচিত্র্যে কতটা ভয়াবহ প্রভাব পড়ে এটি পুরোপুরি বোঝা যায় না। প্রকৃত ক্ষতি হয় কয়েক গুণ বেশি।
প্রকৃতির সংরক্ষণবিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশনের মতে, ৪১ শতাংশ উভচর প্রজাতি ও ২৬ শতাংশ স্তন্যপায়ী প্রজাতির অস্তিত্ব হুমকির সম্মুখীন।
গবেষকদের মতে, শুধু কয়েকটি প্রজাতিই নয় পৃথিবীর অধিকাংশ প্রাণী প্রজাতিই ধীরে ধীরে ধ্বংসের মুখে যাচ্ছে।