১০ কারণে উইন্ডোজ ১০

অপেক্ষার প্রহর শেষ হতে যাচ্ছে। ২৯ জুলাই বাজারে আসছে টেক জায়ান্ট মাইক্রোসফটের বহুল প্রতীক্ষিত অপারেটিং সিস্টেম উইন্ডোজ ১০। আর সবচেয়ে বড় খবর ব্যবহারকারীরা উইন্ডোজ ১০ পাচ্ছেন একদম ফ্রি! তবে সেক্ষেত্রে তাকে অরিজিনাল উইন্ডোজ ৮ কিংবা উইন্ডোজ ৭-এর গ্রাহক হতে হবে।
উইন্ডোজ ৭-এর মতো প্রবল জনপ্রিয় অপারেটিং সিস্টেম বাজারে আনার পর মাইক্রোসফট রিলিজ করে তাদের সর্বশেষ অপারেটিং সিস্টেম উইন্ডোজ ৮। কিন্তু সমালোচক কিংবা সাধারণ ব্যবহারকারী, কারো মন জিততে পারেনি উইন্ডোজ ৮। উল্টো ‘স্টার্ট বাটন’ মুছে ফেলায় কড়া সমালোচনার মধ্যে পড়ে তারা।
মাইক্রোসফট তখনই ঘোষণা দিয়েছিল উইন্ডোজ ৮-এর সব ভুলত্রুটি মুছে ফেলে নতুন করে হাজির হবে তারা। সে লক্ষ্যেই তারা কাজ করে গেছে, ফিরিয়ে এনেছে বহু কাঙ্ক্ষিত স্টার্ট মেনু। শুধু স্টার্ট মেন্যু নয়, আরো নিত্যনতুন ফিচার যোগ হয়েছে উইন্ডোজ ১০ অপারেটিং সিস্টেমে।
পিসিম্যাগ জানিয়েছে উইন্ডোজ ১০-এ আপগ্রেড করার ১০টি কারণ যা এড়িয়ে যেতে পারবেন না-
১. গতি
অপারেটিং সিস্টেম হিসেবে উইন্ডোজ ১০ অনেক বেশি দ্রুতগতির। পূর্ববর্তী অপারেটিং সিস্টেমগুলোর চেয়ে এটি অনেক এগিয়ে। পিসি চালু হতে অর্থাৎ স্টার্টআপে এটি মাত্র কয়েক সেকেন্ড ব্যয় করবে। এমনকি অ্যাপলের নতুন অপারেটিং সিস্টেম ওএস এক্স-এর চেয়েও দ্রুতগতিসম্পন্ন উইন্ডোজ ১০। আর গেমারদের খুশি করার জন্য মাইক্রোসফট আনছে তাদের নতুন এপিআই (অ্যাপ্লিকেশন প্রোগ্রামিং ইন্টারফেস) ডিরেক্টএক্স ১২। গতির দিক থেকে ডিরেক্টএক্সের আগের সংস্করণগুলোকে হার মানাবে এটি।
২. স্টার্ট মেন্যু
প্রযুক্তির দুনিয়ায় সবচেয়ে বেশি শোরগোল উঠেছিল উইন্ডোজ ৮-এ স্টার্ট মেন্যু বাদ দেওয়ার পর। শুনতে হয়েছিল প্রবল সমালোচনা। তবু মাইক্রোসফট সে সময় ঘোষণা করেছিল, স্টার্ট মেন্যুর দিন শেষ হতে চলেছে। তবে অবস্থা বেগতিক দেখে স্টার্ট বাটনকে তারা ফিরিয়ে এনেছিল উইন্ডোজ ৮-এর আপডেটেড ভার্সন উইন্ডোজ ৮.১-এ। তবে চিরাচরিত স্টার্ট মেন্যু সেখানেও অনুপস্থিত ছিল। কিন্তু এবার পরিপূর্ণভাবে স্টার্ট মেন্যু ফিরিয়ে আনছে তারা। একটু নতুন আঙ্গিকে অ্যাপ্লিকেশন লিস্টের সঙ্গে থাকছে বিভিন্ন অ্যাপের টাইল। আগের স্টার্ট মেন্যুর সঙ্গে উইন্ডোজ ৮-কে জুড়ে দিয়েই তাদের নতুন এই স্টার্ট মেন্যু।
৩. কর্টানা
নিজের অপারেটিং সিস্টেমের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ করে দিচ্ছে মাইক্রোসফট! বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী এবার বাস্তবের দুনিয়ায় আলোর মুখ দেখছে। পার্সোনাল ডিজিটাল অ্যাসিস্ট্যান্ট এই অ্যাপ্লিকেশনের নাম কর্টানা। আপনার মুখের কথাতেই চালু হয়ে যাবে আপনার পছন্দের কোনো গান কিংবা ছবি। কর্টানা আপনাকে জানিয়ে দেবে বাড়ির কাছে সেরা রেস্টুরেন্টের ঠিকানা কিংবা মনে করিয়ে দেবে আপনার অ্যানিভার্সারির তারিখ! অবশ্য পার্সোনাল ডিজিটাল অ্যাসিস্ট্যান্ট বাজারে এনেছে অ্যাপল এবং গুগল। তাদের সিরি কিংবা গুগল নাউ-এর সঙ্গে ভালো টক্কর দিতে হবে কর্টানাকে!
৪. বিভিন্ন অ্যাপের সুবিধা
উইন্ডোজ ৭ যাঁরা ব্যবহার করছেন, তাঁদের জন্য মাইক্রোসফট স্টোর ব্যবহারের কোনোই সুযোগ ছিল না। তবে যাঁরা উইন্ডোজ ৮ কিংবা ৮.১ ব্যবহার করেন, তাঁদের জন্য এই সুবিধা চালু ছিল। অবশ্য গুগলের প্লে স্টোর কিংবা অ্যাপলের অ্যাপ স্টোরের মতো সমৃদ্ধ ছিল না। উইন্ডোজ ১০-এর সঙ্গে সঙ্গে স্টোরের দিকেও বেশ মনোযোগী মাইক্রোসফট।
৫. টাচস্ক্রিন
স্মার্টফোন দুনিয়ায় অপারেটিং সিস্টেম হিসেবে উইন্ডোজ বেশ কোণঠাসা। সেদিক থেকে উন্নতি লাভের জন্য মাইক্রোসফট এবার তাদের অপারেটিং সিস্টেমকে সাজিয়েছে স্মার্টফোন এবং ট্যাবে ব্যবহারের উপযোগী হিসেবে। আর সেক্ষেত্রে টাচস্ক্রিন ডিভাইসে বেশ স্বাচ্ছন্দ্যেই ব্যবহার করা যাবে উইন্ডোজ ১০।
৬. অ্যাকশন সেন্টার
আপনার স্মার্টফোন আপনাকে নোটিফিকেশনে জানিয়ে দেয় মেইল কিংবা আপডেটের তথ্য। তবে আপনার পিসি নয় কেন? উইন্ডোজ ১০ আপনাকে সে সুযোগ দিচ্ছে। শুধুমাত্র সিকিউরিটি আর মেইনটেনেন্স ইস্যুতে আর আটকে থাকছে না অ্যাকশন সেন্টার। ম্যাক ওএসএক্সের নোটিফিকেশন সেন্টারের মতোই অ্যাকশন সেন্টার আপনাকে দেখাবে মেইল কিংবা অপারেটিং সিস্টেম ও বিভিন্ন অ্যাপের আপডেটেড তথ্য। একই সঙ্গে আবহাওয়া সংক্রান্ত তথ্য কিংবা রিমাইন্ডার হিসেবে কাজ করবে অ্যাকশন সেন্টার।
৭. মাইক্রোসফট এজ
মাইক্রোসফট তাদের দীর্ঘদিনের ইন্টারনেট ব্রাউজার ইন্টারনেট এক্সপ্লোরারকে বাদ দিয়েছে। গতি এবং নিরাপত্তার দিক থেকে সবচেয়ে বাজে ব্রাউজারের তকমা লেগে আছে ইন্টারনেট এক্সপ্লোরারের নামের পাশে। আর তাই নতুন এক ব্রাউজার তৈরির মিশন হাতে নেয় মাইক্রোসফট। প্রাথমিকভাবে যা ‘প্রজেক্ট স্পার্টান’ হিসেবে পরিচিত ছিল। শেষ পর্যন্ত অবশ্য নতুন এই ব্রাউজারের নামকরণ করা হয় ‘এজ’! গতির দিক দেখে সমালোচকদের দৃষ্টি কেড়েছে মাইক্রোসফট এজ। ওয়েবপেজ মার্কআপ কিংবা রিডিং মোড-এর মতো কিছু নতুন সুবিধা যুক্ত হয়েছে মাইক্রোসফট এজে। উইন্ডোজ ১০-এর সঙ্গে বাজারে আসবে এই নতুন ব্রাউজার।
৮. নিরাপত্তাব্যবস্থা
নিরাপত্তার দিকে বেশ নজর দিয়েছে মাইক্রোসফট। উইন্ডোজ ৮-এর মতো সিকিউর বুস্ট ফিচার থাকছে উইন্ডোজ ১০-এ। তবে জোরদার করা হয়েছে নিরাপত্তা। ডিভাইস গার্ড, মাইক্রোসফট পাসপোর্ট এবং উইন্ডোজ হ্যালো-এই তিনটি নতুন নিরাপত্তা ফিচার নিয়ে আসছে উইন্ডোজ ১০।
৯. ভার্চুয়াল ডেস্কটপ
ভার্চুয়াল ডেস্কটপ সুবিধা আনছে মাইক্রোসফট। মাল্টিটাস্কিং-এর ক্ষেত্রে এর ভূমিকা রয়েছে বেশ। একসঙ্গে অনেকগুলো ডেস্কটপ চালু করে মুহূর্তেই এক অ্যাপ্লিকেশন থেকে অন্য অ্যাপ্লিকেশনের কাজ শুরু করতে পারবেন। আর এই ফিচার ব্যবহারও বেশ সহজ করেছে মাইক্রোসফট। কর্টানা সার্চবারের পাশের আইকনে ক্লিক করলেই চালু হয়ে যাবে ভার্চুয়াল ডেস্কটপ।
১০. এক্সবক্স অ্যাপ
গেমারদের জন্য বেশ সুখবরই আনল মাইক্রোসফট। এক্সবক্সের ব্যবহার উপযোগী অনেক অ্যাপ এখন ডাউনলোড করা যাবে পিসিতে। শুধু তাই নয়, আপনি এক্সবক্সের গেম খেলতে পারবেন পিসিতে। এমনকি মাল্টিপ্লেয়ারে আপনি পিসিতে বসে লড়তে পারবেন এক্সবক্সের কোনো প্রতিদ্বন্দ্বীর সঙ্গে।