আইপডের মৃত্যু চাইছে কেন অ্যাপল?
সম্প্রতি অ্যাপল উন্মোচন করেছে আইপডের নতুন সংস্করণ। যে কোম্পানিটি বেশ নিয়মিতভাবেই তাদের বিভিন্ন প্রোডাক্টের নতুন সংস্করণ বাজারে আনার জন্য প্রসিদ্ধ, তারাই কেন যেন এবার অনেক দেরি করল আইপডের নবতম সংস্করণ বাজারে আনতে। তিন বছর পর এলো আইপডের এই নতুন সংস্করণ। ইতিমধ্যেই তারা তাদের ‘ক্লাসিক আইপড’কে সমাধিস্থ করেছে। ‘ক্লিক হুইল’ দিয়ে কাজ করা এই আইপডের বদলে নিয়ে আসে আইপড টাচ, আইপড ন্যানো- এসব মডেল।
আইপড টাচের এই নবতম সংস্করণ প্রত্যাশিত ছকেই তৈরি হয়েছে। দেখতে প্রায় আগের পুরনো মডেলের মতোই। সঙ্গে রয়েছে নবতম আইফোনের বেশ কিছু বৈশিষ্ট্য। এতে পাওয়া যাবে সেই একই এ-৮ প্রসেসর আর সঙ্গে ৮ মেগাপিক্সেল ক্যামেরা। পাওয়া যাবে আটটি ভিন্ন রঙে। মনে হতে পারে সবই তো ঠিকঠাক চলছে।
তাই কি? প্রতি দুই বছরে আপগ্রেড করা কোনো অ্যাপল পণ্যের জন্য এই আপগ্রেড কি সত্যিই কোনো আপগ্রেড? যে কোম্পানি উচ্চাকাঙ্ক্ষী ‘মিউজিক স্ট্রিমিং’ সার্ভিস চালু করতে যাচ্ছে তাঁর কাছে কি ছোট্ট আপগ্রেড প্রত্যাশিত? অবশ্যই না। তবে কেন এমনটা করল অ্যাপল?
অ্যাপল সবসময়ই সৃজনশীল মানুষদের লালন করেছে। এর মধ্যে তাঁরাও রয়েছেন যাঁরা সত্যি সঙ্গীত কীভাবে ধ্বনিত হবে তা নিয়ে উদ্বিগ্ন, যাদের ডাকা হয় ‘অডিও ফিল’। এ ধরনের মানুষগুলোর মাঝে অনেকেই আছেন যাঁরা সঙ্গীত তৈরি করেছেন- যা আইটিউনসে বিক্রি হয়েছে আর এখন তাদের তৈরি মিউজিক অ্যাপল মিউজিকে স্ট্রিমিং হবে। কিন্তু এই মানুষগুলো কখনই পছন্দ করেননি আইপডের আওয়াজকে।
আইপড কখনো ‘হাই রিসোলিউশন’ অডিও বাজাতে ছাড়ত না। অ্যাপলের বেঁধে দেওয়া ফরম্যাট ছাড়া, অবচয়হীন ফরম্যাটগুলো আইপড বাজাতে পারে না। আর সত্যিকার অর্থে খুব ভালো ‘এয়ার পড’ সহযোগেও আসে না এই প্রোডাক্ট।
১২৮ জিবির সর্বশেষ যে ক্লাসিক আইপডটি বাজারে এসেছিল, সেটিই ছিল শেষ মডেল যেখানে ধারণক্ষমতা বাড়াবার একটা প্রবণতা দেখা গেছে। যার ফলে একজন মানুষ তাঁর পুরো ‘মিউজিক লাইব্রেরি’ পকেটে করে সাথে নিয়ে যেতে পারবে।
‘মিউজিক স্ট্রিমিং’-এর এই যুগে একটি ‘মিউজিক প্লেয়ার’এর আর কিছু ক্ষমতা থাকা জরুরি। তাকে এমন একটি ‘ডিভাইস’ হতে হবে যেখানে একজন মানুষ তাঁর পছন্দের সব গান একসাথে পায়। আর সেটাও হতে হবে সবচেয়ে উন্নত প্রকৃতির। কেবল গান শোনার জন্যই যদি একটি গ্যাজেট কিনবেন তবে তো আপনি চাইবেনই যে গ্যাজেটটি যেন হয় সঙ্গীতের প্রতি সম্পূর্ণরূপে নিবেদিত।
আপাতত মনে হচ্ছে, অ্যাপেলের মনে রয়েছে নতুন কোনো আইডিয়া। ‘এই ছোট আকৃতির হার্ড ডিস্ক আর তৈরি হয় না’ এই বলে ‘ক্লাসিক আইপড’কে বেশ খুশি মনেই তারা ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়েছিল। চাইলেই কি সেই হার্ডডিস্ক তারা বানানো চালিয়ে যেতে পারত না? কিন্তু তারা তা করেনি। তারা আসলে চায়নি এমন কোনো ‘আই ডিভাইস’ রাখতে যা ইন্টারনেটের সাথে যোগাযোগ রাখতে পারে না। কারণ তারা শুরু করতে যাচ্ছে ‘অ্যাপল মিউজিক’।
বোধহয় আর খুব বেশি সময় বাকি নেই, যেদিন অ্যাপেল নিজ হাতে খুন করবে তাদের আরেক সন্তান, অন্যতম সফল ‘আই ডিভাইস’, আইপড টাচকে।