মানবদেহে প্রতিস্থাপিত হবে শূকরের অঙ্গ

Looks like you've blocked notifications!
বিজ্ঞানীরা সফল হলে অঙ্গের অভাবে মানুষের মৃত্যু অনেক কমে যাবে। ছবি : ম্যাশেবল

অঙ্গ প্রতিস্থাপন চিকিৎসাবিজ্ঞানের এই চরম উৎকর্ষের যুগে কোনো অজানা ঘটনা নয়। মুমূর্ষু রোগীর দেহে অপর কোনো মানুষের অঙ্গ প্রতিস্থাপন করে বাঁচিয়ে তোলার ঘটনা উন্নত দেশগুলোতে আকছারই ঘটছে। কিন্তু সমস্যাটা হলো, প্রতিস্থাপন করার মতো বাড়তি অঙ্গ মোটেই সহজলভ্য নয়। 

ফলে সক্ষমতা থাকা সত্যেও প্রতি বছরই অনেক মানুষ মারা যান। কিন্তু এই সমস্যার সমাধান এবার সম্ভবত করে ফেলেছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একদল বিজ্ঞানী। শূকরের অঙ্গ মানুষের দেহে প্রতিস্থাপন করার মাধ্যমে এই সংকট কাটিয়ে ওঠার চেষ্টায় আছেন তাঁরা। আর এই খবর জানিয়েছে তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক ওয়েবসাইট ম্যাশেবল।

যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়াতে অবস্থিত বায়োপ্রযুক্তিবিষয়ক প্রতিষ্ঠান ‘ইউনাইটেড থেরাপিউটিকস’-এর বিজ্ঞানীরা বিষয়টি নিয়ে কাজ করছেন। প্রাথমিক সফলতাও পেয়েছেন তাঁরা। ম্যাশেবলের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইতিমধ্যেই শূকরের হৃদপিণ্ড বেবুনের দেহে প্রতিস্থাপন করে তা ৯৪৫ দিন জীবিত রাখতে সক্ষম হয়েছেন ইউনাইটেড থেরাপিউটিকসের বিজ্ঞানীরা। 

অবশ্য শূকরের হৃদপিণ্ড সরাসরি একবারে বসিয়ে দেওয়া হয়নি, অন্তত পাঁচটি মানব জিনের মাধ্যমে হৃদপিণ্ডটিকে নতুন দেহে প্রতিস্থাপনের জন্য সহনশীল করে তোলা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধার মার্টিন রথব্লাট প্রায় চার বছর ধরে এই গবেষণায় বিনিয়োগ করে আসছেন। তিনি জানান, তাঁর উদ্দেশ্য হলো মানুষের জন্য নিরবচ্ছিন্ন প্রতিস্থাপনযোগ্য অঙ্গের সরবরাহ নিশ্চিত করা, যাতে একজন মানুষও অঙ্গ সংকটে প্রাণ না হারায়। দিনে অন্তত ১২টি করে প্রতিস্থাপনযোগ্য অঙ্গ সরবরাহ করতে চান তিনি।

রথব্লাটের স্বপ্নের সঙ্গে বাস্তবতার মিশেল দেখছেন অন্য গবেষকরাও। সুইস সার্জন লিও বুহারের মতে এ জাতীয় প্রতিস্থাপন খুবই সম্ভাবনাময়। তবে খুবই শিগগিরই এ জাতীয় প্রতিস্থাপনে চূড়ান্ত সফলতা আসছে না। প্রতিস্থাপিত অঙ্গের সব থেকে বড় সমস্যা হলো, এটি অনেক সময়ই নতুন দেহে খাপ খাওয়াতে পারে না, ফলে যার দেহে ওই অঙ্গ প্রতিস্থাপন করা হয়, তাঁর মৃত্যু ঘটার আশঙ্কা থাকে। 

এ ক্ষেত্রে অন্য প্রাণীর অঙ্গ মানুষের দেহে কতটা খাপ খাওয়াতে পারবে, এ নিয়ে আরো গবেষণার প্রয়োজন আছে বলে মনে করেন বিজ্ঞানীরা। যেমন ১৯৮৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের একটি সদ্যোজাত শিশুর দেহে বেবুনের হৃদপিণ্ড সফলতার সাথে প্রতিস্থাপন করা হয়, কিন্তু মাত্র তিন সপ্তাহের মাথায় শিশুটি মারা যায়। 

প্রতি বছর কয়েক হাজার মানুষ প্রতিস্থাপনযোগ্য অঙ্গের অভাবে মারা যায়। কেননা সবসময় প্রতিস্থাপন করার মতো অঙ্গ সহজলভ্য থাকে না। এ ছাড়া একজন মৃত মানুষের দান করা কিডনি বা ফুসফুস মাত্র ঘণ্টা কয়েকের মতো সচল থাকে, ফলে চিকিৎসকদের হাতে খুব বেশি সময়ও থাকে না। 

সে ক্ষেত্রে শূকরের অঙ্গ প্রত্যঙ্গ যদি মানুষের দেহের ব্যবহার উপযোগী করে তোলা যায় তবে তা নিঃসন্দেহে অনেক মানুষের জীবন বাঁচাবে। অবশ্য পশু অধিকার নিয়ে কাজ করে যেসব সংস্থা, তারা ব্যাপারটি কীভাবে দেখছে তা জানা যায়নি।