বিশ্বের শীর্ষ ১০ বিলাসবহুল গাড়ি
শুধু ভ্রমণই নয়, প্রযুক্তির উৎকর্ষের সঙ্গে সঙ্গে উন্নত মানের গাড়িগুলো জীবনধারায় যোগ করছে নতুন নতুন সুবিধা। বিভিন্ন ব্র্যান্ডের সুপার ফাস্ট কার ও হাইপারকারের মতো শ্বাসরুদ্ধকর বিলাসবহুল গাড়িগুলো সামাজিক অবস্থানকে নতুন করে সংজ্ঞায়িত করে। আরও একটু আরামদায়ক, ডিজাইনে আরও একটু নতুনত্ব এবং আরও একধাপ উচ্চতর কর্মক্ষমতা দিতে রীতিমত প্রতিযোগিতা করে চলে অটোমোবাইল নির্মাতারা। সেই অর্থে ২০২৩ সালে পৃথিবীর সেরা ১০টি বিলাসবহুল গাড়ি অটোমোবাইল ভক্তদের একদমই নিরাশ করেনি। চলুন, জেনে নেওয়া যাক বিস্ময়কর ব্যয়বহুল সেই গাড়িগুলোর ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য।
পৃথিবীর সবচেয়ে বিলাসবহুল ১০ গাড়ি
১. রোলস-রয়েস বোট টেল
এখন পর্যন্ত পৃথিবীর সবচেয়ে বিলাসবহুল গাড়ি রোলস-রয়েসের বোট টেল, যার মূল্য ২৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার; বাংলাদেশি টাকায় ৩০৩ দশমিক ৮ কোটি টাকা (১ মার্কিন ডলারকে ১০৮ দশমিক ৫ বাংলাদেশি টাকা হিসাবে)। চোখ ধাঁধানো গাড়িটির ডিজাইন করেছে জনপ্রিয় অটোমোবাইল ব্র্যান্ড রোলস-রয়েস-এর কোচবিল্ড বিভাগ।
২০২১ সালে উৎপাদিত গাড়িটি সপ্রতিভ এবং স্বতন্ত্র অভিব্যক্তির সমন্বয়ে এক অনন্য সৃষ্টি। এর চেসিস ও ইঞ্জিনটি রোলস-রয়েস ফ্যান্টমের। অর্থাৎ ফ্যান্টমের মতো বোট টেলের ৫৬৩ হর্সপাওয়ার শক্তি সম্পন্ন ৬ দশমিক ৭৫ লিটারের টুইন-টার্বোচার্জকৃত ভি১২ ইঞ্জিনের ক্ষমতা আছে। ফ্যান্টম ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ২৫০ কিলোমিটার (১৫৫ মাইল/ঘণ্টা) বেগে ছুটতে পারে। ব্র্যান্ডের বিলাসিতা ও বিশেষত্বকে জাহির করার মাধ্যমে এই ভার্সনটি রোলস-রয়েস কাস্টমাইজেশনের এক সীমাহীন সম্ভাবনা প্রদর্শন করেছে।
২. বুগাটি লা ভয়চার নোয়ার
ফ্রান্সের বুগাটি অটোমোবাইলস এস.এ.এস এই অসাধারণ হাইপারকারটি বানিয়েছিল কিংবদন্তির বুগাটি টাইপ ৫৭ এসসি আটলান্টিককে উৎসর্গ করে। ২০১৯ সালে জেনেভা মোটর শো-এর মাধ্যমে উন্মোচিত এই মাস্টারপিসটি আধুনিক প্রযুক্তি ও ক্লাসিক ডিজাইনের এক অভাবনীয় সংমিশ্রণ। এর ১৮ দশমিক ৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যকে বাংলাদেশি মুদ্রায় পরিবর্তন করলে দাঁড়ায় ২০২ দশমিক ৯ কোটি টাকা। কাইরন বুগাটির যৌথ উৎপাদিত গাড়িগুলোর সবচেয়ে কম সময়ে শূন্য থেকে ৪০০ কিলোমিটার/ঘণ্টা(২৪৯ মাইল/ঘণ্টা) গতিতে ওঠার রেকর্ড আছে।
৩. বুগাটি সেন্টোডিসি
এই সীমিত সংস্করণের হাইপারকারটি বিখ্যাত বুগাটি ইবি১১০ এবং বুগাটি মার্কিউয়ের ১১০-তম জন্মদিনকে উৎসর্গ করা হয়েছিল। বুগাটি অটোমোবাইলস এস.এ.এস সেন্টোডিসির মোড়ক উন্মোচন করে ২০১৯ সালে। মাত্র ১০টি গাড়ি তৈরির উদ্দেশ্য নিয়ে উৎপাদিত এই ভার্সনটি বেশ ব্যতিক্রমী ও বিরল এক অটোমোবাইল। এর দাম ঠিক হয়েছিল ৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার; বাংলাদেশি টাকায় ৯৭ দশমিক ৬ কোটি টাকা। দীর্ঘ ভ্রমণে গাড়িটি সর্বোচ্চ ২৪০ মাইল/ঘণ্টা (৩৮০ কিলোমিটার/ঘণ্টা) গতি তুলতে সক্ষম। এটি সত্যিকার অর্থেই বুগাটির প্রকৌশল দক্ষতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
৪. মার্সিডিজ মেব্যাখ এক্সেলেরো
এক্সেলেরো বিখ্যাত জার্মান অটোমোবাইল প্রস্তুতকারক মার্সিডিজ-বেঞ্জ-এর উৎপাদিত একটি ব্যতিক্রমী স্পোর্টসকার। ২০০৪ সালে এটি তৈরি করা হয় একটি ওয়ান-অফ কনসেপ্ট কার হিসেবে। এর ৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যকে বাংলাদেশি টাকায় রূপান্তর করলে দাড়ায় ৮৬ দশমিক ৮ কোটি টাকা। এক্সেলেরোর আকর্ষণীয় ডিজাইনের মুল প্রতিপাদ্য হলো এর দীর্ঘ ও মসৃণ শরীর এবং বিমানের মত গাল-উইং দরজা।
এক্সেলেরো পরিচালিত হয় ৫ দশমিক ৯ লিটার টুইন-টার্বোচার্জড ভি১২ ইঞ্জিন দ্বারা, যেটি ৬৯০ হর্সপাওয়ার উৎপন্ন করে। গাড়িটির সর্বোচ্চ গতি ঘণ্টায় ৩৫১ কিলোমিটার (২১৮ মাইল/ঘণ্টা)। যানটির অসাধারণ ডিজাইনে সর্বোত্তম উপকরণ এবং কারুকার্যকে একত্রিত করা হয়েছে। এর জাঁকজমক আভ্যন্তর ভাগে রয়েছে উচ্চমানের চামড়ার গৃহসজ্জার সামগ্রী এবং অত্যাধুনিক প্রযুক্তি।
৫. বুগাটি ডিভো
এই সীমিত সংস্করণের হাইপারকারটি বুগাটি অটোমোবাইলস এস.এ.এস বুগাটি কাইরন-এর উপর ভিত্তি করে ২০১৮ সালে চালু করা হয়েছিল। উৎপাদিত ৪০টি গাড়ির সবকটি আনুষ্ঠানিকভাবে উন্মোচনের আগেই বিক্রি হয়ে গিয়েছিল। এর মূল্য ৫ দশমিক ৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার; বাংলাদেশি টাকায় ৬২ দশমিক ৯ কোটি টাকা। ফরাসির কিংবদন্তি বুগাটি রেসিং ড্রাইভার আলবার্ট ডিভোর নামানুসারে এর নামকরণ করা হয়। কাইরন থেকে নামিয়ে ডিভোর সর্বোচ্চ গতিবেগ ৩৮০ কিলোমিটার/ঘণ্টা (২৩৬ মাইল/ঘণ্টায়) রাখা হয়েছে। ডিভোর ব্যতিক্রমী হ্যান্ডলিং একে ধীর গতি দিতে এবং বাঁকগুলোতে নিয়ন্ত্রণ রাখতে অপূর্ব তৎপরতা প্রদান করে। এর সীমিত উৎপাদন এবং অতুলনীয় পারফরম্যান্স ডিভোকে অটো ভক্তদের কাছে একটি অত্যন্ত লোভনীয় মাস্টারপিসে পরিণত করেছে।
৬. কোয়েনিগসেগ সিসিএক্সআর ট্রেভিটা
এই হাইপারকারটি নির্মাণ করেছে সুইডিশ গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান কোয়েনিগসেগ অটোমোটিভ এবি। ২০০৯ সালে উৎপাদিত এই একচেটিয়া গাড়িটি শীর্ষস্থানীয় প্রকৌশল এবং ডিজাইনকে প্রতিনিধিত্ব করে। এর সর্বশেষ মূল্য ৪ দশমিক ৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার; বাংলাদেশি মুদ্রায় ৫২ কোটি টাকা। ট্রেভিটার স্বতন্ত্র বডিতে রয়েছে বিশেষ হীরাচূর্ণ-মিশ্রিত রজনে লেপনকৃত কার্বন ফাইবার।
এই উদ্ভাবনী প্রলেপ গাড়িটিকে একটি অত্যাশ্চর্য রূপালী চেহারা দেয়, যা সূর্যের আলোতে ঝলমল করে। ট্রেভিটা ঘণ্টায় ৪০০ কিলোমিটার (২৪৯ মাইল/ঘণ্টা) গতিবেগ ছাড়িয়ে যেতে পারে। এর যুগান্তকারী কর্মদক্ষতা এবং সীমিত উৎপাদন একে দিয়েছে একটি স্বপ্রতিভ শিল্পগুণ, যা সুইডিশ ব্র্যান্ডের অসামান্য প্রকৌশল বিদ্যার পরিচায়ক।
৭. ল্যাম্বোরঘিনি ভেনিনো
স্বনামধন্য ইতালীয় গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ল্যাম্বোরঘিনির একটি অসাধারণ হাইপারকার এই ভেনিনো। কোম্পানির ৫০তম বার্ষিকী উদযাপন করার জন্য ২০১৩ সালে এর তিনটি ইউনিট চালু করা হয়। অটোমোবাইলটির বর্তমান দাম ৪ দশমিক ৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, বাংলাদেশি টাকায় যা ৪৮ দশমিক ৮ কোটি টাকার সমান।
ডিভোর মতো ভেনেনোরও রয়েছে বোল্ড এবং অ্যারোডাইনামিক ডিজাইন। এর পেছনের ডানার রেখাগুলো বেশ তীক্ষ্ণ এবং বিমান সদৃশ। গাড়িটি পরিচালিত হয় ৬.৫ লিটার ভি১২ ইঞ্জিন মাধ্যমে, যার ক্ষমতা ৭৪০ হর্সপাওয়ার। সীমিত-সংস্করণের এই গাড়িটি প্রতি ঘন্টায় ২২১ মাইল (৩৫৬ কিলোমিটার/ঘণ্টা)-এর গতি তুলতে সক্ষম। এর কার্বন ফাইবার বডি, উন্নত বায়ুগতিবিদ্যা সহ অন্যান্য প্রযুক্তি একে একচেটিয়া স্পোর্টস কারে পরিণত করেছে।
৮. বুগাটি কাইরন সুপার স্পোর্ট ৩০০+
ফরাসি অটোমোবাইল নির্মাতা সংস্থা বুগাটি অটোমোবাইলস এস.এ.এস এই দারুণ হাইপারকারটির স্রষ্টা। ২০১৯ সালে উৎপাদন হওয়া এই গাড়িটি বুগাটির সর্বোচ্চ গতিবেগের রেকর্ডকে স্মরণ করার জন্য ডিজাইন করা হয়েছিল। এটি ছুটতে পারে ঘণ্টায় ৩০০ মাইল (৪৮৩ কিলোমিটার/ঘণ্টা)। সুপার স্পোর্ট ৩০০+ এর মাত্র ৩০টি ইউনিট বানানো হয়েছিল। এগুলোর দাম বর্তমানে ৩ দশমিক ৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার; বাংলাদেশি টাকায় যা ৪২ দশমিক ৩ কোটি টাকার সমান।
স্পোর্টস কারটির মসৃণ এবং এরোডাইনামিক বৈশিষ্ট্য এর অদম্য গতিতে ছোটার জন্য সামঞ্জস্যপূর্ণ। এর রেকর্ড-ব্রেকিং ক্ষমতা এর বিলাসবহুল আভ্যন্তরীণ সজ্জা ও অত্যাধুনিক প্রযুক্তিতে দিয়েছে এক স্বতন্ত্র ভাব। শুধু তাই নয়, বুগাটি কাইরন সুপার স্পোর্ট ৩০০+ অটোমোবাইল শিল্পে উদ্ভাবনশীলতার এক মূর্ত প্রতীক।
৯. ল্যাম্বোরঘিনি সিয়ান
ল্যাম্বোরঘিনি প্রথমবারের মত বিশ্ববাসীর সামনে এই হাইব্রিড সুপারকারটি নিয়ে আসে ২০১৯ সালে। সে সময় শুধুমাত্র ৬৩টি ইউনিট বানানো হলেও, সেগুলোই এখন একচেটিয়াভাবে ভক্তদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। সিয়ানের বর্তমান দাম প্রায় ৩ দশমিক ৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার; বাংলাদেশি টাকায় যা ৩৯ কোটি টাকার সমান। গাড়িটি ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৩৫৫ কিলোমিটার (২২১ মাইল/ঘণ্টা) গতিতে ছুটতে পারে। সিয়ানের উদ্ভাবনী প্রযুক্তিগুলোর মধ্যে রয়েছে শক্তিশালী স্মার্ট ব্রেকিং এবং তাৎক্ষণিক বিদ্যুৎ সহায়তা প্রদানকারী সুপারক্যাপাসিটর। অনন্য ডিজাইন, হাইব্রিড পাওয়ারট্রেন সব মিলিয়ে সিয়ান ল্যাম্বোরগিনির শৈল্পিকতায় দিয়েছে অসামান্য বৈচিত্র্য।
১০. পাগানি হুয়ায়রা রোডস্টার বিসি
ইতালীয় গাড়ি নির্মাণ কোম্পানি পাগানি অটোমোবিলি এস.পি.এ-এর এক ব্যতিক্রমধর্মী সুপারকার এই হুয়ায়রা রোডস্টার বিসি। ২০১৯ সালে চালু করা এই ভার্সনটি হুয়ারা বিসি কুপের একটি ওপেন-টপ ভেরিয়েন্ট। প্রাথমিকভাবে তৈরি করা মাত্র ৪০টি ইউনিট বেশ সাড়া ফেলে দিয়েছে গাড়ির বাজারের নিয়মিত পর্যটকদের মধ্যে। বর্তমানে এর দাম প্রায় ৩ দশমিক ৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার (৩৭ দশমিক ৯ কোটি বাংলাদেশি টাকা)। এর হাল্কা বডিটি কার্বন ফাইবার ও উন্নত অ্যারোডাইনামিক্সে সমৃদ্ধ। গাড়িটির গতি ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৩৮৩ কিলোমিটারে (২৩৮ মাইল/ঘণ্টা) উঠতে পারে। অত্যাশ্চর্য নকশা ও ব্যতিক্রমী কর্মক্ষমতার কারণে এই রাজপথের তারকা ইতালিয়ান প্রকৌশল ও অটোমোবাইল শিল্পের এক অভিজাত প্রতিনিধি।