ট্রেন ব্রেকিংয়ে উৎপাদিত শক্তিতে উষ্ণ হোটেল!
সুইজারল্যান্ডের স্টুস ফানিকুলার ট্রেন বিশ্বের অন্যতম খাড়া পাহাড় বেয়ে ওঠানামা করে। ট্রেনটি ব্রেকিংয়ের সময় উৎপাদিত শক্তি দিয়ে পাহাড়ের উপরের একটি হোটেল উষ্ণ রাখা হয়। সুইজারল্যান্ডের স্টুসবান বিশ্বের সবচেয়ে খাড়া পাহাড়ি রুটে চলা ফানিকুলার ট্রেন। কেবল রেলওয়ে কারটিকে কোথাও কোথাও ১১০ শতাংশ গ্রেডিয়েন্টও অতিক্রম করতে হয়।
এটি সুইস শহর সুয়িৎস এবং সেখান থেকে ১৩০০ মিটার দূরে অবস্থিত উইন্টার রিসর্ট স্টুসের মধ্যে চলাচল করে। খাড়া ভূখণ্ডের কারণে ট্রেনটির প্রায়ই কড়া ব্রেক কষতে হয়। এতে যে শক্তি উৎপন্ন হয় তা সংগ্রহ সম্ভব। আর এই জ্বালানি ট্রেন লাইনের কাছের একটি হোটেল উষ্ণ রাখতে যথেষ্ট। শক্তি সংগ্রহের এই পদ্ধতির কারিগরি নাম হচ্ছে রিজেনারেটিভ ব্রেকিং৷ প্রকৌশলী রেনে কখ ট্রেনের ইঞ্জিন রুমে বিষয়টি ব্যাখ্যা করেছেন।
তিনি বলেন, ‘‘শুরুতে ট্রেনটির খাড়া ঢাল বেয়ে উঠতে জ্বালানির প্রয়োজন হয়। এরপর মাঝখানে কারগুলো একে অপরকে অতিক্রম করে। সেটা হচ্ছে টিপিং পয়েন্ট এবং সেখান থেকে এটিকে টেনে তোলা হয়। তার অর্থ হচ্ছে ইলেক্ট্রিক মোটরের প্রথমে শক্তি দরকার হয় এবং তারপর অর্ধেক পথ অতিক্রম করে এটি উৎপাদন শুরু করে। আর আমরা সেই বিদ্যুৎ পানি গরমে ব্যবহার করি।’
আর এর প্রভাব বিস্ময়করভাবে বেশি। ব্রেকিং এন্ড ওয়েস্ট হিট থেকে বছরে চার লাখ দশ হাজার কিলোওয়াট ঘন্টার শক্তি উৎপাদন হয়। একই পরিমাণ শক্তি উৎপাদনে অন্যথায় ৪১ হাজার লিটার হিটিং অয়েল পোড়াতে হতো। এই জ্বালানি হোটেলটি কাজে লাগায়। উৎপাদিত বিদ্যুৎ শক্তি প্লাগ-ইন টিক্যাটেলের মতোই পানি গরম করে। হোটেলটি স্টেশনের কাছেই অবস্থিত হওয়ায় সুবিধা হয়েছে।
ইঞ্জিনিয়ার এবং কেবল কার বিশেষজ্ঞ রেনে কখ্ বলেন, ‘‘কম দূরত্বের অর্থ হচ্ছে তাপের কম অপচয়। নির্মাণের কথা বিবেচনা করলে কাছাকাছি হওয়ায় সংযোগ তৈরিতে কম হস্তক্ষেপ করতে হয়েছে।’’
হোটেলটির সব কামরা এবং রান্নাঘরে গরম পানি পৌঁছে যায়। এটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মারসেল ন্যয়েহাউস পাহাড়ি রেলপথ থেকে উৎপাদিত তাপ কাজে লাগাতে পেরে খুশি। কারণ জ্বালানির খরচ ক্রমশ বাড়ছে।
মারসেল ন্যয়েহাউস বলেন, ‘‘স্টুসবানের কাছ থেকে আমরা কম খরচে বিদ্যুৎ কিনতে পারি। আর যে টাকা আমরা দেই তা সরাসরি ট্রেনের পেছনেই ব্যয় হয়। ফলে অর্থ স্থানীয় পর্যায়েই থাকে। অর্থাৎ ছোট্ট একটি বৃত্তাকার অর্থনীতি চালু রয়েছে এখানে। আমাদের সবার জন্য ভালো এটি।’
সুইজারল্যান্ডের অনেক হোটেল এবং রেস্তরাঁ এরকম স্টেশনের কাছে অবস্থিত। এবং সেগুলোর অনেক জ্বালানি প্রয়োজন। ফলে সেখানে আরো প্রকল্পের চাহিদা রয়েছে। ল্যুকার্ন ইউনিভার্সিটি অফ এপ্লাইড সায়েন্সের প্রকৌশলী অলিভিয়ার ডুভানেলের মতে অন্যান্য স্থানেও টেকসই ধারণার প্রয়োগ করা যেতে পারে।
ল্যুকার্ন ইউনিভার্সিটি অফ এপ্লাইড সায়েন্সের তড়িৎ প্রকোশলী অলিভিয়ার ডুভানেল বলেন, ‘‘অ্যাপ্লিকেশনটি নিজে ততটা জটিল নয়, কিন্তু কেবল কার প্রযুক্তি এবং ভবনের প্রযুক্তির মধ্যে ভালো সমন্বয় থাকতে হবে৷ যদি সেটা হয় তাহলে বড় প্রকল্প নেয়া সম্ভব।’