ইতিহাসের সাক্ষী বিরুলিয়া জমিদারবাড়ি

Looks like you've blocked notifications!
ইতিহাস-ঐতিহ্য বহনকারী বিরুলিয়া  জমিদারবাড়ি। ছবি: সাদিক খান

ঢাকার অদূরে তুরাগ তীরের গ্রাম বিরুলিয়া। জমিদার রজনীকান্তের সুদৃশ্য বাড়িসহ আরো বিখ্যাত কয়েকটি প্রাচীন স্থাপনার জন্য গ্রামটি বিখ্যাত। ইতিহাসের সাক্ষী কিংবা প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন দেখতে অনেকেই দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছুটে গেলেও বিরুলিয়ার ইতিহাস-ঐতিহ্য বহনকারী জমিদার বাড়িটি একপ্রকার লোকচক্ষুর অন্তরালেই রয়ে গেছে।

বাইরে থেকে বোঝা না গেলেও গ্রামে ঢুকতেই চোখে পড়ে জমিদার রজনীকান্তের জমিদারবাড়ি। লালচে ধূসর বাড়িটির বিভিন্ন জায়গায় খসে পড়েছে পলেস্তারা, বের হয়ে এসেছে ইট-সুরকি। প্রায় শত বছর বয়সী বাড়িটি কালের সাক্ষী এখনও দাঁড়িয়ে আছে জীর্ণশীর্ণ অবয়ব নিয়ে। জমিদার বাড়ি সংলগ্ন ভবন ছিল ১৪-১৫টি। কালের পরিক্রমায় এখন টিকে আছে ৭-৮টি দৃষ্টিনন্দন ভবন। প্রাচীন বিখ্যাত নানা কাঠামোর স্থাপনায় সমৃদ্ধ বিরুলিয়া গ্রাম এখনও মনোমুগ্ধকর সৌন্দর্য ও আভিজাত্য বহন করে চলছে।

প্রচলিত আছে, প্রায় ১০০ বছর আগে জমিদার নলিনী মোহন সাহার কাছে থেকে ৮ হাজার ৯৬০ টাকা ৪ আনার বিনিময়ে রজনীকান্ত ঘোষ বাড়িটি কিনেছিলেন। পুরাণ ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় তার আরো কয়েকটি বাড়ি ছিল। যা ১৯৬৪ সালের দাঙ্গার সময় অন্যের দখলে চলে যায়। এরপর থেকে বিরুলিয়ার এই বাড়িটি ছাড়া জমিদার রজনীকান্তের আর কোনো সম্পত্তি অবশিষ্ট নেই।

ইতিহাস-ঐতিহ্য বহনকারী বিরুলিয়া  জমিদারবাড়ি। ছবি: সাদিক খান

মন্দির লাগোয়া তিনতলা জমিদারবাড়িটি বণিকবাড়ি নামেও পরিচিত ছিল। এটিই ছিল জমিদার রজনীকান্তের আবাসঘর। নকশাবহুল এই বাড়িতে আছে ঝুল বারান্দা। ইট বিছানো রাস্তা, সারা বাড়ি গাছে ছাওয়া। বাড়ির দেয়াল ফুল, পাখি, লতাপাতার নকশায় সজ্জিত। প্রমাণ সাইজের মোটা মোটা কাঠের দরজা। একটু পা চালিয়ে ছাদে উঠে গেলে প্রাণ জুড়িয়ে যাওয়া সৌন্দর্য চোখে পড়ে। বাড়ির দেয়ালের গায়ে কোথাও কোথাও শ্রী শ্রী রাধাকৃষ্ণ খোদাই করা। আগে বাড়িতে ঢাল, তলোয়ার ও জমিদারদের ব্যবহারের নানা জিনিস ছিল— যা বহুদিন আগে চুরি হয়ে গেছে।

জমিদার বাড়ির আশেপাশের আরো কয়েকটি ভবন। সেখানে একসময় বসতি ছিল আদি ঢাকেশ্বরী বস্ত্রালয়ের কর্ণধারের পিতৃপুরুষদের। ভবনগুলোতে বসবাস করতেন তারকচন্দ্র সাহা, গোপিবাবু, নিতাইবাবু, রজনী ঘোষ প্রমুখ ব্যবসায়ী। বংশী, ধলেশ্বরী ও তুরাগ নদী পথে তাঁরা ব্যবসা করতেন। তারা এখানে বসে নিলাম কিনতেন আর পরিচালনা করতেন জমিদারীর। 

এখনো কালের সাক্ষী হিসেবে গ্রামের শেষ মাথায় রয়েছে শতবর্ষী একটি বিখ্যাত বটগাছ। এই বটগাছটি ছবি বড় করে ঝোলানো আছে কলকাতায় অবস্থিত ভারত তথা বিশ্বব্যাপী সমাদৃত আদি ঢাকেশ্বরী বস্ত্রালয়ের প্রধান শোরুমে।

ইতিহাস-ঐতিহ্য বহনকারী বিরুলিয়া  জমিদারবাড়ি। ছবি: সাদিক খান

রজনীকান্ত ছিলেন বিরুলিয়ার বিখ্যাত জমিদার। প্রতি বৈশাখী ও দুর্গাপূজায় দশমী মেলা বসাতেন নিজ বাড়ির আঙিনায়। তার বংশধররা এখনো বেঁচে আছে। এখনও শতবর্ষী বটবৃক্ষের ছায়ায় প্রতি পহেলা বৈশাখে বসে মেলা। দূরদূরান্ত থেকে নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ ছুটে যান ঐতিহ্যবাহী মেলাটি ঘুরে দেখতে।

বর্তমানে সংস্কারের অভাবে ভবনগুলোতে শ্যাওলা ধরেছে, বটগাছসহ বিভিন্ন ঝোপ-ঝাড়ের সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয় লোকজন নিজের প্রয়োজন মতো ব্যবহার ও বসবাস করে বলে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী জমিদার বাড়িটি। বাড়িটি সংরক্ষণে সরকারের এগিয়ে আসা সময়ের দাবী।

যেভাবে যাবেন

রাজধানী ঢাকার যেকোনো স্থান হতে প্রথমে মিরপুর ১ নাম্বার সেক্টর চলে আসুন। সেখান থেকে আলিফ কিংবা মোহনা পরিবহণের বাসে চড়ে সরাসরি বিরুলিয়া ব্রিজ যেতে পারবেন। ভাড়া জনপ্রতি ২০ টাকা। এছাড়া মিরপুর ১ থেকে বিরুলিয়া ব্রিজগামী লেগুনা পাওয়া যায়। লেগুনা ভাড়া নিবে জনপ্রতি ২০ টাকা। বিরুলিয়া ব্রিজ থেকে যে কাউকে বললে বিরুলিয়া জমিদার বাড়ি দেখিয়ে দিবে।

ইতিহাস-ঐতিহ্য বহনকারী বিরুলিয়া  জমিদারবাড়ি। ছবি: সাদিক খান

এছাড়া আব্দুল্লাহপুর, বাইপাইল কিংবা আশুলিয়া থেকে মিরপুর বেড়িবাঁধ এসে মিরপুর ১ গামী গাড়িতে করে বিরুলিয়া ব্রিজ যাওয়া যায়। বিরুলিয়া ব্রিজ থেকে জমিদারবাড়ি যাবার রাস্তাটি খুবই সরু আর ভাঙাচোরা। রিকশায় যাওয়া যায়। তবে হেঁটে গেলে কয়েক মিনিটেই আরামে পৌঁছে যেতে পারবেন।

কোথায় খাবেন?

বিরুলিয়া জমিদার বাড়ির আশেপাশে কোনো খাবারের হোটেল কিংবা রেস্তোরাঁ নেই। খাওয়াদাওয়ার জন্য রিকশা কিংবা অটোরিকশায় চলে যেতে হবে বিরুলিয়া বাজারে। সেখানে স্বল্পমূল্যের কিছু খাবারের দোকান রয়েছে। তবে খাবারের মান খুব একটা ভালো নয়। সবচেয়ে ভালো হয় বিরুলিয়া যাবার পথে কোথাও খাওয়াদাওয়া করে নিলে। অথবা ভ্রমণ শেষে ফেরার পথে পছন্দসই হোটেলে খাওয়াদাওয়া করতে পারেন।