ঘুরে আসুন চুনতি অভয়ারণ্যে
কর্মব্যস্ত জীবন যখন হাজার কাজের চাপে হাঁপিয়ে ওঠে, তখন একটু বিশ্রামের স্বাদ নিতে মন চাইতেই পারে। সবুজের বুকে, সমুদ্রের ঢেউয়ে, উড়ে বেড়াতে চাইবে পাহাড়ের বুকে, কিংবা মেঘের ভেলায় ভেসে বেড়াতে। আর সেই কর্মক্লান্তি দূর করতে আপনি ঘুরে আসতে পারেন চট্টগ্রাম জেলার লোহাগাড়া উপজেলায় অবস্থিত চুনতি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য থেকে।
যা দেখবেন
বন্দরনগরী চট্টগ্রাম থেকে প্রায় ৭০ কিলোমিটার দূরে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের পাশেই এ বনাঞ্চলের অবস্থান। ১৯৮৬ সালে লোহাগাড়া, সাতকানিয়া, বাঁশখালী, চকরিয়া এলাকার সাতটি সংরক্ষিত বনাঞ্চলের প্রায় ১৯ হাজার ১৭৭ একর জায়গা নিয়ে ঘোষণা করা হয় চুনতি সংরক্ষিত এলাকা। অভয়ারণ্যটি প্রধানত ক্রান্তীয় মিশ্র-চিরহরিৎ বনভূমি, যা হালকা থেকে খাড়া ঢালবিশিষ্ট পাহাড়ি অঞ্চলে অবস্থিত এবং চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত বিস্তৃত গর্জন বেল্টের অন্তর্গত। প্রায় ৪৭৭ প্রজাতির ১২ লাখেরও বেশি গাছ রয়েছে এ বনে, যার মধ্যে প্রায় ১৫ প্রজাতির গাছ ইতিমধ্যেই বিলীন হয়ে গেছে।
এ বনে রয়েছে বেশ কিছু শতবর্ষী গর্জন গাছ। এ ছাড়া শাল, সেগুন, আকাশমণি, গর্জন, বট, হারগোজা, চাঁপালিশ, হরিতকি, বহেরা, বাঁশ, আসাম লতা, ছন প্রভৃতি উদ্ভিদ বেশি দেখা যায়। এ বনাঞ্চলের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য প্রাণী এশীয় হাতি। বন্য হাতিসহ নানান প্রাণীর নিরাপদ আবাসস্থল চুনতি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য। চুনতি বনে সাধারণত দেখা মেলে লালমুখো বানর, মুখপোড়া হনুমান, খ্যাঁকশিয়াল, শজারু, মায়াহরিণ, বন্য শুকর, শিয়াল, নানা রকম গিরগিটি, সাম্বারসহ অন্যান্য প্রাণীর।
এ বনে সাপের মধ্যে কালান্তর, দাঁড়াশ, গোখরা, অজগর, লাউডগা ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। নানান জাতের পাখিরও অভয়াশ্রম এ বনাঞ্চল। এ বনের বাসিন্দার উল্লেখযোগ্য পাখপাখালি হলো বনমোরগ, লাল মৌটুসি, নীলকণ্ঠী, পাহাড়ি ময়না, মথুরা, ঘুঘু, ফিঙে, কাঠঠোকরা, ধনেশ, টিয়া, বুলবুলি ইত্যাদি।
এ বনাঞ্চল ও পার্শ্ববর্তী এলাকা ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় মুক্তিযোদ্ধাদের পুনর্গঠন স্থান হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ছিল। ১৯৮৬ সালে সাত হাজার ৭৬৪ হেক্টর সংরক্ষিত বনভূমি নিয়ে চুনতি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। চলতি পথে ঝিঁ ঝিঁ পোকার ক্লান্তিবিহীন ডাক এক অন্যরকম পরিবেশ সৃষ্টি করে। চুনতি অভয়ারণ্যের ভেতর আছে তিনটি হাঁটার পথ বা ট্রেইল। ছোট, মাঝারি ও বড় পথ তিনটিতে হাইকিং করা যাবে যথাক্রমে আধ ঘণ্টা, ১ ঘণ্টা ও ৩ ঘণ্টা হিসেবে। এ পথেও দেখা মিলতে পারে বন্যহাতিসহ নানা বন্যপ্রাণীর। দুপাশে বনের পথে হেঁটে হেঁটে বড় একটি টিলা পার হওয়ার পর ঢালু খাদ। তারপর আবার পাহাড়ের ওপরের দিকে পথ চলে গেছে। চমৎকার এই পথ দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে মন চাইবে হারিয়ে যেতে। অভয়ারণ্য এলাকায় বনপুকুর, প্রাকৃতিক গর্জন বনাঞ্চল, এশীয় বন্যহাতির বিচরণক্ষেত্র, গয়ালমারা প্রাকৃতিক হ্রদ, বনপুকুর ফুটট্রেইল, জাঙ্গালিয়া ফুটট্রেইল, গোলঘর, স্টুডেন্ট ডরমিমে, নেচার কনজারভেশন সেন্টার, গবেষণা কেন্দ্র, ইকোকর্টেজসহ বিভিন্ন ইকো ট্যুরিজম স্থাপন করা হয়েছে পর্যটকদের জন্য।
যাওয়ার উপায়
ঢাকার ফকিরাপুল, কমলাপুর, সায়দাবাদ ইত্যাদি জায়গা থেকে কক্সবাজারগামী বাসে চড়ে নামতে হবে লোহাগাড়া বাজার বাস স্টেশনে। ঢাকা থেকে কক্সবাজারগামী বিভিন্ন এসি ও নন-এসি বাস সার্ভিস রয়েছে। এদের মধ্যে সৌদিয়া, এস আলমের মার্সিডিজ বেঞ্জ, গ্রিন লাইন, হানিফ এন্টারপ্রাইজ, শ্যামলী পরিবহন, সোহাগ পরিবহন ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। ভাড়া পড়বে জনপ্রতি ৯০০ থেকে দুই হাজার টাকা পর্যন্ত। এরপর লোহাগাড়া বাজার থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে চুনতি অভয়ারণ্যে যেতে হবে থ্রি হুইলারে। এ ছাড়া চট্টগ্রামের বহদ্দারহাট ও অক্সিজেন মোড় থেকেও কক্সবাজারের বাসে চড়ে লোহাগড়া নামতে পারেন। ভাড়া ১৫০ থেকে ২০০ টাকা।