চলুন যাই মাধবকুণ্ড জলপ্রপাতে
মাধবকুণ্ড ঝর্ণা, যা বাংলাদেশের সুউচ্চ জলপ্রপাত হিসেবে পরিচিত। মাধবকুণ্ডের নাম নিয়ে নানা কথা প্রচলিত আছে। অনেক দিন ধরে পরিকল্পনা করছিলাম মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত দেখতে যাব। তাই আমরা সিলেট থেকে বড়লেখার অভিমুখে মাধবকুণ্ড জলপ্রপাতের পানে ছুটলাম। অবশেষে আমরা উপস্থিত হলাম মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত এলাকায়। এরপর গাড়ি থেকে নেমে আমরা এগিয়ে যেতে লাগলাম। টিকেট করে নিলাম। আগে মেঠোপথ থাকলেও এখন পাকা রাস্তা। আঁকাবাঁকা পথ পেরিয়ে আমরা এগিয়ে চলছি। এবার কানে ভেসে আসতে লাগল শোঁ শোঁ শব্দ। অল্প সময়ের মধ্যে দৃশ্যমান হলো কাঙ্ক্ষিত মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত।
এই ছড়া মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত হয়ে নিচে পড়ে হয়েছে মাধবছড়া। সাধারণত একটি মূলধারায় পানি সব সময়ই পড়তে থাকে, বর্ষা এলে মূলধারার পাশেই আরেকটা ছোট ধারা তৈরি হয় এবং ভরা বর্ষায় দুটো ধারাই মিলেমিশে একাকার হয়ে যায় পানির তীব্র তোড়ে। জলের এই বিপুল ধারা পড়তে পড়তে নিচে সৃষ্টি হয়েছে বিরাট কুণ্ডের। এই মাধবছড়ার পানি পশ্চিম দিকে প্রবাহিত হতে হতে গিয়ে মিশেছে হাকালুকি হাওরে। মাধবকুণ্ড ঝর্ণা থেকে ১৫-২০ মিনিটের হাঁটা দূরত্বে রয়েছে আরেকটি ঝর্ণা, যা পরি কুণ্ড ঝর্ণা নামে পরিচিত। আমরা কুণ্ডের জলে পা ডোবালাম। সে এক অন্যরকম অনুভূতি। এরপর আমরা গেলাম পাশের শিবমন্দিরে, অনেক পুরোনো এই মন্দির। কথিত আছে, মহাদেব বা শিবের পূর্বনাম মাধব এবং এর নামানুসারে তার আবির্ভাব-স্থানের নাম মাধবকুণ্ড।
যাবেন কীভাবে
ঢাকার সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে ঢাকা-বিয়ানীবাজার রুটের অনেক ভালো মানের চেয়ারকোচ বাস আছে। এদের মধ্যে আছে রূপসী বাংলা এক্সপ্রেস, শ্যামলী। তা ছাড়া এনা পরিবহনের বাসও আছে। ভাড়া নেবে ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকা। আপনি এভাবে সরাসরি বাসে এলে বড়লেখার একটু আগে কাঁঠালতল নামক জায়গায় নামবেন। এখান থেকে মাধবকুণ্ড বেশি দূরে নয়। তবে আপনাকে মাধবকুণ্ড চূড়ার কাছে যেতে হলে এখান থেকে অবশ্যই সিএনজিচালিত অটোরিকশা বা রিকশা নিতে হবে। জনপ্রতি গেলে সিএনজিতে ভাড়া পড়বে ১৫-২০ টাকা, আর আপনি পুরো ভাড়া করলে ১০০ টাকার কাছাকাছি নেবে। এ ক্ষেত্রে অবশ্যই আগে থেকে দরদাম করে নেবেন।
তা ছাড়া আপনি চাইলে কমলাপুর থেকে ট্রেনেও আসতে পারেন। এ ক্ষেত্রে আপনাকে ঢাকা-সিলেটের আন্তনগর ট্রেনে উঠতে হবে এবং কুলাউড়া নামক স্টেশনে নামতে হবে। ট্রেনগুলোর মধ্যে আছে জয়ন্তিকা, পারাবত, উপবন। উপবন এক্সপ্রেস কমলাপুর থেকে রাত ১০টায় ছাড়ে আর কুলাউড়ায় এসে পৌঁছায় ভোর ৫টায়। ভাড়া নেবে ৩০০ থেকে ৮০০ টাকা। কুলাউড়া থেকে মাধবকুণ্ডের দূরত্ব প্রায় ৩৫ কিলোমিটার, আপনি এখান থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশা রিজার্ভ করে সরাসরি মাধবকুণ্ডে যেতে পারেন। ভাড়া পড়বে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা।