জঙ্গলের মঙ্গল জানাবে ‘সুরঞ্জনা’

Looks like you've blocked notifications!
বরগুনার ‘সুরঞ্জনা’ ইকোপার্ক। ছবি: সোহাগ হাফিজ

এঁকেবেঁকে এগিয়েছে একটি কাঠের তৈরি পথ। সেই পথে হেঁটে যেতে যেতে চোখ আটকাবে সামনের সবুজ একটি অরণ্যে। নোনা জলের স্পর্শে বেড়ে ওঠা সেই জঙ্গলটির মঙ্গল খোঁজা যাবে সরেজমিনে। পাশাপাশি পাখির ডাক আর শীতল বাতাস আপনার সঙ্গী হবে। এ যেন প্রকৃতির এক মায়াবী সান্নিধ্য। এই প্রকৃতির-প্রশান্তি মিলবে বরগুনার ‘সুরঞ্জনা’ ইকোপার্কে।

সাগরের কূলঘেঁষা একটি ছোট্ট জেলার নাম বরগুনা। সাগর-নদী-বনের মিলনে অপরূপ সৌন্দর্য সৃষ্টি হয়েছে এ জনপদে। জোয়ার-ভাটার চিরায়ত চলন আর ম্যানগ্রোভ বন বরগুনাকে করেছে প্রাণবন্ত। সেই নদী আর ম্যানগ্রোভ বনকে পর্যটকের সান্নিধ্যে আনার প্রচেষ্টার বহিঃপ্রকাশ ‘সুরঞ্জনা’। ‘জঙ্গলে মঙ্গল’ স্লোগানকে সামনে রেখে ২০২১ সালের ২০ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয় এই ভ্রমণ কেন্দ্রটির।

বহমান বিষখালী আর খাকদোন নদীর মিলনস্থলে সুরঞ্জনার অবস্থান। বন-বনানীর কোলে গড়ে তোলা হয়েছে এই সুপরিকল্পিত পর্যটনকেন্দ্রটি। দর্শনার্থীদের সুবিধার কথা মাথায় রেখে এখানে নির্মিত হয়েছে আঁকাবাঁকা ফুট ট্রেইলটি (পায়ে হাঁটাপথ)। সে পথে হাঁটতে হাঁটতে চলে যেতে পারবেন গহীন থেকে গহীনে। ক্লান্ত হয়ে গেলে বসার জন্য আছে বিশ্রামঘর, দোলনা। ক্লান্ত সেই শরীরটা যখন চা-কফি খুঁজবে, তাও পেয়ে যাবেন নির্ধারিত টংঘরে।

নোনা জল আর কাদামাটি এখানে পরম যত্নে লালন করে চলেছে হাজারো গাছ। সেই গাছগুলো সমৃদ্ধ অক্সিজেন গ্রহণের অনুভূতি দেবে। বনে দেখা যাবে কেওড়া, করমজা, গোল, ছৈলাসহ নানা প্রজাতির গাছ। এ যেন আর্টপেপারে নরম তুলিতে আঁকা কোনো দক্ষ শিল্পীর ছবি। সবুজ রঙে রাঙানো হয়েছে সেই ছবিটিকে। প্রকৃতির সেই মায়াকুঞ্জে বসত করে কাঠবিড়ালি, শজারু, শেয়াল, গুইসাপ, বেজি, কাকড়াসহ প্রায় ৩০ প্রজাতির বন্যপ্রাণী। দেখা যাবে, প্রায় ৯০ প্রজাতির পাখি।

এ প্রকৃতির পরতে পরতে ছড়িয়ে আছে নান্দনিক সৌন্দর্য। সেখানে দূর পথ পাড়ি দিয়ে উন্মুক্ত বাতাস এসে জড়িয়ে ধরে। যেন বাতাসের ছন্দ মনের সঙ্গে পাঞ্জা ধরে। মন ও প্রকৃতি একে অপরের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে, কে কাকে কতোটা ভালোবাসতে পারে। 

যাদের জন্য ‘সুরঞ্জনা’

শীতল বাতাসে গা ভাসিয়ে যারা প্রকৃতিকে উপভোগ করতে চান, তাদের জন্য সুরঞ্জনা। এছাড়া, অ্যাডভেঞ্চার প্রিয় পর্যটকরা এখানে আসেন। মায়াবী প্রকৃতির সান্নিধ্যে একটুখানি সময় কাটাতে এখানে প্রতিদিন আসছে পর্যটকরা। ছুটে আসছে শিশু, যুবক, নারীসহ সব বয়সের মানুষ। নবদম্পতি কিংবা প্রেমিক-প্রেমিকা মিলে সময় পেলে বেড়িয়ে আসেন এই ইকোপার্ক থেকে। দু-চারজন একান্ত আপনজন নিয়ে জন্মদিন পালন করতে অনেকেই ছুটে যান সেখানে। নদীপাড়ে দাঁড়িয়ে সূর্যাস্ত দেখার অন্যতম জায়গা এটি। সূর্যাস্তের আলোয় দর্শনার্থীরা নিজের মনকে রাঙিয়ে তোলেন স্বপ্নরঙ্গে।

যাতায়াত

ঢাকার সায়েদাবাদ ও গাবতলী থেকে সরাসরি বাসে করে বরগুনা যাওয়া যাবে ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা ভাড়ায়। অথবা লঞ্চে যাওয়া যাবে বরগুনা। এ ক্ষেত্রে দুজনের কেবিনের ভাড়া প্রায় ৩০০০ টাকা, এবং একজনের কেবিন ভাড়া ১৬০০ টাকা। ডেকে গেলে ভাড়া পড়বে ৪০০ টাকা। এরপর লোকাল যানবাহনে গন্তব্যে।

থাকা- খাওয়া

থাকার জন্য বরগুনায় রয়েছে একাধিক আবাসিক হোটেল। সহজেই মিলবে খাওয়ার জন্য নানা মানের রেস্তোরাঁ। সুরঞ্জনা কর্তৃপক্ষকে বললে যে কোনো বিষয়ে তারাও পর্যটকদের সহায়তা করবে।