দেখুন পৃথিবীর সুন্দর কিছু রেল স্টেশন

‘ট্রেন’ বিশ্বব্যাপী ভ্রমণপ্রেমিদের কাছে সেরা বন্ধু হিসেবে বিবেচিত। যেকেনো শহরের সৌন্দর্য অন্বেষণের অন্যতম মাধ্যম ট্রেন। ফলে অনেক দেশেই রেল ও রেল স্টেশনকে অন্যতম অনুসঙ্গ হিসেবে চিন্তা করা হয়। পৃথিবীতে বেশকিছু রেলস্টেশন রয়েছে যা ভ্রমণপ্রেমিদের কাছে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত।

১। ছত্রপতি শিবাজী স্টেশন, মুম্বাই (ভারত)
ছত্রপতি শিবাজি স্টেশন ভারতের মুম্বাই শহরের একটি আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র। স্টেশনটি ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়েছে। এই স্টেশনটি ১৮৮৮ সালের মে মাসে চালু হয়। ভারত ছাড়াও বাইরের দেশের ভ্রমণকারীরা একবার হলেও স্টেশনটি দেখতে ছুটে যান। মহারাষ্ট্র সরকার এটিকে একটি ঐতিহাসিক স্মৃতিস্তম্ভ হিসেবে মনোনীত করেছে। রাতের বেলা এই ছত্রপতি শিবাজি স্টেশনটি নানা রঙের আলোতে আলোকিত হয়ে ওঠে। আর তা দেখতে ছুটে আসেন অনেক মানুষ। বলিউডের অনেক সিনেমাতেও এই স্টেশনটি দেখানো হয়েছে।

২।গ্রান্ড সেন্ট্রাল টার্মিনাল, নিউ ইয়র্ক (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র)
বিশ্বের অন্যতম সুন্দর রেল স্টেশন হিসেবে বিবেচিত গ্রান্ড সেন্ট্রাল টার্মিনাল। নিউ ইয়র্ক সিটির মিডটাউন ম্যানহাটনের ৪২ নম্বর রোড পার্ক এভিনিউতে অবস্থিত এই যাত্রী রেল স্টেশনটি। এটি নিউইয়র্ক সিটির একটি ল্যান্ডমার্ক হিসেবে বিবেচিত। স্টেশনটি অসংখ্য জনপ্রিয় হলিউড মুভিতে স্থান পেয়েছে। এর সুন্দর স্থাপত্য ডিজাইন এটিকে বিশ্বব্যাপী আলোচনায় নিয়ে এসেছে। বিংশ শতাব্দীতে এই স্টেশনটি নির্মিত হয়। বেশ অসাধারণ কিছু পেইন্টিং চেখে পড়বে স্টেশন জুড়ে।

৩। সেন্ট প্যানক্রাস ইন্টারন্যাশনাল স্টেশন, লন্ডন (যুক্তরাজ্য)
সেন্ট প্যানক্রাস ইন্টারন্যাশনাল স্টেশনটি লন্ডনের সেরা রেল স্টেশনের মধ্যে একটি। ১৮৬৮ সালে চালু হয় এই আন্তর্জাতিক ট্রেন স্টেশনটি। যার সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ হবে যে কেউ। ভিক্টোরিয়ান যুগের একটি প্রকৌশল বিস্ময় হিসেবে বিবেচিত এই স্টেশনটি। এই রেল স্টেশনটির স্থপতি জর্জ গিলবার্ট স্কট ও উইলিয়াম হেনরী বার্লো। আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারের পাশাপাশি বেশ কিছু বিনোদনেরও সুযোগ রয়েছে এই স্টেশনে।
৪। রামসেস স্টেশন, কায়রো (মিশর)
মিশরীয় যেকোনো জিনিস থেকে সৌন্দর্য আশা করা যেন স্বাভাবিক ব্যাপার। কায়রোর রামসেস স্টেশনটি তেমনই একটি সৌন্দর্যের উদাহরণ। এটি মিশরীয় প্রকৌশল বিস্ময়ের একটি অংশ। রামসেস স্টেশনটি মিশরের রাজধানী কায়রোর প্রধান রেল স্টেশন। শহরটি যেমন সুন্দর, রেল স্টেশনটিও তেমনই অসাধারণ। মিশরের দ্বিতীয় ফারাও রামসেসের নামে (যিনি রামেসিস দ্য গ্রেট নামেও পরিচিত) স্টেশনটির নামকরণ করা হয়েছে।
৫। কুয়ালালামপুর স্টেশন, কুয়ালালামপুর (মালয়েশিয়া)
ঔপনিবেশিক এবং স্থানীয় স্থাপত্য শৈলীর একটি সুন্দর মিশ্রণ, কুয়ালালামপুর স্টেশনটি। দুর্দান্ত তার সম্মুখভাগের কারুকাজ। মূলত এই কারুকাজের জন্যই স্টেশনটি বিখ্যাত হয়ে উঠেছে। এটি কাচ এবং লোহার গম্বুজ বিশিষ্ট। কুয়ালালামপুরের একটি দর্শনীয় স্মৃতিস্তম্ভ হিসেবে স্বীকৃত এই ভবনটি।

৬। কানাজাওয়া স্টেশন, ইশিকাওয়া (জাপান)
এটি জাপানের ইশিকাওয়া অঞ্চলের প্রধান স্টেশন। দৈনিক অসংখ্য উচ্চ গতির ট্রেন এ স্টেশনে আসা-যাওয়া করে। স্টেশনের আধুনিক স্থাপত্য দেখে স্তম্ভিত হয়ে যায় যে কেউ। একটি বিশাল কাচের গম্বুজ এবং একটি কাঠের গেট এই স্টেশনটির সৌন্দর্য বাড়িয়ে দিয়েছে কয়েকগুন। ১৮৯৮ সালের ১ এপ্রিল এটি উদ্বোধন হয়। যার ট্র্যাকের সংখ্যা সাতটি। স্টেশনটি পশ্চিম জাপান রেলওয়ে সংস্থা ও বেসরকারি রেলওয়ে অপারেটর হোকুরিকু দ্বারা পরিচালিত।

৭। হেলসিঙ্কি সেন্ট্রাল স্টেশন (ফিনল্যান্ড)
ফিনল্যান্ডের হেলসিংকির এই রেলওয়ে স্টেশনটি তার সুন্দর স্থাপত্য নান্দনিকতার জন্য বিখ্যাত। স্টেশনের ভেতরে দেয়ালে দেয়ালে সুন্দর পেইন্টিং রয়েছে। আর রয়েছে বিশাল একটি ক্লক টাওয়ার। এর একটি আকর্ষণীয় ইতিহাসও রয়েছে। লোকেরা বিশ্বাস করত যে, ঘড়িটি এক মিনিট দেরিতে সেট করা হয়েছিল। যাতে যাত্রীরা সময়মতো ট্রেন ধরতে পারে। পরবর্তীতে, এটি কেবল একটি মিথ হিসেবে পরিণত হয়েছে।

৮। হায়দারপাসা স্টেশন, ইস্তাম্বুল (তুরস্ক)
তুরস্কের এই স্টেশনটি ১৯০৬ সালে প্রতিষ্ঠিত। এটি অটোমান সাম্রাজ্য এবং জার্মানির মধ্যে বন্ধুত্বের প্রতীক ছিল। নবজাগরণের নিখুঁত স্থাপত্য প্রদর্শন করে স্টেশনটি। ২০১২ সাল পর্যন্ত তুরস্ক এবং মধ্য প্রাচ্যের দেশগুলোতে যাওয়ার জন্য ট্রেনগুলো ছাড়ত এখান থেকে। স্টেশনটি ছিল একটি প্রধান আন্তনগর, আঞ্চলিক এবং কমিউটার রেল হাব। এটিকে বলা হতো তুরস্কের ব্যস্ততম রেল স্টেশন। পরে ২০১৩ সালের ১৯ জুন থেকে স্টেশনে ট্রেন পরিষেবা স্থগিত করা হয়। স্টেশন ভবনে এখনও রাজ্য রেলওয়ের সদর দপ্তর রয়েছে।

৯। ডানেডিন স্টেশন, ডানেডিন (নিউজিল্যান্ড)
ডানেডিন স্টেশনটি নিউজিল্যান্ডের অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। এ দেশের ফটোগ্রাফারদের অন্যতম আকর্ষণের জায়গা এটি। স্টেশনটি ১৯০৬ সালে নির্মিত হয়। এরপর থেকেই এটি নিউজিল্যান্ডের ব্যস্ততম স্টেশনগুলোর মধ্যে একটি।

১০। আমস্টারডাম সেন্ট্রাল স্টেশন (নেদারল্যান্ডস)
বিশ্বের রেল স্টেশনগুলোর মধ্যে চমৎকার আরেকটি প্রকৌশল বিস্ময় নেদারল্যান্ডের আমস্টারডাম সেন্ট্রাল স্টেশন। যা ১৯ শতকে নির্মিত হয়েছিল। আমস্টারডাম সেন্ট্রাল স্টেশন হল নেদারল্যান্ডসের বৃহত্তম রেলওয়ে স্টেশন এবং ইউরোপের একটি জনপ্রিয় রেলওয়ে কেন্দ্র। এই স্টেশনটি তিনটি কৃত্রিম দ্বীপ এবং আট হাজারটি কাঠের স্তম্ভের উপর দাঁড়িয়ে আছে । এখান থেকে আপনি প্যারিস, লন্ডন, ব্রাসেলস, এন্টওয়ার্প, বার্লিন, ফ্রাঙ্কফুর্টে যাওয়ার সরাসরি ট্রেন পেতে পারেন। এটি আমস্টারডামে একটি অদম্য আকর্ষণ হিসেবে বিবেচিত।
সূত্র : টাইমস অফ ইন্ডিয়া