পাংথুমাই : এক অলস দুপুরের গল্প

Looks like you've blocked notifications!

যদি ভালোবাসেন নীরব কোনো নদী, তার টলটলে শীতল জল, পাহাড়ের নির্জনতা আর একই সঙ্গে শুনতে ঝর্ণার গান, বসে-বসে, সময় নিয়ে উপভোগ করতে, তবে সিলেটের পাংথুমাই আপনার জন্য দারুণ একটা জায়গা হতে পারে কোনো এক অলস দুপুর কাটানোর জন্য।

 

সেখানে গিয়ে চুপচাপ বসে থাকতে পারেন সবুজ ঘাসের মিহি গালিচায়, একটু নিচে নেমে ঠাণ্ডা পানিতে ডুবিয়ে রাখতে পারেন পা-দুখানি, গাছের ছায়ায় বসে তাকিয়ে থাকতে পারেন ছোট্ট পিয়াইন নদীর ঢেউহীন জলের ওপাশের অরণ্য আর ঠায় দাঁড়িয়ে থাকা পাহাড়ের দেয়ালে-দেয়ালে। প্রতিটি পাহাড়ের ভাঁজে-ভাঁজে দেখতে পারবেন সাদা মেঘের খেলা। হয়তো ঝুপ করে নামতে পারে এক পশলা বৃষ্টি, একটু ভিজিয়ে দিয়ে আমন্ত্রণ জানাতে অলস দুপুরে।

দুই বিশাল পাহাড়ের মাঝেই দুধসাদা অবিরাম ঝর্ণাধারা বয়ে চলেছে, গড়িয়ে পড়ছে তার আপন গতিতে, উঁচু থেকে নিচু, আর নিচু থেকে আরো নিচু পাহাড়ের কোলে চড়ে পাথরে-পাথরে খেলা করে পিয়াইন নদীতে। ঠিক যেখান থেকে আপনি চাইলেও আপনার চোখ ফিরে আসতে চাইবে না, পারবেন না অবাধ্য চোখকে ঝরে পড়া ওই সম্মোহিত ঝর্ণাধারা থেকে ফেরাতে!

আর যদি হন একটু অলস, সত্যিকারের প্রকৃতিপ্রেমী, তবে তো কথাই নেই। আপনার জন্য একদম আদর্শ জায়গা এই পাংথুমাই জলপ্রপাত বা ঝর্ণাধারা। পাবেন একই সঙ্গে শান্ত ও স্বচ্ছ, শীতল নদী, স্পর্শ করা যায় এমন দূরত্বে পাবেন অরণ্যের স্বাদ, মেঘ-কুয়াশার আলিঙ্গন, প্রেমে পড়ে যাওয়ার মতো পাহাড়ের সারি আর সবচেয়ে আকর্ষণের, একপলকেই ভালোবেসে ফেলার মতো সুখের স্রোত পাংথুমাই।

মেঘালয়ের পাহাড় থেকে নেমে আসা সুখের কান্না দেখা! সবচেয়ে বড় কথা, সেখানে যাওয়া-আসার তেমন কোনো ঝামেলা নেই, নেই অনেক সময় নষ্ট হওয়ার মতো কোনো কারণও, জাগবে না খুব বেশি খরচের ভাবনা, ঢাকা থেকে একদিনেই ঘুরে আসতে পারবেন এই অবিরাম ঝরে পড়া সুখের ঝর্ণাধারা। আর সেখানে গেলে চাইলে ঘুরে আসতে পারবেন পানির ভেতরে নরম পাথর বিছানো বিছানাকান্দিতেও! শেষ বিকেলে বা খুব সকালে বাড়তি হিসেবে পাবেন চা-বাগানের কোমল সবুজের ছোঁয়া।

তবে আমি বলব, শুধু পাংথুমাইয়ের জন্যই থাকুক না একটা বেলা, কোনো এক অলস দুপুর বা বিকেল। সব সময় কি আর ছোটাছুটি করে প্রকৃতি দেখতে ভালো লাগে? সব সময় কি আর ছবি তুলে সুখ পাওয়া যায়? কখনো-কখনো শুধু অপার বিস্ময়ে, অপলক তাকিয়ে থেকেও যে অনেক সুখ আর আনন্দ শুষে নেওয়া যায় নীরব পাহাড়, সবুজ অরণ্য, ঝর্ণা ও কোমল নদীর কাছ থেকে, তেমনই হোক না একটা বেলা। দেখবেন, বেলাশেষে প্রাপ্তির খাতা ভরে গেছে।

ঢাকা থেকে পাংথুমাই যেতে প্রথমে যেতে হবে বাসে বা ট্রেনে করে সিলেটে। ভাড়া বাসে ৬০০-১০০০ টাকা, ট্রেনে ৩০০-১০০০ টাকা, সিলেটে নেমে শেয়ার-সিএনজি করে চলে যেতে পারেন গোয়াইনঘাট, ভাড়া ১০০-১২০ টাকা।

গোয়াইনঘাট থেকে আর একটি সিএনজি নিতে পারেন ২০০-৩০০ টাকায় যাওয়া-আসা পাংথুমাই ঝর্ণার কাছাকাছি, ছোট্ট একটি জলাশয় ৫-১০ টাকা দিয়ে পার হয়ে ঝর্ণা দেখতে। বাংলাদেশের অংশেই বসে। একবেলা কাটিয়ে ফিরে আসতে পারেন, একই দিনে সিলেট শহরে গিয়ে রাতের ট্রেন বা বাসে ঢাকায়। সব মিলে খরচ হতে পারে ১০০০-১৫০০ টাকা জনপ্রতি।

এ ছাড়া সিলেট স্টেশন থেকে সিএনজিতে হাদারপাড় থেকে বিছানাকান্দি হয়ে নৌকায় করেও যেতে পারেন পাংথুমাই ঝর্ণার কাছে। তবে ইঞ্জিনচালিত নৌকার বিকট শব্দের সঙ্গে এমন নীরব আর ঠাণ্ডা প্রকৃতি দেখা ঠিক আরাম হবে না বলে আমার মনে হয়। তাই যেতে পারেন সিলেট থেকে গোয়াইনঘাট হয়ে।