বঙ্গতাজের জন্মভিটায় এক দিন
দেশের নানা প্রান্তে বরেণ্য গুণীজনদের বাড়ি অথবা স্মৃতিবহুল জায়গাগুলো ভ্রমণ করতে সব সময়ই ভালো লাগে। সেই সুবাদে বহু জায়গায় ছুটে গিয়েছি পূর্বপরিকল্পনা ছাড়াই। তাজউদ্দীন আহমদ দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী এবং বরেণ্য জাতীয় নেতা। তাঁর জন্মভিটা ঢাকার কাছেই কাপাসিয়ার রায়েদ ইউনিয়নের দরদরিয়া গ্রামে, শুনেছি অনেক দিন আগেই। যাওয়া আর হয়ে উঠছিল না। একটা বিশেষ কাজে গাজীপুর এসেছিলাম। সেখান থেকে তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্তে দুই বন্ধু রওনা হলাম কাপাসিয়ার উদ্দেশে। পথের সাথি রাজদূত নামের বাসে টিকেট কেটে চড়ে বসলাম। বাস যাবে কাপাসিয়ার টোকবাজার পর্যন্ত। আমরা অবশ্য তার আগেই নেমে যাব।
শালবনঘেরা পিচঢালা পথ ধরে গাড়ি ছুটল কিশোরগঞ্জের কটিয়াদি সড়কে। প্রায় ঘণ্টাখানেক লাগল কাপাসিয়া এসে পৌছাঁতে। কাপাসিয়া বাজারে নেমে সরাসরি সিএনজিচালিত অটোরিকশা ঠিক করে রওনা হলাম দরদরিয়া গ্রামের উদ্দেশে। এখান থেকে দূরত্ব প্রায় ১২ কিলোমিটার। তবে বাসে আরেকটু পথ এগিয়ে আমরাইদ নামলে রিকশা বা ভ্যান নিয়েও যাওয়া যায় তাজউদ্দীন আহমদের বাড়ি। প্রধান সড়ক ধরে কিছুটা পথ এগিয়ে মিয়ার বাজারের পশ্চিম দিকে চমৎকার গ্রামীণ মেঠোপথ ধরে ছুটছিল আমাদের রিকশা। মাঝেমাঝে লাল মাটির দোতলা বাড়ি আর সবুজ গাছগাছালি চোখে পড়ছিল দুই পাশে। নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখতে দেখতে দরদরিয়া সরকারি প্রাথমিক স্কুলের সামনে এসে পৌঁছালাম। স্কুলের মাঠ পেরিয়ে সামনে এগোতেই সারি সারি গাছ চোখে পড়ল, খুব সাদামাটা এক দোতলা বাড়ি। এই বাড়িতেই ১৯২৫ সালের ২৩ জুলাই জন্ম মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক তাজউদ্দীন আহমদের। শৈশবের অনেকটা সময়ও কেটেছে এখানে তাঁর। চমৎকার সাজানো-গোছানো পুরোনো বাড়ি। যদিও পরিবারের কেউ এখানে থাকে না এখন, তবু দেখভালের দায়িত্বশীলদের প্রশংসা করতেই হয়। সামনে চৌকোনা বিশাল পুকুর আর তার পাশে নারকেল, সুপারি ও আমের বাগান।
বাড়ির চারপাশ ঘুরে দেখছিলাম। ঘরের ভেতর থেকে কাঠির সিঁড়ি বেয়ে দোতলায় ওঠা যায় অনুমতি পেলে। ভেতরে যত্ন করে রাখা আছে ব্যবহার্য কিছু আসবাবপত্র এবং দেয়ালে দেখা মেলে ঐতিহাসিক সব ছবি। ঘরের পূর্ব ও পশ্চিম দিকে কাঠের রেলিং দেওয়া বারান্দা রয়েছে। বারান্দায় এক পাশে যত্ন করে রাখা একটা কাঠের চেয়ার দেখা যায়। সম্ভবত এই চেয়ারটিই তাজউদ্দীন আহমদ নিজে ব্যবহার করতেন সে সময়। দোতলা বাড়ির ভেতরে উঠানের এক পাশে গোলাঘর ও রান্নাঘর রয়েছে। এ ছাড়া মূল বাড়ির পশ্চিম পাশে আরও একটি মাটির ঘর আছে। যে ঘরটি মূলত তাজউদ্দীন আহমদ গ্রামে গেলে বৈঠকঘরের মতোই ব্যবহার করতেন বলে জানা যায়।
বাড়ির সীমানা পেরিয়ে নিচে ফসলি জমি। সেখানে মহিষ নিয়ে হালচাষে ব্যস্ত দেখা গেল একজন স্থানীয় কৃষককে। ঘুরেফিরে পুকুরপাড়ে এসে দাঁড়ালাম। গাছের সুনিবিড় ছায়ায় গল্প করে কাটল কিছু সময়। বেলা বাড়ছে তাই ফেরার সময় হলো। শুনেছি টোকবাজারের নিরিবিলি হোটেলসহ বেশ কয়েকটি হোটেলে নানা প্রকার ভর্তা-ভাজির জন্য বিখ্যাত। দুপুরের আহার সেখানেই করার পরিকল্পনা রেখে ফেরার পথ ধরলাম।
ঢাকা থেকে তাজউদ্দীন আহমদের বাড়ি যেতে হলে গুলিস্তান থেকে কাপাসিয়ার বাসে উঠতে হবে। সেখান থেকে সরাসরি সিএনজিচালিত অটোরিকশা নিয়ে যাওয়া যাবে দরদরিয়া গ্রাম অথবা কাপাসিয়া থেকে আমরাইদ বাজার গিয়ে রিকশাযোগেও যাওয়া যাবে।