সড়কপথে ৮০৬ শহরে ১ লাখ ২০ হাজার কিমি ভ্রমণে প্রথম বাংলাদেশি

Looks like you've blocked notifications!
ফিনল্যান্ডের হেলসিঙ্কি শহরে ভ্রামণিক তানভীর অপু। ছবি : সংগৃহীত

তানভীর অপুকে ভ্রমণবিলাসী বলা যায় না, বলা যায় ভ্রমণপিপাসু। পৃথিবীর নানা দেশের বিভিন্ন শহরে পা রাখেন তিনি, সেখানকার ইতিহাস-ঐতিহ্য সম্পর্কে জানার চেষ্টা করেন। যে দেশেই যান, লাল-সবুজে আঁকা বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেন তানভীর। এ পর্যন্ত বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ৮০৬টি শহর ভ্রমণ করেছেন তিনি। বর্তমানে বাস করছেন ফিনল্যান্ডে।

৭৭টি দেশে ভ্রমণের অভিজ্ঞতা তানভীর অপুর। এনটিভি অনলাইনকে তানভীর বলেছেন, এ পর্যন্ত প্রায় এক লাখ ২০ হাজার কিলোমিটার সড়কপথে ভ্রমণ করেছেন তিনি।

পানামার রাজধানী পানামা সিটি। ছবি : তানভীর অপু

ভ্রামণিক তানভীরের বাড়ি রাজশাহী জেলায়। ২০০৬ সালে তিনি পড়াশোনার উদ্দেশে যান ইউরোপের দেশ ফিনল্যান্ডে। এরপর নেশা চাপে শহর পরিক্রমার। প্রথম ভ্রমণে যান এস্তোনিয়ার রাজধানী তালিমে। সেই থেকে দীর্ঘ এক যুগে ভ্রমণ করেছেন পৃথিবীর ৮০৬টি শহর।

নিকারাগুয়ার ওমেতেপে দ্বীপ। ছবি : তানভীর অপু

গেল জানুয়ারির শেষের দিকে লাতিন আমেরিকার নয়টি দেশের ৯০টি শহর ভ্রমণ করেছেন তানভীর অপু। ভ্রমণ করেছেন টানা ৪৫ দিন। এ যাত্রায় সড়কপথে ভ্রমণ করেছেন সাত হাজার কিলোমিটার। কিউবার রাজধানী হাভানা, মেক্সিকোর কানকুন, তুলুম; বেলিজের রাজধানী বেলিজ সিটি, হন্ডুরাসের রাজধানী তেগুচিগালপা, গুয়াতেমালার অ্যান্টিগুয়া, লিভিস্টোন; নিকারাগুয়ার রাজধানী মানাগুয়া, ওমেতেপে দ্বীপ; কোস্টারিকার রাজধানী স্যানহোসেই, পানামার রাজধানী পানামা সিটিতেও পা রেখেছেন।

কোবাতে মায়ান পিরামিড। ছবি : তানভীর অপু

লাতিন আমেরিকার ভ্রমণ অভিজ্ঞতা সম্পর্কে তানভীর অপু বলেন, ‘সবচেয়ে ভালো লেগেছে লাতিন আমেরিকার মানুষকে। তাঁরা অনেক সহজ-সরল, বন্ধুত্বপূর্ণ, সৎ ও পরিচ্ছন্ন। তাঁদের ব্যবহার আমাকে মুগ্ধ করেছে। কিউবার জীবনব্যবস্থা আমাকে বিস্মিত করেছে, সেখানে ধনী-গরিবের ভেদাভেদ নেই। পুরোনো ঘরবাড়ি যত্ন করে আগলে রেখেছেন তাঁরা।’

বেলিজের লিবানতুম। ছবি : তানভীর অপু

তানভীর আরো বলেন, ‘আরেকটি বিষয় যা না বললেই নয়, লাতিন আমেরিকার আবহাওয়া একবারে বাংলাদেশের মতো। সেখানে আমি ডাব, কলা, পেঁপে, মরিচ, তরমুজসহ অসংখ্য ফল দেখেছি, যা আমরা বাংলাদেশেও পাই।’

২০০৬ সালে তিনি জার্মানি, বেলজিয়াম, হল্যান্ড, ফ্রান্স, সুইজারল্যান্ড, লুক্সেমবার্গ, লিথেনেস্টাইন ও চেক রিপাবলিকের বিভিন্ন শহরে ১০ হাজার কিলোমিটার ভ্রমণ করেন।

হুন্ডুরাসের কোপানের মায়ান সিটি। ছবি : তানভীর অপু

২০০৮ সালে এস্তোনিয়া, লিথুনিয়া, লাটভিয়ার সাত হাজার কিলোমিটার ভ্রমণ করেন। একই বছর ল্যাপল্যান্ড, ফিনল্যান্ড, সুইডেন ও নরওয়ের ছয় হাজার কিলোমিটার ভ্রমণ করেন। এ ছাড়া মিসরের কায়রো, আলেকজান্দ্রিয়া, আবু সিম্বলের বিভিন্ন শহরে ১১ দিনে পাঁচ হাজার মিটার ভ্রমণ করেন। সে বছর ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের দুই হাজার কিলোমিটার ভ্রমণ করেন।

নরওয়ের লফটেন। ছবি : তানভীর অপু

২০১৪ সালে এস্তোনিয়া, লিথুয়ানিয়া, লাটভিয়া, ইউক্রেন, মালডোভা, মন্টেনিগ্রো, সার্বিয়া, গ্রিস, আলবেনিয়া, হাঙ্গেরি, স্লোভাকিয়া, বসনিয়া, কসোভোর বিভিন্ন শহরে ১২ হাজার কিলোমিটার ভ্রমণ করেন। একই বছর অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন, সিডনি, ক্যানবেরার তিন হাজার কিলোমিটার ভ্রমণ করেন।

মৃত আগ্নেয়গিরির জ্বালামুখ সান্তেয়ানা, এলসালভাদর। ছবি : তানভীর অপু

২০১৭ সালে ভারতের আসাম, মেঘালয়, নাগাল্যান্ডের বিভিন্ন শহরে পাঁচ হাজার কিলোমিটার ভ্রমণ করেন। এর পরের বছর আমেরিকার ৩০টি রাজ্যে ৩৫ হাজার কিলোমিটার ভ্রমণ করেন।

২০১৯ সালে ফিনল্যান্ড, সুইডেন, নরওয়ের বিভিন্ন শহরে ছয় হাজার কিলোমিটার ভ্রমণ করেন। একই বছর পাঞ্জাব, মানালি, দিল্লি ও কুল্লুর পাঁচ হাজার কিলোমিটার ভ্রমণ করেন।

নিকারাগুয়ার কেরো নিগ্রোর আগ্নেয়গিরি। ছবি : তানভীর অপু

তানভীর মনে করেন, ভ্রমণ ছাড়া কোনো জাতি উন্নতি করতে পারে না। তা ছাড়া পর্যটনশিল্প থেকে অনেক আয় হতে পারে। উদাহরণ হিসেবে তানভীর বলেন, নেপাল, মালদ্বীপ, মরক্কোর মতো দেশগুলো শুধু পর্যটনের ওপর নির্ভর করে টিকে আছে।

চে গেভারার সমাধি, সান্তা ক্লারা, কিউবা। ছবি : তানভীর অপু

ভ্রমণবিষয়ক একটি বইও লিখেছেন তানভীর অপু। নাম ‘যাত্রা হলো শুরু’। তানভীর চান বাংলাদেশের সব মানুষ ভ্রমণপ্রিয় হয়ে উঠুন। ইউটিউবে তানভীরের নিজস্ব চ্যানেল আছে—Travel with Tanvir Opu। তাঁর ফেসবুক পেজের নাম—Travel with Tanvir Opu।