ছুটির দিনে

রকেটে চন্দ্রবিলাশ

Looks like you've blocked notifications!
ছবি : মীর আবদুল খলিল, সিয়াম আনোয়ার

সন্ধ্যায় গোধূলি আলো, নদীর জলে রুপালি চাঁদের প্রতিচ্ছবি কিংবা ভোরের আকাশে কুয়াশার চাদর গায়ে জেগে ওঠা সোনালি সূর্য্য। এমন একটি রাত কাটাতে চান অনেকেই।

তাই বিভিন্ন গ্রুপে বিভিন্ন সময় যাদের প্রশ্ন ছিল কোথায় যাবেন, কীভাবে যাবেন তাদের জন্য সুন্দর ও উপভোগ্য সময় কাটাতে আপনি চলে যেতে পারেন

সারা দিনের ব্যস্ততা শেষ করে কোনো এক বৃহস্পতিবার। বিকেলে চলে আসুন সদরঘাটের ১৩ নম্বর পন্টুনে, এখানে ৪টা ৩০ থেকে আপনার জন্য অপেক্ষা করবে নদীপথের নিরাপদ, আধুনিক জাহাজ রকেট সার্ভিস, এম ভি মধুমতি।

আগে থেকে টিকেট না করে থাকলে ঘাটেই কাউন্টার থেকে টিকেট সংগ্রহ করে উঠে পড়ুন। তবে পারলে যতদূর সম্ভব আগে টিকেট করে নেবেন, কারণ আপনার মতো অনেকেরই প্রথম পছন্দ মধুমতি জাহাজ তাই ঘাটে প্রথম শ্রেণির টিকেট নাও পেতে পারেন। আর হ্যাঁ মনে রাখবেন এই জাহাজটির টিকেট মূল্য সরকার নির্ধারিত, তাই অতিরিক্ত টাকা দিয়েও টিকেটের আকাঙ্ক্ষা পূরণ করা যাবে না।

এবার চলে আসুন জাহাজের তৃতীয় তলায় পেছনে, ওপেন ডেকে সাজানো চেয়ারে কিংবা কোলাহল এড়াতে জাহাজের দ্বিতীয় তলায় সামনের অংশে নিরিবিলি বসতে পারেন, সঙ্গে গরম গরম ফ্রেঞ্চ ফ্রাই আর কোরাল ফিশ ফ্রাই শেষ হতে না হতেই ধূমায়িত চা নিয়ে হাজির হবে মেরুন পোশাকে সজ্জিত স্টুয়ার্ড বা সার্ভিস বয়।

ইট-পাথরের ঢাকা শহরেও পশ্চিমের হেলে পড়া সূর্য্যটা বুড়িগঙ্গা নদীতে সোনালি আলোর দারুণ আবহ তৈরি করে, ঢেউয়ের ওপর চকচকে প্রতিচ্ছবি মাড়িয়ে বৈঠা টানা পারাপারের নৌকাগুলো ঠিকই আপনাকে রোমাঞ্চিত করবে।

ঠিক ৬টা ৩০ মিনিটে ব্যস্ত শহর ঢাকাকে পেছনে ফেলে এগিয়ে যাবে জাহাজ। আপনার পাশ দিয়ে চলে যেতে পারে দু-একটি লঞ্চ কিন্তু সেদিকে ভ্রুক্ষেপ নেই সুষম গতিতে চলা মধুমতির। ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ কিংবা মুন্সীগঞ্জ শহরের বাতাস ঠেলে বুড়িগঙ্গা, ধলেশ্বরী, শীতলক্ষ্যা পার হয়ে আপনি চলে আসবেন মেঘনায়।

দূর গায়ের গাছ-গাছালির ফাঁকে যদি তখনো চাঁদ উঁকি না দেয়, তাহলে একটু আগেভাগেই রাতের খাবার খেয়ে নিতে পারেন। সাদা ভাত, ৮-১০ রকমের ভর্তা, ডাল, সবজি আর সঙ্গে ইলিশ বা কোরাল মাছ। যদি পছন্দ না হয় তবে ভুনা খিচুড়ি, ইলিশ ভাজা বা ডিম আর মুরগির সঙ্গে জলপাইয়ের আচার।

এবার এক কাপ গরম চা নিয়ে বসে পড়তে পারেন চাঁদ দেখতে। বিশাল মেঘনায় হিমেল হাওয়া আর মৃদু ঢেউ আপনাকে নিয়ে যাবে এক ভিন্ন জগতে। আকাশে রুপালি চাঁদ আর নদীতে তাঁর প্রতিচ্ছবিতে দেখবেন বাংলা মায়ের আসল রূপ। জেলেদের নৌকায় মাছ ধরা আর ঢেউয়ের ওপর আছড়ে পড়া চাঁদের আলো আপনাকে বিমোহিত করবে। চলতে চলতে মেঘনা ছেড়ে ডাকাতিয়া নদীতে প্রবেশ করবেন। কখন যে ঘড়ির কাটা রাত ১০টা পার করেছে বুজতেই পারবেন না।

এবার আপনার চাঁদপুর নামার পালা। আগেই যদি রিটার্ন টিকেট না করে থাকেন তাহলে ঘাটের কাউন্টার থেকে টিকেট সংগ্রহ করুন।

একটু এগিয়ে চলে যান বাজারের দিকে। ভাবছেন এত রাতে বাজার! হ্যাঁ ঠিকই বলছি বাজারে গিয়ে দেখতে পাবেন ইলিশ আর ইলিশ দেশের সবচেয়ে বড় ইলিশের বাজার থেকে নিয়ে আসতে পারেন গোটা কয়েক, তরতাজা ইলিশ, আর দামেও কম পাবেন। বড় বড় ইলিশ দেখিয়ে বাড়িতে রেখে আশা প্রিয়জনদের তাক লাগিয়ে দিতে পারেন।

এবার ফেরার পালা। রকেট ঘাটে আপনার জন্য অপেক্ষা করছে শতবর্ষী প্যাডেল স্টিমার। বিশ্বজোড়া যার খ্যাতি। এই প্যাডেল স্টিমার দেখতেই সারা বিশ্ব থেকে অগণিত পর্যটক বাংলাদেশে আসেন হাজার হাজার ডলার পাউন্ড খরচ করে। একবার ভাবুন তো বিশ্বের নামি দামি ব্যক্তি রাষ্ট্রনায়ক কিংবা ভ্রমণপিপাসুদের যে স্টিমার স্বাগত জানিয়েছে, আজ সে আপনাকেও স্বাগত জানাচ্ছে। একদিন হয়তো কালের গর্ভে হারিয়ে যাবে বয়সের ভারে ন্যুব্জ হয়ে যাওয়া প্যাডেল জাহাজগুলো কিন্তু সেই ইতিহাসের অংশ হয়ে সাক্ষী থাকবেন আপনিও।

উঠে পড়ুন, চলে যান দ্বিতীয় তলায় সামনের অংশে, বসে পড়ুন চেয়ারে যেখানে বসেছিলেন মহারানি ভিক্টোরিয়া থেকে শুরু করে হাল আমলের ক্লিনটনের মতো হাজারো রথী-মহারথী।

ডাকাতিয়া নদী থেকে বের হয়ে স্টিমার যখন মেঘনায় আসবে, দুই পাশের প্যাডেলের ছলাত ছলাত শব্দে আপনি হারিয়ে যাবেন ভিন্ন জগতে। ছন্দ-পতনহীন ছন্দের তালে তালে এক কাপ গরম চা আপনাকে নিয়ে যাবে আপনার সেরা ভ্রমণের স্মৃতির পাতায় নতুন করে কিছু লেখার ভাবনায়। ভাবনার জগৎ থেকে ফিরে আসার আগেই সকালের সূর্য উঁকি দেবে দূরে পল্লবঘেরা কোনো এক গাঁয়ে। পুবের আকাশে সোনালি আলোর বর্ণিল আবহ আপনাকে অভিবাদন জানাবে নতুন একটি দিনে। নদীতে বসে সূর্যোদয় দেখার অভিজ্ঞতাটা আপনাকে নিয়ে যাবে বন্ধুদের আড্ডার কেন্দ্রবিন্দুতে।

সকালে ঘড়ির কাঁটা যখন ৬টা ছুঁই ছুঁই স্টিমার তখন সেই কোলাহল মুখর ঢাকার সদরঘাটে।

এবার আপনার নামার পালা, কিন্তু একটা কাজ বাকি, চেয়ে নিন ভিজিটরস বুক, লিখে ফেলুন আপনার অভিজ্ঞতা বা পরামর্শ। সঙ্গে স্টিমারে তুলে নিতে পারেন আপনার দু-একটি ছবি। আপনার এই ছবিই একদিন কথা বলবে শব্দ ছাড়া, আপনার এই ছবিই একদিন মনে করিয়ে দেবে আপনি ইতিহাসের একজন।