ঘুরে এসে লেখা

সীতাকুণ্ডে শিব চতুর্দশী মেলা

Looks like you've blocked notifications!

সীতাকুণ্ডে শুরু হয়েছে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম শিব চতুর্দশী মেলা। উপমহাদেশে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম তীর্থস্থান সীতাকুণ্ড চন্দ্রনাথ ধামে ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে এই মেলা শুরু হয়েছে, চলবে আগামী ১ মার্চ পর্যন্ত। অযুত মানুষের পদভারে মুখরিত হয়ে উঠেছে পুরো এলাকা। ডাবের জল আর দুধ দিয়ে শিবকে স্নান করানোর জোর প্রচেষ্টা চলছে।

আমাদের দেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় মেলা হচ্ছে সীতাকুণ্ডের এই শিব চতুর্দশী মেলা। প্রতিবছর শিব চতুর্দশী তিথিতে এ মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। শিবরাত্রি ব্রতসহ শিব লিঙ্গে পুষ্পার্ঘ্য নিবেদন করতে দেশ-বিদেশের লাখো সনাতন ধর্মাবলম্বী হিন্দু সম্প্রদায়ের পুণ্যার্থী জড়ো হন এ মেলায়।

চট্টগ্রাম শহর থেকে প্রায় ৩৭ কিলোমিটার পশ্চিমে সীতাকুণ্ড উপজেলা সদরের এই মেলার অবস্থান। চট্টগ্রাম-ঢাকা মহাসড়কের সামান্য উত্তর পাশে এটি অবস্থিত। সীতাকুণ্ড বাজার থেকে সর্পিল আঁকা-বাঁকা ছোট্ট একটি সড়ক চলে গেছে চন্দ্রনাথ সোজা পাহাড়ের দিকে। এ পাহাড় বাজার থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার দূরে। এর সর্বোচ্চ চূড়াটির উচ্চতা প্রায় ৩৬৫ মিটার বা ১২০০ ফুট প্রায়। চূড়ায় ওঠার পথটি বেশ দুর্গম। বাজার ছেড়ে কিছুটা সামনে এগুলেই পথটি ক্রমেই ওপরের দিকে উঠে গেছে। এ পথে রয়েছে শংকর মঠ, শ্মশান, গিরিশ ধর্মশালা, ননী গোপাল তীর্থ মন্দির, ভৈরব ধর্মশালাসহ আরো অনেক দেবালয়। আরো কিছুটা পথ ওঠার পর দেখা যাবে ভবানী মন্দির। ভবানী মন্দির ছেড়ে আরেকটু পথ এগুলেই শম্ভুনাথ মন্দির, ছোট্ট একটি পাহাড়ি ঝরনা। আর এখান থেকেই চন্দ্রনাথ মন্দিরের দিকে উঠতে হয়।

পুণ্যার্থীদের পাহাড়ে ওঠার জন্য এখান থেকে শান বাঁধানো সিঁড়ি তৈরি করা আছে। তবে পাহাড় কেঁটে বানানো সিঁড়িগুলোর একেকটি ধাপের উচ্চতা এত বেশি যে, একটু উঠলেই হাঁপিয়ে যেতে হয়। বেশ কিছুটা পথ কষ্ট করে উঠলেই চোখে পড়বে প্রাচীন বটবৃক্ষের পাশে দুটি মন্দির। এর মধ্যে যেটি পুরোনো মন্দির সেটির নাম বিরূপাক্ষ। এ জায়গাটির উচ্চতা সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে প্রায় ২০০ মিটার। এখান থেকে দক্ষিণ দিকে দৃষ্টি সীমানা ছাড়িয়ে যায় বঙ্গোপসাগর অবধি। বিরূপাক্ষ মন্দির ছেড়ে পূর্বদিকে সর্পিল পথ চলে গেছে পাহাড়ের একেবারে চূড়ায় চন্দ্রনাথ মন্দিরে।

শিব চতুর্দশী পূজা উপলক্ষে সীতাকুণ্ডে মেলায় আসা পুর্ণ্যার্থীরা পাহাড় বেয়ে চন্দ্রনাথ মন্দিরে ওঠার দৃশ্য দূর থেকে অনেকটা পিঁপড়ার সারির মতো মনে হয়। বিভিন্ন মন্দিরে পূজা-অর্চনা করলেও ভক্তদের সবার কাছেই মূল আকর্ষণ থাকে পাহাড়ের চূড়ার চন্দ্রনাথ মন্দির। তাই দলবেঁধে সবাই ছোটেন মন্দিরটির দিকে। অনুষ্ঠানে আগত ভক্তরা অনেকেই পুণ্যস্নানে নিজেকে পবিত্র করে নেন চূড়ায় ওঠার আগে। চন্দ্রনাথ পাহাড়ের ঠিক গোড়া থেকে দুটি পথ চলে গেছে চূড়ার দিকে। মেলার সময় অতিরিক্ত লোকসমাগম হয় বলে বাঁয়ের পথটি কেবল পাহাড়ে ওঠার জন্য। আর ডানের পথটি কেবল পাহাড় থেকে নামার জন্য ব্যবহার করা হয়।

চন্দ্রনাথ পাহাড়ের চূড়া থেকে পূর্ব দিকে নিচে নামলেই ইকোপার্কের শুরু। এটি দেশের প্রথম ইকো পার্ক। সীতাকুণ্ডের চন্দ্রনাথ পাহাড় ও এর পার্শ্ববর্তী এলাকায় ২০০৪ সালে গড়ে তোলা হয়েছে এ ইকোপার্কটি। পাহাড়ের বাঁকে বাঁকে নানা প্রজাতির গাছপালা ছাড়াও এ পার্কের ভেতরে রয়েছে কয়েকটি ছোট-বড় পাহাড়ি ঝরনা। জেনে রাখুন, চন্দ্রনাথ পাহাড়ের উচ্চতা খুব বেশি না হলেও এর চূড়ায় ওঠার পথটি বেশ সরু এবং দুর্গম। শিব মেলার সময় ভক্তদের ভিড় থাকে বলে বেশ চাপাচাপি করে এ পথে উঠতে হয়। তারপও পুণ্যার্থীদের চেষ্টার শেষ নেই।

(আলোকচিত্র সহায়তা : কমল দাস)