নরসিংদীর শত বছরের জমিদারবাড়িতে একদিন
ঢাকার খুব কাছেই নরসিংদীর লক্ষ্মণ সাহার পুরোনো জমিদারবাড়ি। নান্দনিক সৌন্দর্য এবং কারুকার্যময় এই বাড়িটি ঘুরে আসতে পারেন যেকোনো ছুটির দিনে। পরিবার বন্ধুবান্ধবসহ কাটিয়ে আসতে পারেন একটি দিন প্রাচীন ইতিহাস আর ঐতিহ্যের সঙ্গে। জমিদার লক্ষ্মণ সাহার বাড়ি এবং আশপাশের বাড়িগুলোর শিল্পিত কারুকাজ অত্যন্ত সুনিপুণ নির্মাণশৈলীতে তৈরি এই ভবনগুলো শত বছর পরও ঐতিহ্যপ্রেমী এবং ভ্রমণপিপাসু পর্যটককে মুগ্ধ করে।
স্থাপত্যকলার দৃষ্টিনন্দন এক নিদর্শন ইতিহাস আর ঐতিহ্যের সৌন্দর্যমণ্ডিত লক্ষ্মণ সাহার বাড়িসহ এখানে আছে আরো কিছু বাড়ি। দৃষ্টিনন্দন এবং সুন্দর এই বাড়িগুলো এরই মধ্যে বিলুপ্তির পথে। পুরোনো জমিদারবাড়িগুলোর এই প্রাচীন ঐতিহ্য এক গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নতত্ত্ব নিদর্শন। তাই আপনি চাইলে একই সঙ্গে আশপাশে আরো ঘুরে দেখে আসতে পারেন পারুলিয়ার ঐতিহাসিক পারুলিয়া মসজিদ, পাঁচদোনায় পবিত্র আল-কুরআনের প্রথম বাংলা অনুবাদক ভাই গিরিশচন্দ্র সেনের বাড়ি এবং নরসিংদীর বালাপুরের ঐতিহ্যবাহী বালাপুর জমিদারবাড়ি। জমিদারবাড়ির নান্দনিক সৌন্দর্য ও কারুকার্যময় বাড়ির স্থাপত্যশৈলী প্রজন্মের কাছে বর্তমানে দর্শনীয় এক স্থান।
কে এই লক্ষ্মণ সাহা
ইতিহাস থেকে যতটুকু জানা যায়, জমিদার লক্ষ্মণ সাহা এই অঞ্চলের প্রধান জমিদার ছিলেন না। তিনি মূলত সাব-জমিদার ছিলেন। জমিদার লক্ষ্মণ সাহার ছিল তিন ছেলে। তাঁদের নাম নিকুঞ্জ সাহা, পেরিমোহন সাহা ও বঙ্কু সাহা। বঙ্কু সাহা ১৯৪৭ সালে দেশভাগের সময় ভারতে চলে যান তারপর ১৯৭১ সালে স্বাধীন বাংলাদেশের জন্মের কিছু দিন আগে লক্ষ্মণ সাহার আরেক সন্তান নিকুঞ্জ সাহাও ভারতে চলে যান। তখন শুধু থেকে যান পেরিমোহন সাহা। এই পেরিমোহন সাহার ছিল এক সন্তান, যাঁর নাম নারায়ণ সাহা। পেরিমোহন সাহা মারা যাওয়ার পর উত্তরাধিকার সূত্রে এই সম্পত্তির মালিক হন নারায়ণ সাহা।
লক্ষ্মণ সাহার বাড়ি এখন উকিলবাড়ি
পরবর্তী সময়ে নারায়ণ সাহার কাছ থেকে এই জমিদারবাড়ির একটি অংশ কিনে নেন আহম্মদ আলী নামের একজন আইনজীবী (উকিল)। বর্তমানে স্থানীয়ভাবে এখন জমিদার লক্ষ্মণ সাহার বাড়িকে সবাই উকিলবাড়ি হিসেবেই চেনে।
সুদান সাহা ও কুণ্ডু সাহার বাড়ি
জমিদার লক্ষ্মণ সাহার বাড়ির কাছেই রয়েছে আরো একটি কারুকার্যময় সুন্দর পুরোনো বাড়ি। বাড়িটিকে সবাই সুদান সাহার বাড়ি হিসেবে চেনে ও জানে । সুদান সাহার বাড়িও অনেক দৃষ্টিনন্দন ও কারুকার্যময়। সুদান সাহার বাড়ি যে কেউ একবার দেখলে মুগ্ধ হবে। এ বাড়ির সামনেও রয়েছে পুকুর, শানবাঁধানো পুকুর ঘাট। সামনে খোলা জায়গা। জমিদার লক্ষ্মণ সাহার বাড়ি থেকে অল্প দূরে রয়েছে আরেকটি পুরোনো বাড়ি। বাড়িটিকে সবাই কুণ্ডু সাহার বাড়ি হিসেবে চিনে যেটি বর্তমানে পরিত্যক্ত কিন্তু আয়তনে জমিদার লক্ষ্মণ সাহার এবং সুদান সাহার বাড়ি অপেক্ষায় অনেক বড়। কুণ্ডু সাহার বাড়িতে বর্তমানে কেউ বসবাস করে না।
অপূর্ব শিল্প সুষমামণ্ডিত স্থাপত্যশিল্পের এক অনন্য সৃষ্টি মনোমুগ্ধকর কারুকার্যময় সমৃদ্ধ জমিদার লক্ষ্মণ সাহার বাড়িসহ আশপাশের কিছু পুরোনো জমিদারবাড়ি। অনিন্দ্যসুন্দর এই বাড়িগুলো দেখা যায় নরসিংদী জেলার পলাশ উপজেলার ডাংগা গ্রামে। ভারতবর্ষে এ অঞ্চলের এই জায়গাগুলো ছিল দেবোত্তর সম্পত্তি হিসেবে। জমিদার লক্ষ্মণ সাহা এই দেবোত্তর সম্পত্তিতেই তাঁর কারুকার্যময় এবং দৃষ্টিনন্দন এই বাড়ি নির্মাণ করেন। বাড়ির সামনে রয়েছে পুকুর, শানবাঁধানো পুকুরঘাট, সামনে খোলা জায়গায় রয়েছে বিভিন্ন মন্দির। একসময় জমিদারবাড়ির ভেতরে এবং বাড়ির সামনে ছিল বিশাল আকারের বিভিন্ন রকমের ফুলের বাগান। ফুলের বাগানগুলো উঁচু দেয়াল দিয়ে বেষ্টিত ছিল, যা এখন আর অবশিষ্ট নেই।
খরচাপাতি এবং যেভাবে যাবেন
ঢাকার গুলিস্তান সার্জেন্ট আহাদ পুলিশ বক্সের সামনে নরসিংদীগামী মেঘালয় বাস কাউন্টার আছে। মেঘালয় বাসে করে পাঁচদোনা মোড় নামবেন, ভাড়া নেবে ৯০ টাকা। পাঁচদোনা মোড় থেকে ডাঙ্গা বাজারের সিএনজিতে উঠবেন, ভাড়া ২০ টাকা। তারপর ডাঙ্গা বাজার থেকে হেঁটে বা ২০ টাকা রিকশা ভাড়ায় জমিদার লক্ষ্মণ সাহার বাড়িতে যাওয়া যায়। ঢাকা থেকে লক্ষ্মণ সাহার বাড়িতে দিনে গিয়ে দিনে খুব সুন্দরভাবে সহজেই ঘুরে আসা যায় তাই নরসিংদীতে থাকার কোনো প্রয়োজন নেই। ডাঙ্গা জমিদারবাড়িগুলো ঘুরে দেখে এসে নরসিংদীর পাঁচদোনা মোড়ে খেতে পারেন। এখানে মোটামুটি মানের কয়েকটা ভালো হোটেল আছে। ভাত-সবজি-মুরগির মাংস-খাসির মাংস-বিভিন্ন মাছ-ডাল অথবা বিরিয়ানি। দুপুরের খাওয়া বাবদ খরচ হবে ১২০ থেকে ১৬০ টাকা। সব মিলিয়ে ৫০০-৬০০ টাকায় ভালোভাবেই ঘুরে আসা সম্ভব। আর কেউ যদি একদম ব্যাকপ্যাকিং ট্যুর করতে চায় তাহলে ২৫০-৩০০ টাকায় ঘুরে আসা সম্ভব।