ছুটির দিনে
৯৬ বছরের পুরোনো বোস কেবিনে একদিন
প্রাচ্যের ড্যান্ডিখ্যাত নারায়ণগঞ্জে রয়েছে প্রায় ৯৬ বছরের পুরোনো ঐতিহ্যবাহী রেস্তোরাঁ বোস কেবিন। এই ঐতিহ্যবাহী রেস্তোরাঁর সঙ্গে জড়িয়ে আছে বাংলাদেশের রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক অঙ্গনের অসংখ্য বরেণ্য মানুষের স্মৃতি। এই বোস কেবিনকে একনামে চেনে নারায়ণগঞ্জসহ বাংলাদেশের অনেক মানুষ।
বোস কেবিনের ইতিহাস
জীবিকার সন্ধানে ভুলুবাবু বিক্রমপুরের ষোলঘর থেকে নারায়ণগঞ্জ এসে ১৯২১ সালে একটি টংঘরে বোস কেবিনের যাত্রা শুরু করেন। প্রতিষ্ঠাতা নৃপেন চন্দ্র বসু তিনি সবার কাছে ভুলু বাবু নামেই বেশি পরিচিত ছিলেন। শুরুতে ছোট টংঘরে বিক্রি করতেন কড়া লিকারের চা, সঙ্গে থাকত লাঠিবিস্কুট ও বাটারবিস্কুট। আস্তে আস্তে তার ছোটো দোকানটি জনপ্রিয় হতে থাকে, বাড়তে থাকে দোকানের কলেবরও। একসময় সেই ছোট দোকানটিই হয়ে যায় বোস কেবিন।
ভুলুবাবু এখন আর নেই বোস কেবিন চালান তাঁর নাতি তারক চন্দ্র বসু। তিনি বলেন, আমরা ইচ্ছে করলে এই জায়গায় বাণিজ্যিক ভবন তৈরি করে অনেক লাভবান হতে পারতাম শুধু ঐতিহ্যের কথা চিন্তা করে এখনো এটি চালাচ্ছি। তিনি আরো বলেন, নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু নারায়ণগঞ্জ এলে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে যায়। খবর পেয়ে আমার দাদা কড়া ও হালকা লিকারের দুই কেতলি চা বানিয়ে ছোটেন নেতাজিকে খাওয়ানোর জন্য। আর সেই চা খেয়ে খুবই খুশি হয়েছিলেন নেতাজি এবং আশীর্বাদও করেছিলেন।
ঐতিহ্যের টানে নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ থেকে শুরু করে শহরের রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিরা বোস কেবিনে নিয়মিত আসেন।
বোস কেবিনে যাঁরা এসেছেন
এই বোস কেবিনে চা খেয়েছেন নেতাজি সুভাষ বসু, ভারতের বর্তমান রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি,পশ্চিমবঙ্গের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু। আরো যাঁদের পা পড়েছে এই বোস কেবিনে তাঁদের মধ্যে অন্যতম জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী এবং জাতীয় নেতা হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী।
নারায়ণগঞ্জ শহরের ঐতিহ্যবাহী বোস কেবিনের কড়া লিকারের চায়ের নামডাক সবাইকে ছাড়িয়ে গেছে। এ চা পান করে প্রশংসা করেছিলেন নেতাজি সুভাষ বসু।
খাবারের মেন্যু
বোস কেবিনে সকালের নাস্তায় পাওয়া যায় পরোটা, দাম ৫ টাকা। ডাল ও হালুয়া ৮ টাকা। ডিমের ৬ রকমের পদ ছাড়াও খাসি ও মুরগির মাংস। দুপুর ১২টা থেকে পাওয়া যায় আলুরচপ ১৫ টাকা। পোলাও ৪০ টাকা। মোরগ পোলাও ৮০ টাকা। কারি ৮০ টাকা। চিকেন কাটলেট ৭০ টাকা। এখানে দুপুরে ভাত বিক্রি হয় না।
নেতাজি যে চা খেয়ে প্রশংসা করেছিলেন, কড়া লিকারের সেই চা বড় কাপে পান করতে পারবেন মাত্র ১০ টাকায়। সবসময় এখানে চা পাওয়া যায়। অনেকে এখানে আসে কেবল কাটলেটের স্বাদ নিতে। বোস কেবিনের কাটলেট এক কথায় অসাধারণ।
প্রতিদিন সকাল ৭টা থেকে রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত খোলা থাকে বোস কেবিন, শুরু থেকেই এই নিয়মে চলছে। ছুটির দিনগুলোতে এখানে তিল ধারণেও জায়গা থাকে না।
ঢাকা থেকে যেভাবে বোস কেবিনে আসবেন
গুলিস্তান থেকে উৎসব, বন্ধন, বিআরটিসি বা বোরাক বাসে সরাসরি নারায়ণগঞ্জের কালীরবাজার নেমে রিকশায় বা হেঁটে চেম্বার রোডে গেলেই পেয়ে যাবেন বোস কেবিন। আপনার বাসে ভাড়া লাগবে ৩৬ থেকে ৫৫ টাকা। আপনি চাইলে ট্রেনে কমলাপুর থেকে সরাসরি নারায়ণগঞ্জে আসতে পারেন জনপ্রতি ১৫ টাকা খরচ করতে হবে অথবা আপনি চাইলে ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়েও আসতে পারেন।