ছুটির দিনে
২৪০ টাকায় মিস্টিরিয়াস আইল্যান্ডে রস উৎসবে
অফিসের একঘেয়েমি কাজের মাঝে যখন আপনি বিরক্ত তখন নিজেকে সতেজ করতে ঢাকার আশপাশে ঘুরে আসতে পারেন । একটু ইচ্ছে করলে ভালো সময় কাটাতে পারেন। ঢাকার খুব কাছেই এমন সুন্দর কিছু জায়গা আছে যেখানে কম সময়ের মধ্যে ঘুরে আসতে পারেন, কাটিয়ে আসতে পারেন উপভোগ্য কিছু মুহূর্ত। এমন একটি জায়গা সাভারের বীরুলিয়া গ্রাম এবং সাদুল্লাপুর গোলাপের গ্রাম।তবে সাভারের বীরুলিয়া গ্রাম এবং সাদুল্লাপুর গোলাপের গামে উৎসবকে কেন্দ্র করে গেল ভালো হয়। আর তেমনি এক উৎসব বীরুলিয়া গ্রামের রস উৎসব ।
প্রতি বছর বীরুলিয়া গ্রামে রস উৎসব হয়। এবার মে মাসের প্রথম দিনে পালিত হলো রস উৎসব। আর সেই রস উৎসবে আমি হাজির হয়ে গেলাম। কিন্তু এই রস উৎসরের গ্রাম বীরুলিয়া সম্পর্কে একটু জানি।
বীরুলিয়া গ্রাম
বীরুলিয়া এক শতবর্ষী জনপদ। নদী থেকে বীরুলিয়াকে ডিঙি নাওয়ের মতো মনে হবে আপনার কাছে। অনেকটা মিস্টিরিয়াস আইল্যান্ডের মতো । অনেকে আবার গোলাপের স্বর্গ বলে সাভারের এই বীরুলিয়া গ্রামকে । আজকের এই বীরুলিয়া গ্রাম ছিল ১০০ বছর আগে এক সমৃদ্ধ নগরী । বীরুলিয়া গ্রামে আছে শ্রী শ্রী বৃন্দাবন চন্দ্র জিউ বিগ্রহ মন্দির, যার বয়স ১০০ বছরের বেশি। মন্দিরের সঙ্গে আছে নকশাবহুল তিনতলা বণিকবাড়ি। আছে জমিদার রজনীকান্তের আবাসঘর।
গোলাপের গ্রাম সাদুল্লাপুর
সাদুল্লাপুর গ্রামটিতেই গোলাপের চাষ হয়। গ্রীষ্ম, বর্ষা, শীত সব ঋতুতেই চলে গোলাপ চাষ । তবে এখানে গোলাপের দামের উঠানামা করে । আপনি চাইলে গোলাপের গ্রাম থেকে গোলাপ কিনে প্রিয়জনকে উপহার দিতে পারেন ।
আমাদের যাত্রা যেভাবে শুরু
আমরা কাওরানবাজার থেকে রস উৎসবের জন্য যাত্রা শুরু করলাম । এরপর বাসে করে মাজার রোডে নামলাম। মাজার রোড থেকে নেমে রিকশা নিয়ে দিয়াবাড়ীর পৌঁছালাম। দিয়াবাড়ীর ঘাটে নেমে টংয়ের দোকানে হালকা নাস্তা ও চা খেয়ে মেশিনচালিত নৌকায় আমরা রওনা দিলাম সাভারের রীরুলিয়ার সাদুল্লাপুর গোলাপগ্রামে। নৌকার যাত্রার ভ্রমণটা ছিল এককথায় অসাধারণ। নদীর দুই পাশে ধানক্ষেত, নদীর মধ্যে একটু একটু পর ছোট ছোট স্টিমার, নদীর পাশের গড়ে উঠা বিনোদন কেন্দ্র ইত্যাদি দেখতে দেখতে ৩০ মিনিটের নদীপথের যাত্রা যে কখন শেষ হয়ে গেল বুঝতেই পারলাম না।
রস উৎসব
ঘাট থেকে নেমে টঙের দোকানে আবারও গরম গরম চা খেয়ে হেঁটে ১০ মিনিটের মধ্যে আমরা পৌঁছে গেলাম গ্রামের মধ্যে রস উৎসবের জন্য নির্ধারিত স্থান আমবাগানে। রস উৎসবের জন্য আমড়া বাগান অনেক সুন্দর করে সাজানো হয়েছিল। আমড়া বাগানে শীতল পাটিতে বসে প্রাকৃতিক সৌন্দয উপভোগ করতে করতে তরমুজ ও আমের ভর্তা দিয়ে শুরু হলো আমাদের উৎসব। তারপর একটু পরই খাওয়া শুরু হলো তালের রস। তালের রস সংগ্রহ করা হয়েছে গ্রামের বিভিন্ন তালগাছ থেকে। তালের রস খেতে খেতে চলছে গান-বাজনা ও বিভিন্ন গানের তালে তালে নাচ।
রস খাওয়া পর্ব শেষ করে আমরা আশপাশের বিভিন্ন গোলাপবাগানে ফটোশেসন করলাম। তারপর একটু বিরতি দিয়ে আমরা দুপুরের খাওয়া শুরু করলাম। দুপুরের খাবার মেন্যু ছিল আলুর ভর্তা, বেগুন ভর্তা, লালশাঁখ, মাছ ভাজা, মুরগির মাংস ও আমের টক নিয়ে বানানো অসাধারণ সুস্বাদু মশুরের ডাল। দুপুরের খাওয়া শেষ করে বিরতির পর বিকেল ৪টায় আমরা ঢাকার উদ্দেশে রওনা দিলাম।
কীভাবে যাবেন ও যাতায়াত খরচ
গুলিস্তান থেকে গাবতলীগামী যেকোনো বাসে উঠে মাজার রোডে নামতে হবে, ভাড়া ২০-৩০ টাকা। বাস থেকে নেমে রিকশায় উঠে দিয়াবাড়ীঘাটে নামতে হবে, ভাড়া ৩০-৪০ টাকা। দিয়াবাড়ীর ঘাট থেকে সাভারের বীরুলিয়ার সাদুল্লাপুর গোলাপগ্রামের ভাড়া জনপ্রতি ২০ টাকা। দুপুরের খাওয়া ১০০ টাকা, সকাল ও বিকেলের নাস্তা ৫০ টাকা। সর্বমোট যাতায়াত খরচ জনপ্রতি ২৪০ টাকা।
যা দেখতে পাবেন
নদীর দুই পাশের প্রাকৃতিক সৌন্দয, গোলাপের বাগান, আর দেখতে পাবেন শ্রীশ্রী বৃন্দাবন চন্দ্র জিউ বিগ্রহ মন্দির, যার বয়স ১০০ বছরের বেশি। মন্দিরের সঙ্গে আছে নকশাবহুল তিনতলা বণিকবাড়ি। আছে জমিদার রজনীকান্তের আবাসঘর। আপনি গ্রামীণ পরিবেশে গ্রামের গাছের তলায় বসে প্রাকৃতিক সৌন্দয উপভোগ করতে করতে খেতে পারবেন খেজুরের রস নয় তালের রস ( তবে তালের রস খেতে চাইলে আগের থেকেই স্থানীয় গ্রামবাসীর সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে নতুবা আপনি তালগাছ পাবেন কিন্তু রস আর খাওয়া হবে না)।
পরামর্শ
গোলাপ বাগানে গিয়ে গোলাপ ছিড়বেন না। গ্রামে ভালো খারারের হোটেল না থাকায় আপনি খাবার নিয়ে যেতে পারেন। গ্রামের মানুষের বিরক্তি বা অসুবিধা হয় এমন কাজ করবেন না।