ছুটির দিনে
জোড়াসাঁকো ঠাকুর বাড়ি
শিল্প ও সংস্কৃতির রাজধানী বলা হয় কলকাতাকে। দেশের সাহিত্য, সংস্কৃতির ধারক বলা হয় এই শহরকে। আর এই শহরের অন্যতম একটি বাড়ি, একটি পরিবার উত্তর কলকাতার জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মভিটে। তো চলুন না ঘুরে আসি রবি বাবুর জোড়াসাঁকো ঠাকুর বাড়িতে।
ঢাকা থেকে জোড়াসাঁকো কীভাবে যাবেন
ইন্ডিয়ান হাই কমিশন ঢাকা ওয়েবসাইডে ভিসার ই-টোকেন ফরম পাওয়া যায়। যেখানে কোন পথে আপনি যাবেন তার একটি অপশন রয়েছে।
জোড়াসাঁকো যেতে হলে রেলপথ উত্তম। তবে ভারতীয় ভিসায় এখন যেকোনো দুটি পথের অনুমোদন নিতে পারেন। রেলপথ সঙ্গে আকাশ পথ। নতুবা সড়ক পথের সঙ্গে আকাশ পথ। এখানে আপনি রেল পথে গিয়ে আকাশ পথে ফিরতে পারেন। অথবা আকাশ পথে গেলেন সড়ক পথে ফিরতে পারেন। যাঁরা লেখালেখি তাঁদের জন্য রেলপথ অধিক উত্তম।
রেলপথ
এসি, নন এসি কিংবা তিনজনের একটি কেবিন খুব বেশি ভাড়া নয়। ট্রেনের টিকিট কাটার জন্য আপনাকে ভিসা সংযুক্ত পাসপোর্ট নিয়ে কমলাপুর রেল স্টেশন যেতে হবে। সেখানে একটি আলাদা বুথ রয়েছে। নির্দিষ্ট একটি ফরম পূরণ করে পাসপোর্টসহ কাউন্টারে জমা দিতে হবে। আপনার তারিখ মোতাবেক আসন থাকলে সহজেই টিকিট পেয়ে যাবেন। অবশ্য তার জন্য অন্তত সপ্তাহখানেক আগে যাওয়া ভালো।
ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট স্টেশন থেকে সকাল ৮টা ১০ মিনিটে কলকাতার চিতপুর স্টেশনের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু হয়। প্রায় ১২ ঘণ্টার এই যাত্রাকালে সব রকমের গরম খাবার রেল ক্যান্টিনেই পাওয়া যায়। চিতপুর স্টেশন থেকে জাকারিয়া স্ট্রিট খুব বেশি দূরে নয়। সঙ্গে তেমন কোনো ভারি মালামাল যদি না থাকে তবে বাস কিংবা মেট্রো রেলে যাওয়া যায়।
তবে কলকাতায় প্রথম ভ্রমণ হলে ট্যাক্সি নিয়ে নেওয়া ভালো। ট্যাক্সিতে মিটারে যেতে পারেন কিংবা চুক্তিতে যেতে পারেন। তবে ১৫০ রুপি থেকে ২০০ রুপি নিয়ে নেবে, যেভাবেই যান। যেখানে বাসে বা মেট্রো রেলে মাত্র আট-দশ রুপিতে সম্ভব। এখানে বলে রাখা ভালো বাসে বা মেট্রো রেলে গেলে বেশকিছু পথ হেঁটে যাওয়ার মানসিক প্রস্তুতি রাখতে হবে।
জোড়াসাঁকো ঠাকুর বাড়ির অবস্থান
জাকারিয়া স্ট্রিটের নাখুদা মসজিদ, চিতপুর রোড দিয়ে এগিয়ে গেলে হাতের ডান পাশে দেখা পাবেন বিশাল বড় পাকা তোরণে লেখা ‘জোড়াসাঁকো ঠাকুর বাড়ি’ এর পরই বেশ খানিকটা ঘিঞ্জি গলি ভিতরে রবীন্দ্র ভারতি বিশ্ববিদ্যালয়ের পথ। সেখান থেকে খানিকটা ভিতরেই মিউজিয়াম। ঠাকুর বাড়িতে যাবার রাস্তা যেমনই হোক, বাড়িটা দেখার মতো। অষ্টাদশ শতকের শেষের দিকে দ্বারকানাথ ঠাকুর বাড়িটি নির্মাণ করেছিলেন বড় বাজারের শেঠদের জমিতে। ধীরে ধীরে এই পাড়াটি হয়ে ওঠে বাংলা সাহিত্যের বহু বিখ্যাত ঘটনার সাক্ষী। এ পাড়াতেই থাকতেন ‘হুতোম প্যাঁচার নকশার’ কালী প্রসন্ন সিংহ, ভারতবর্ষে জুলিয়াস সিজার নাটক প্রথম অভিনীত হয়েছিল যার বাসায় সেই পিয়ারি মোহন বোস, মাইকেল মধুসূদনের ‘কৃষ্ণকুমারী’ প্রথম মঞ্চস্থ হয়েছিল যাঁর উদ্যোগে সেই জ্ঞানেন্দ্রনাথ ঠাকুরসহ আরও বেশ কয়েক জন বিখ্যাত মানুষ।
জোড়াসাঁকো ঠাকুর বাড়িতে যা দেখবেন
সবুজ ছোট বড় বৃক্ষাদির শাখা-প্রশাখা আর পত্রপল্লবে ঘেরা চারদিক। তারই ফাঁকে ফাঁকে উঁকি দিচ্ছে লাল রঙের বিশাল আকৃতির একাধিক দালান। মাঝে বিশাল সবুজ চত্বর। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দাদা প্রিন্স দ্বারাকানাথ ঠাকুর তাঁর দাদা নীলমনি ঠাকুর এই বাড়িটি প্রতিষ্ঠিত করেন। বর্তমানে পুরো এলাকাটি ‘জোড়াসাঁকো ঠাকুর বাড়ি’ নামে বিখ্যাত। প্রবেশপথের ডান দিকের একটু ভেতরে একচালা গ্যারেজে রাখা আছে কবির ব্যবহৃত গাড়ি। খোলার দিনে এই জায়গা প্রতিদিন অসংখ্য ছাত্রছাত্রীর উপস্থিতিতে মুখর হয় ওঠে। ভেতরে প্রবেশের পর পর শুনতে পাবেন কোথায় যেন মৃদু শব্দে সঙ্গীত বেজে চলেছে অসাধারণ পরিবেশ। প্রবেশের পর রবিঠাকুরের ব্যবহৃত জিনিসপত্রগুলো উপরতলায় বিভিন্ন ঘরে খুব সুন্দর করে সাজিয়ে রাখা হয়েছে। শুরুতেই কবিগুরুর খাবার ঘর। এরপর শয়ন কক্ষ। প্রতিটি ঘরেই রয়েছে রবিঠাকুরের স্মৃতিচিহ্ন।
কোনো কোনো ঘরে তাঁর ব্যবহৃত পোশাক, আরাম কেদারা, বইপত্র, বিলেত থেকে আনা নানা জিনিসপত্র। রয়েছে তাঁর পরিবারের সদস্যদের ছবি। একটি ঘরে রয়েছে রবিঠাকুরকে নিজ হাতে লেখা মৃণালিনী দেবীর চিঠি, তার ওপর মৃণালিনী দেবীর একটি বড় ছবি টানানো। এই ঘরেই মৃণালিনী দেবীর শেষ শয্যা পাতা হয়েছিল। এর সাথের খাবার কক্ষটিও দেখে মনে হবে কবি এখানেও খেতে খেতে গাইতেন। কারণ খাবার টেবিলের ধরনটাও সংগীত কক্ষের মতো করে সাজানো। পরের ঘরটিতে কবি শুয়ে কাটাতেন জীবনের শেষ সময়টা। ঠিক এর পাশের একটি কক্ষে কবি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছিলেন। মোট চারটি ভবনের ১৮টি গ্যালারিজুড়ে রবীন্দ্রভারতী মিউজিয়াম।
১৯৪১-এর ৩০ জুলাই এ ঘরেই কবিগুরু তাঁর শেষ কবিতা, ‘তোমার সৃষ্টির পথ’-এর ডিক্টেশন দিয়েছিলেন। এর মাত্র সাতদিন পর তিনি পাড়ি জমান না-ফেরার দেশে। ৫টায় বন্ধ হয়ে যায় ঠাকুর বাড়ির দরজা।
কোথায় থাকবেন
কলকাতায় আপনি যে পথেই আসেন না কেন শহরে অনেক ভালো হোটেল রয়েছে। আপনি সহজেই ৫০০ –এক হাজার ৫০০ রুপির মধ্যে ভালো হোটেল পেয়ে যাবেন। তবে এর চেয়ে বেশি দামের হোটেলও রয়েছে এখানে। কয়েকটি হোটেলের নাম ও ঠিকানা –
হোটেল মণীষ, ঠিকানা : পি – ১, ডবসন লেন, দীঘা বাস স্ট্যান্ডের বিপরীতে, ফোন নং : ০৩৩ – ২৬৬৬৬৩১৯, ২৬৬৬৬৩২০
সর্বাধিক রুম ভাড়া : ১৫০০/- রুপি , সর্বনিম্ন রুম ভাড়া : ৫০০/- রুপি।
দ্য নিউ অশোকা হোটেল, ঠিকানা : ১৯/১/১/৪, সত্যনারায়ণ মন্দিরের নিকট, মুখরাম কানোরিয়া রোড , ফোন নং : ০৩৩ – ২৬৬৬৪২০৯
সর্বাধিক রুম ভাড়া : ১২০০/- রুপি, সর্বনিম্ন রুম ভাড়া : ৫০০/- রুপি (আইএনআর)।
এভি হোটেলস প্রাইভেট লিমিটেড, ঠিকানা : ১, বড়বাজার পুলিশ স্টেশনের নিকট, শম্ভু মল্লিক লেন, বড়বাজার, ফোন নং : ০৩৩ – ২২৬৮৭৭৪১/৪৬/৪৮/৪৯
সর্বাধিক রুম ভাড়া : ১২০০/- রুপি, সর্বনিম্ন রুম ভাড়া : ৫০০/- রুপি।
ক্যাপিট্যাল গেস্ট হাউস, ঠিকানা : ১১ – বি, চৌরঙ্গি লেন, কলকাতা, দূরাভাষ (ফোন নং) : ০৩৩ – ২২৫২৫২২৫, ২২৫২০৫৯৮
সর্বাধিক রুম ভাড়া : ১২০০/- রুপি, সর্বনিম্ন রুম ভাড়া : ৫০০/- রুপি।