ঈদের ছুটিতে

গন্তব্য হারং হুরং, খরচ ১৯০০ টাকা

Looks like you've blocked notifications!

সপ্তাহের পাঁচ-ছয়দিন অফিসের কাজে ডুবে থাকতে হয় আপনাকে। তাই  ছুটিতে আপনার মন চাইবে বের হয়ে যাই নতুন কিছুর সন্ধানে।আর তেমনি এক প্রাচীন সুড়ঙ্গের  নাম হারং হুরং। সিলেট শহরের মালনিছড়া চা বাগানের আসে পাশে অবস্থিত এই সুড়ঙ্গ। সিলেটি ভাষায় ‘হারং’ মানে সাঁকো বা বিকল্প পথ আর ‘হুরং’ মানে ‘সুড়ঙ্গ’। অর্থাৎ ‘হারং হুরং’ মানে হলো বিকল্প সুড়ঙ্গ পথ। কথিত আছে  ১৩০৩ সালে হজরত শাহজালাল (রহ)-এর সিলেটে আগমনের খবর পেয়ে রাজা গৌড় গোবিন্দ তাঁর সৈন্যবাহিনীসহ পেঁচাগড় গিরিদূর্গের সুড়ঙ্গপথ দিয়ে পালিয়ে যাওয়ার পর নিরুদ্দেশ হয়ে যান।

অবস্থান

সিলেট শহর থেকে ২০ মিনিটের রাস্তা মালনিছড়া চা বাগান। সেখান থেকে গাইডের সাহায্যে ভেতরে প্রবেশ করতে হবে। গাইড কে বলতে হবে  হারং হুরং সুড়ঙ্গ যাব। তেলাহাটির দক্ষিণে হিলুয়াছড়া চা বাগানের ১৪ নং সেকশনের পাশে অবস্থিত হারং হুরং। বড় কোনো গাড়ি নিয়ে প্রবেশ করতে পারবেন না। বড় কোনো দল নিয়ে গেলে অবশ্যই আগে বাগান কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে অবশ্যই অনুমতি নিতে হবে। বলে রাখা ভালো ভেতরে কোনো মোবাইল নেটওয়ার্ক পাবেন না।

যা দেখবেন   

দুই পাশে কম উঁচু টিলার সুবিন্যস্ত চায়ের বাগান, তার মাঝে সোজা আকাশের দিকে উঠে যাওয়া শেড গাছ মিলে আশ্চর্য এক সবুজের ধারা। সঙ্গে বৃষ্টির ফলে বাগানের ছরাগুলোতে পানির প্রবাহ বেশি আর পানির মোহনীয় শব্দ। সঙ্গে পাবেন বাগানের আঁকাবাঁকা পথ। বাঁশ ঝাড় ফাঁকে সূর্যদেবের খেলা। তেলিহাটি চা বাগানে প্রবেশের পর  ছোট বাজার পাবেন সঙ্গে কিছু চায়ের দোকান, চা শ্রমিকদের কিছু ঘর, রাগীব-রাবেয়া প্রাথমিক বিদ্যালয় আর একটা মসজিদ।

হারং হুরং-এ তিনটি সুড়ঙ্গ। সুড়ঙ্গগুলো বেশ অন্ধকার। একদিকে সবুজ পাহাড়ি অরণ্য, আরেকদিকে সুড়ঙ্গ। ভেতরে বেশ অন্ধকার আর ভয়াল পরিবেশ। মূল সুড়ঙ্গটি বালি ভর্তি হয়ে প্রায় বন্ধ হওয়ার উপক্রম। থেমে থেমে টিলা চুইয়ে আসা পানির টিপ টিপ শব্দ আর বাদুরের ডানা ঝাপটানোর আওয়াজ নিশ্চিত ভাবে কোনো হরর ছবির কথা মনে করিয়ে দেবে।বড় সুড়ঙ্গটায় দাঁড়ানো যায়, তবে একটু এগুলেই মাটির দেয়াল দিয়ে বন্ধ করা। প্রচণ্ড স্যাঁতস্যাঁতে, দেয়ালে শ্যাওলা। বেশি ভেতরে যাওয়া ঝুঁকিপূর্ণ। বিষাক্ত সাপ, পোকামাকড় থাকা খুবই স্বাভাবিক।

গুহা নিয়ে প্রাচীন কাহিনী

হারং হুরং নিয়ে নানা লোককাহিনী স্থানীয়দের মাঝে প্রচলিত আছে। অনেকে বলে জৈন্তা পর্যন্ত এ সুড়ঙ্গ গেছে। যারাই এর মধ্যে প্রবেশ করেছে তাদের কেউই নাকি জীবিত বের হয়ে আসেনি। আর যদিও বা বের হয়েছে তারা কিছুদিনের মধ্যে অপ্রকৃতস্থ হয়ে মারা গেছে। শোনা যায় ভারত থেকে বেশ অনেক বছর আগে তিনজন তান্ত্রিক এখানে প্রবেশ করেছিলেন তাদের মধ্য থেকে মাত্র একজন ফিরে এসেছেন আর খুব অল্পদিন বেঁচে ছিলেন। মৃত্যুর আগপর্যন্ত তিনিও অস্বাভাবিক ছিলেন। এ ছাড়া সিলেটের একজন ধনাঢ্য ব্যবসায়ী নাকি খননের উদ্যোগ নিয়েছিলেন, পরবর্তী সময়ে তিনি অস্বাভাবিক সপ্ন দেখে সংস্কারকাজ মাঝপথে বন্ধ করে দেন। এই গ্রামের এক বুড়ো জোয়ান কালে ঢুকেছিল। এরপর পাগল হয়ে যান,  তেলিহাটির বিখ্যাত কবিরাজও তাঁর চিকিৎসা করতে পারেননি।

বাগানের লোকদের কাছে হারং হুরং সুরঙ্গ গৌর গবিন্দ রাধা গুহা নামে অধিক পরিচিত। তারা প্রতি শনি মঙ্গলবারে পূজা দেয় এখানে।

কীভাবে যাবেন

ঢাকার সায়েদাবাদ, ফকিরাপুল, রাজারবাগ ও মহাখালী বাসস্ট্যান্ড থেকে গ্রিনলাইন, শ্যামলী, এনা, হানিফ বা বিআরটিসি বাসে অথবা ট্রেনে কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে সকালে আন্তনগর পারাবাত, দুপুরে জয়ন্তিকা ও কালনী এবং রাতে উপবন সিলেটের পথে ছোটে ভাড়া ৪০০ থেকে এক হাজার ২০০ টাকার মধ্যে । শহর থেকে মালনিছড়া চা বাগান ভাড়া রিকশায় ৪০ টাকা, সিএনজি অটোরিকশা ৮০- ১০০ টাকা । সিলেটের আম্বরখানা থেকে অটোরিকশায় সেখানে যাওয়া যায়। মালনিছড়া চা বাগানের মূল কার্যালয়ের সামনে গাইড পাবেন তাদের নিয়ে  সিএনজি বা টমটমে তেলিহাটি, ভাড়া নেবে জনপ্রতি ২০ টাকা। রিজার্ভও যেতে পারেন আম্বরখানা থেকে তেলিহাটি। ২০০ টাকার মতো নেবে, আপডাউন ৪০০ টাকা তবে অবশ্যই গাইড নেবেন। অচেনা স্থান, তার ওপর নিরাপত্তার সমস্যা। ১০০ থেকে ২০০ টাকার মধ্যেই পাবেন গাইড। সাবধানে হাঁটবেন, না হলে পিছলে পড়তে পারেন।

বাইকে যেতে পারলে সবচেয়ে ভালো কারণ বাইকে একেবারে স্পটে যাওয়া যায় আর সময় ও অনেক কম লাগে। সেক্ষেত্রে অবশ্য মালনিছড়া বাগান  থেকে অনুমতি নেওয়া বাঞ্ছনীয়।

থাকবেন কোথায়

সিলেটে অনেক ভালো কিছু হোটেল এবং রিসোর্ট আছে। তবে এখানে মধ্যম বাজেটের ভালো কিছু হোটেলের ডিটেইলস দেওয়া হলো :

১. হোটেল সুপ্রিম, মিরাবাজার, সিলেট : নিরিবিলি পরিবেশে পরিচ্ছন্ন পারিবারিক হোটেল। বিনা দ্বিধায় পরিবারসহ উঠতে পারেন এখানে।

রুম ভাড়া : এসি ১৫৩০/- (সিঙ্গেল), ১৬২০ টাকা (ডাবল/টুইন )

২. হোটেল ডালাস, জেল রোড, সিলেট : এটিও মোটামুটি কম বাজটে ভালো মানের একটি হোটেল।

রুম ভাড়া : এসি এক হাজার ৪০০/- (সিঙ্গেল), এক হাজার ৭০০ টাকা (ডাবল/টুইন )। নন এসি : এক হাজার খেকে এক হাজার ৫০০ টাকা

৩. হোটেল ব্রিটানিয়া, শাহজালাল রোড, আম্বরখানা, সিলেট

রুম ভাড়া : এসি এক হাজার ৫১৫/- (সিঙ্গেল), এক হাজার ৮৫০ টাকা (ডাবল/টুইন)। নন এসি : ৭১৫ এবং এক হাজার ৩২৬ টাকা

৪. হোটেল অনুরাগ, ধোপাদীঘি, সিলেট : মোটামুটি মানের হোটেল। তবে ভাড়া কিছুটা কম।

রুম ভাড়া : এসি এক হাজার ৫০০/ (ডাবল/টুইন )। নন এসি : ৮০০/১০০০ টাকা