ঈদের ছুটিতে
১২০ টাকায় কাছের দূরত্বে
নগরজীবনের ক্লান্তি আপনাকে ঘিরে ধরেছে? মন চাইছে কি কোথাও ঘুরে আসতে? কিন্তু এত সময় কোথায় তাই না? তাই আপনাদের জন্য একদম কাছের দূরত্ব। মাত্র পঞ্চাশ মিনিটে পৌঁছে যাবেন গন্তব্যে। আর খরচের কথা ভাবছেন? মাত্র ১২০ টাকায় ঘুরে আসতে পারবেন। বলছি হাজীগঞ্জ দুর্গের কথা। হাজীগঞ্জ দুর্গ নারায়ণগঞ্জ শহরের হাজীগঞ্জ এলাকায় শীতলক্ষ্যার পশ্চিম তীরে অবস্থিত।
ইতিহাস
হাজীগঞ্জ দুর্গ আবার খিজিরপুর দুর্গ নামেও পরিচিত। জলদুর্গের বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত দুর্গটি শীতলক্ষ্যার সঙ্গে পুরোনো বুড়িগঙ্গার সঙ্গমস্থলে নির্মিত হয়। সম্ভবত মোগল সুবেদার ইসলাম খান কর্তৃক ঢাকায় মোগল রাজধানী স্থাপনের পরে নদীপথে মগ ও পর্তুগিজ জলদস্যুদের আক্রমণ প্রতিহত করার উদ্দেশ্যে দুর্গটি নির্মিত হয়। ১৫৮০ খ্রিস্টাব্দে মোগল শাসক ঈশা খাঁ মগ ও পর্তুগিজ জলদস্যুদের কবল থেকে এ জনপদকে রক্ষা করার জন্য শীতলক্ষা, ব্রহ্মপুত্র, মেঘনা নদীর মিলনস্থলে কেল্লাটি নির্মাণ করেন। ১৭০০ শতাব্দী বা তারও আগে নির্মিত এ দুর্গের সঠিক স্থপতির নাম তেমন পরিষ্কারভাবে কোথাও নেই। তবে ধারণা করা হয়, সম্ভবত সুবেদার ইসলাম খানের সঙ্গে সংঘর্ষকালীন ঈশা খাঁ এ দুর্গ নির্মাণ করেছিলেন। তাঁর মৃত্যুর পর রাজধানী সোনারগাঁয়ের নিরাপত্তার জন্য মীর জুমলা অধিকাংশ সময় অবস্থান করতেন এ কেল্লায়। প্রায় দুই কিলোমিটার জায়গা নিয়ে বিস্তৃত এ দুর্গ।
যা দেখতে পাবেন
ইট-সুরকির তৈরি ছোট চতুর্ভুজাকৃতি দুর্গ। দুর্গটি বেশ চওড়া, প্রাচীর দিয়ে ঘেরা। দুর্গের প্রাচীরে রয়েছে বন্দুক বসিয়ে গুলি চালানোর ফোকর। দুর্গের উত্তর দেয়ালেই একমাত্র প্রবেশপথ ‘দুর্গ তোরণ’। কিছুটা উঁচু এই দুর্গে ঢুকতে হলে আপনাকে প্রবেশ তোরণের প্রায় ২০টি সিঁড়ি ডিঙ্গোতে হবে। আর তোরণ থেকে দুর্গ চত্বরে নামতে হবে আটটি ধাপ। প্রাচীরের ভেতরে চারদিকে চলাচলের পথ রয়েছে প্রাচীর ঘেঁষেই। দুর্গের পূর্ব-দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিম কোনায় দুটি বুরুজ আছে। আরেকটি বুরুজ রয়েছে দক্ষিণ পাশে। তা ছাড়া উত্তর-পূর্ব ও উত্তর-পশ্চিম কোনায় ছোট দুটি বুরুজ অংশ আছে, যেখানে একসঙ্গে কয়েকজন বন্দুক বসিয়ে গুলি চালাতে পারত। দুর্গের পূর্ব-দক্ষিণ কোণে রয়েছে একটি ওয়াচ টাওয়ার। টাওয়ারে ঢোকার জন্য ছিল পূর্বমুখী ছোট্ট একটি দরজা। ভেতরে ঠিক মাঝখানে একটি মোটা গোল পিলার, পিলারের সঙ্গে ছিল গোলাকার সিঁড়ি। দুর্গে চত্বরের পশ্চিম দিকে আছে বেশ বড় একটি আমগাছ, আর পূর্ব পাশে আছে বড় একটি লিচুগাছ। লিচুগাছটি বিচিত্রভাবে বেঁচে আছে তার অর্ধেক খয়ে যাওয়া দেহ নিয়ে।
আরো যা দেখতে পাবেন
হাজীগঞ্জ দুর্গ থেকে কিছুদূর এগুলেই পাবেন বিবি মরিয়মের সমাধি ও মসজিদ। হাজীগঞ্জ এলাকায় অবস্থিত বলে এ মসজিদটি হাজীগঞ্জ মসজিদ নামেও পরিচিত। ঐতিহাসিকদের মতে, শায়েস্তা খাঁ ১৬৬৪ থেকে ১৬৮৮ সালের মধ্যবর্তী একটি সময়ে এ মসজিদটি নির্মাণ করেন। মসজিদের কাছে তাঁর কন্যা বিবি মরিয়মের সমাধি রয়েছে বলেই মসজিদটির নাম বিবি মরিয়ম মসজিদ এবং এ নামেই এটি বেশি পরিচিত। মোগল আমলের নিদর্শন পাওয়া যায় এ সমাধিতে। দুর্গটি বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের অধীনে সংরক্ষিত।
পথের ঠিকানা
ঢাকার যে কোনো স্থান খেতে আপনাকে প্রথমে যেতে হবে, গুলিস্তান, যাত্রাবাড়ী বা কমলাপুর। গুলিস্তান বা যাত্রাবাড়ী থেকে নারায়ণগঞ্জ যেতে পারবেন এসি বা ননএসি বাসে। ভাড়া পড়বে ৩৫ থেকে ৪৫ টাকার মধ্যে। আর কমলাপুর থেকে যাবেন ট্রেনে, ভাড়া ১০ টাকার বেশি নয়। কম-বেশি ৪৫ মিনিটে পৌঁছে যাবেন ঢাকা থেকে ২২ কিলোমিটার দূরের নারায়ণগঞ্জে। নারায়ণগঞ্জ বাস বা বা ট্রেন স্টেশন থেকে ১৫ থেকে ১৮ টাকায় রিকশা ভাড়া নেবে হাজীগঞ্জ কেল্লায় যেতে।