ঈদের ছুটিতে
বনে-জঙ্গলে
ক্লান্তি ঝেড়ে ফেলে দিতেই যান্ত্রিক জীবনের ব্যস্ততার ফাঁকে সবার উচিত কোথাও না কোথাও ঘুরে আসা। আর ভ্রমণে তৃপ্তি পেতে বন-জঙ্গলে ঘুরে দেখার মজাই আলাদা। তাই এবারের ঈদে স্বল্প সময়ে ভ্রমণের জন্য রেমা-কালেঙ্গা উৎকৃষ্ট স্থান।
বনে যা দেখতে পাবেন
এই অভয়ারণ্যে ৬৩৮ প্রজাতির উদ্ভিদ, গাছপালা, লতাপাতা আছে। উল্লেখযোগ্য উদ্ভিদগুলোর মধ্যে রয়েছে—আওয়াল, সেগুন, কাঁকড়, নেউড়, হারগাজা, গন্ধরই, হরীতকী, বহেরা, জাম ডুমুর, কাঁঠাল, চামকাঁঠাল, কাউ, কদম, রাতা, চিকরাশি, চাপালিশ, নিম, বনমালা ইত্যাদি। আছে সাত প্রজাতির উভয়চর প্রাণী, ১৮ প্রজাতির সরীসৃপ, ১৬৭ প্রজাতির পাখি।
উল্লেখযোগ্য পাখিগুলো হচ্ছে—ভিমরাজ, পাহাড়ি ময়না, কাও ধনেশ, বনমোরগ, ফোটা কান্টি সাতভারলা, শ্যামা, শালিক, শামুক খাওরি, টুনটুনি ইত্যাদি। ৩৭ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী আছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য—কালো বন্যশূকর, সাদা বন্যশূকর, বানর, হনুমান, মুখপোড়া হনুমান, খরগোশ, ছোট হরিন, মেছোবাঘ, মেছোবিড়াল প্রভৃতি। ভাগ্য ভালো থাকলে হরেক রকমের প্রাণীর দেখা পাবেন আপনি। ভিন্ন এক জগতের আবহ ভেসে উঠবে আপনার চোখের সামনে।
বলে রাখা ভালো, ছবির মতো সুন্দর এ বনাঞ্চল পর্যবেক্ষণে রয়েছে তিনটি ট্রেইল বা পথ। আপনি ত্রিশ মিনিট, এক ঘণ্টা, তিন ঘণ্টার ট্রেইল বা পথের মাঝে যেকোনোটি বেছে নিতে পারেন। চলতি পথে কিছুদূর এগিয়ে গেলে দেখতে পাবেন রেমা কালেঙ্গায় শাহাদাতবরণকারী বীর উত্তম আবদুল মান্নান সাহেবের কবর। তিনি এখানে সম্মুখ যুদ্ধে নিহত হয়েছেন। গভীর বনে গিয়ে দেখা পেতে পারেন বন মোরগের ডিমের। অথবা নাকে লাগতে পারে ঝাঁজালো গন্ধ, যা হলো কোনো বিষাক্ত সাপের শ্বাস-প্রশ্বাস। দেখা পাবেন অসম্ভব সুন্দর একটি লেক। লেকের চারপাশ এতই প্রাকৃতিক যে মনেই হবে না এটা কৃত্রিম। বন্যপ্রাণীদের খাবার পানির চাহিদা মেটাতেই এটি তৈরি করা হয়েছে। লেকের পাশে রয়েছে একটা ওয়াচ টাওয়ার। ইচ্ছে করলে উঠে যেতে পারবেন টাওয়ারে। ওপর থেকে পুরো বনভূমি দেখার মজাই আলাদা। যত দূরে চোখ যাবে শুধুই প্রত্যক্ষ করবেন দুর্ভেদ্য জঙ্গল।
বনের দৈর্ঘ্য
রেমা, কালেঙ্গা আর ছনবাড়ির এক হাজার ৭৯৫ হেক্টর জঙ্গল নিয়ে রেমা-কালেঙ্গা বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য। ১৯৮১ সালে এই রিজার্ভ ফরেস্টের এক হাজার ৯৫ হেক্টর এলাকাকে বন্যপ্রাণীর অভয়ারণ্য হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ১৯৯৬ সালে ফরেস্টের আরো কিছু জমি বৃদ্ধি করে মোট এক হাজার ৭৯৫ হেক্টর এলাকাকে অভয়ারণ্য হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এই বনে তিনটি আধিবাসী সম্প্রদায়ের বসবাস। ত্রিপুরা, সাঁওতাল, উড়ং—এই তিন সম্প্রদায় মিলেমিশে এখানে বসবাস করছে যুগ যুগ ধরে, যা দেশের অন্য কোথাও বিরল।
যাবেন কীভাবে
রেমা-কালেঙ্গা অভয়ারণ্যে দুভাবে যাওয়া যায়। ঢাকা থেকে সিলেটগামী বাস কিংবা ট্রেনে চড়ে নামতে হবে শায়েস্তাগঞ্জ। সেখান থেকে অটোরিকশা চেপে যেতে হবে কালেঙ্গা। বাসে শায়েস্তাগঞ্জের ভাড়া আড়াইশ থেকে চারশ টাকা। শায়েস্তাগঞ্জে থামে সিলেটগামী আন্তনগর ট্রেন উপবন এক্সপ্রেস। বুধবার ছাড়া সপ্তাহের প্রতিদিন রাত ১০টা মিনিটে ছাড়ে এই ট্রেন। ভাড়া ১৭০ থেকে ৬৭৩ টাকা। শায়েস্তাগঞ্জ থেকে কালেঙ্গার ট্যাক্সি ভাড়া ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা। কালেঙ্গা যাওয়ার অন্য পথটি হলো— ঢাকা থেকে বাস কিংবা ট্রেনে শ্রীমঙ্গল। সেখান থেকে জিপে চড়ে কালেঙ্গা। শ্রীমঙ্গল থেকে গেলে জঙ্গলের ভেতরের দীর্ঘ পথটি চলতে ভালো লাগবে সবার।