ঈদে ঘোরাঘুরি
ইতিহাসের সাক্ষী বালিয়াটি প্রাসাদে
টানা কর্মব্যস্ততা আর যান্ত্রিক শহরের বিষণ্ণতায় নিশ্চই মন চাইছে কোথাও ছুট লাগাতে। কিন্তু সময়ের অভাবে হয়ে উঠছে না, তাই না। এ ক্ষেত্রে ছোট্ট এক ভ্রমণও হয়ে উঠতে পারে আপনার একঘেয়েমি দূরের সেরা টনিক।
মনের অবসাদ দূর করতে ভ্রমণ বা বিনোদনের কোনো বিকল্প নেই। আর তা যদি হয় প্রাচীন পুরাকীর্তি বা রাজাদের বাড়ি, তবে তো কথাই নেই। যান্ত্রিক জীবনে শত ব্যস্ততার বাইরে ভ্রমণপ্রেমীদের জন্য আদর্শ ভ্রমণ স্থান হতে পারে রাজধানীর অদূরে মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলার বালিয়াটি প্রাসাদ, যা বালিয়াটি জমিদারবাড়ি নামে বেশি পরিচিত।
মানিকগঞ্জ জেলা শহর থেকে প্রায় আট কিলোমিটার পূর্ব দিকে ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে বেশ কিছু সুরম্য প্রাচীন স্থাপনা। সময়ের ব্যবধানে ভবনগুলো ধ্বংসের প্রহর গুনলেও আজও ঠায় দাঁড়িয়ে জানান দেয় বালিয়াটির জমিদারদের সেকালের সেই বিত্তবৈভবের কথা।
ইতিহাস
আঠারো শতকের প্রথম ভাগ থেকে বিশ শতকের প্রথম ভাগ। প্রায় দুইশ বছরের এই দীর্ঘ সময়ে বালিয়াটির জমিদারদের সুখ্যাতি ছিল। প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের সাইনবোর্ড আর সমরেন্দু সাহা লাহোরের লেখা বালিয়াটির যত কথা বই থেকে জানা যায়, আঠারো শতকের মধ্যভাগে জনৈক লবণ ব্যবসায়ী জমিদার গোবিন্দরাম সাহা বালিয়াটি জমিদারবাড়ি নির্মাণ করেন। আর ক্রমান্বয়ে তার উত্তরাধিকারীরা এখানে নির্মাণ করেন আরো বেশ কিছু স্থাপনা। মোট সাতটি স্থাপনা নিয়ে এই জমিদারবাড়িটি অবস্থিত।
যা দেখবেন
চারটি প্রবেশমুখসহ প্রাচীর ঘেরা অসম্ভব সুন্দর দালান। প্রবেশ তোরণ দিয়ে ভেতরে ঢুকলেই পাশাপাশি চারটি দালান, পাশেই নাট্যমঞ্চ। পূর্ব দিকের একটি অংশ পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেলেও বাকি চারটি টিকে আছে এখনো। মূল ভবনগুলোর সামনের দেয়ালজুড়ে নানা রকম কারুকাজ আর মূর্তি এখনো রয়েছে। ১৯৮৭ সালে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর বালিয়াটি প্রাসাদকে সংরক্ষিত পুরাকীর্তি ঘোষণা করে। সামনের চার দালানের প্রতিটি স্তম্ভই কারুকাজ করা। বারান্দায় লোহার রেলিং, কাঠের মেঝে ইত্যাদি সবই মনে করিয়ে দেয় উনিশ শতকের কথা।
একটি দালানের ‘রংমহল’ এখন জাদুঘর। কাঠের সিঁড়ি বেয়ে শব্দ করে উঠতে হলো রংমহলে। সিঁড়িটাও ২০০ বছরের পুরোনো। দোতলায় সাজানো আছে এ প্রাসাদের মালিকদের কিছু জিনিসপত্র। টাকা রাখার বড় বড় সিন্দুক অনেকগুলো। লণ্ঠন, হ্যাজাকবাতি, পিদিম, পানির পাত্র রাখার কাঠের পাদস্তম্ভ, গ্রামোফোন যন্ত্র থরেথরে সাজানো। বিস্ময় লাগে বড় বড় আয়না দেখে। বয়স ২০০, প্রতিবিম্ব একেবারেই স্ফটিক স্বচ্ছ, যা এ যুগের আয়নাগুলো ১০ বছর বয়স হলেই আর দেখতে পারে না। কাঠের কারুকাজ করা চেয়ার, পালঙ্ক সবকিছুই নিয়ে যায় সেই সময়ে। সিংহ দরজা পেরিয়ে বাইরে বেরোলেই দীর্ঘ পুকুর। পুকুরের জলে বালিয়াটি প্রাসাদের প্রতিচ্ছবি আজও মন ভরিয়ে দেয়। প্রতিটি প্রাসাদের সামনে টানা বারান্দা লোহার কারুকাজ শোভিত। তবে ক্ষয়ে ও নষ্ট হয়ে অনেক নকশা ও আর শৈলী এখন ঠিকমতো বোঝা যায় না। মূল ভবনের দেয়ালগুলো প্রায় ২০ ইঞ্চি পুরু। এসব দেয়াল চুন-সুড়কি ও শক্তিশালী কাদা-মাটির মিশেলে তৈরি। বাড়ির ছাদে লোহার রডের পরিবর্তে ব্যবহার করা হয়েছে বেশ শক্তিশালী লোহার পাত। অসম্ভব সুন্দর একটি জায়গা না এলে বোঝা যাবে না।
কীভাবে যাবেন
রাজধানী থেকে দিনে দিনেই ঘুরে আসা যায় বালিয়াটি জমিদারবাড়ি থেকে। ঢাকার গাবতলী বাসস্ট্যান্ড থেকে সরাসরি সাটুরিয়া যায় জনসেবা বাস। ভাড়া ৫০ থেকে ৬০ টাকা।
এ ছাড়া দেশের যেকোনো স্থান থেকে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের কালামপুর স্টেশনে পৌঁছে সেখান থেকেও লোকাল বাসে সাটুরিয়া যাওয়া যায়।
সাটুরিয়া স্টেশন থেকে বালিয়াটি জমিদারবাড়ির রিকশা ভাড়া ৩০ থেকে ৪০ টাকা। নিজস্ব গাড়ি নিয়ে সরাসরি জমিদারবাড়ির সামনেই যাওয়া যায়।