পূজার ছুটিতে

৭০০ টাকায় ঘুরে আসুন ৩০০ বছরের পুরোনো পূজায়

Looks like you've blocked notifications!

সিলেটের মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার পাঁচগাঁওয়ে উদযাপিত হয় উপমহাদেশের একমাত্র লাল বর্ণের জাগ্রত দুর্গা দেবীর পূজা। প্রায় ৩০০ বছর ধরে এই পূজা অুনষ্ঠিত হচ্ছে পাঁচগাঁওয়ে। দুর্গার রং লাল হওয়ায় দেবী দর্শনের জন্য দেশ ও দেশের বাইরে থেকেও অনেক পূণ্যার্থী ছুটে আসেন এখানে। দেশের বিভিন্ন জেলার বিভিন্ন প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে ছুটে আসেন হিন্দু ধর্মাবলম্বী ভক্তরা। দেশের বাইরে থেকে বিশেষ করে ভারতের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্য থেকেও ভক্তরা আসেন এখানে। মৌলভীবাজার জেলা সদর থেকে প্রায় ১৭ কিলোমিটার ও রাজনগর উপজেলা সদর থেকে প্রায় সাড়ে ৪ কিলোমিটার উত্তরে পাঁচগাঁও গ্রামে স্বর্গীয় সর্বানন্দ দাসের বাড়িতে পালিত হয়ে আসছে ব্যতিক্রম এই পূজা। প্রতি বছর পূজার সময় মহিষ বলির পাশাপাশি কয়েক শত পাঁঠা বলি দেওয়া হয়।

ইতিহাস

সর্বানন্দ দাস আসামের শিবসাগরে মুন্সিপদে চাকরি করতেন। তিনি ছিলেন সাধক পুরুষ। একবার আসামের কামরূপ কামাখ্যার বাড়িতে গিয়ে পূজার জন্য পাঁচ বছরের একটি মেয়ে চাইলে স্থানীয় লোকজন তাকে একটি মেয়ে দেন। মহাষ্টমীর দিনে কুমারীকে ভগবতীর জ্ঞানে ছয় ঘণ্টা পূজা করার শেষে প্রণাম করার সময় সর্বানন্দ দাস দেখেন, কুমারীর গায়ের রং পরিবর্তন হয়ে লালবর্ণ ধারণ করেছে। এই দৃশ্য দেখার পর মাকে জিজ্ঞাসা করেন, মা আমার পূজা সুপ্রসন্ন হয়েছে কি?  উত্তরে ভগবতী বলেন, হ্যাঁ তোর পূজা সিদ্ধ হয়েছে। এই বর্ণে তোর গ্রামের বাড়ি পাঁচগাঁও-এর পূজামণ্ডপে আবির্ভূত হয়ে ছিলাম। এখন থেকে ভগবতীকে লাল বর্ণে পূজা করবি। পরবর্তী বছর সর্বানন্দ দাস তাঁর নিজ বাড়ি পাঁচগাঁওয়ে শারদীয় দুর্গা পূজার আয়োজন করেন। কুমারীর গায়ের সেই লাল বর্ণের সঙ্গে সাদৃশ্য রেখে লাল বর্ণে রঞ্জিত করেন মাতৃমূর্তিকে। এরপর থেকে প্রায় ৩০০ বছর ধরে আমাদের বাড়ির মণ্ডপে লাল দুর্গার পূজা হচ্ছে। এখনে পূজা শুরুর পর থেকে একবারও বাদ পড়েনি। শুধু ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় মূর্তি নির্মাণ করে পূজা করা সম্ভব হয়নি।’

যা দেখবেন

এই দুর্গাপূজা মণ্ডপকে ঘিরে আশপাশের প্রায় এক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে মেলা বসে। প্রায় ৪০০ দোকানে বেচাকেনা হয়। বই, ফার্নিচার, খই, মুড়ি-মুড়কি, বাতাসা, জিলাপি, মিষ্টি, খেলনা বিভিন্ন রকমের পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসে বিক্রেতারা। মন্দিরে চত্বরে কেউ হোমযজ্ঞ দিচ্ছেন, কেউ আগরবাতি জ্বালাচ্ছেন, কেউ দেবীকে শাড়ি, সোনা-রূপার তৈরি লকেট, চুড়ি, কানের দুল, মাথার চূড়া উপহার দেন। কেউ কেউ নগদ টাকাও দেন। কেউবা পশু-পাখি বলি দেন। প্রতি বছর পূজাতে প্রায় সাড়ে ৫০০ পাঠা, ৬টি মহিষ ও প্রায় ৭০০ জোড়া কবুতর দেবীর নামে বলি দেওয়া হয়। এখানে দুর্গা মণ্ডপ একটি, নাট মন্দির একটি, যজ্ঞ মন্দির একটি, যাত্রী নিবাস একটি, ভোগ মন্দির একটি, ফুল নৈবদ্য রাখার ঘর একটি, শিব মন্দির একটি এবং পাকা ঘাটসহ পুকুর একটি রয়েছে।

যেভাবে যাবেন

দেশের যেকোন প্রান্ত থেকে ট্রেন, বাস অথবা প্রাইভেট গাড়ি নিয়ে আসতে হবে সিলেটের মৌলভীবাজারে। মৌলভীবাজার  জেলা সদর থেকে প্রায় ১৭ কিলোমিটার ও রাজনগর উপজেলা সদর থেকে প্রায় সাড়ে চার কিলোমিটার উত্তরে পাঁচগাঁও গ্রাম সেখানেই দেখা পাবেন দেবী দুর্গার। আপনি যে মাধ্যমেই আসেন না কেন মাত্র ৭০০ টাকার মধ্যে ঘুরে আসতে পারবেন পাঁচগাঁওয়ে।