ছুটির দিনে

অলস দুপুরে বুড়িগঙ্গার ঢেউয়ের দোলায়

Looks like you've blocked notifications!

ভ্রমণের নানা অনুষঙ্গ বা প্রকৃতির স্পর্শ আছে এমন কোনো জায়গা খুঁজে বের করতে চাইলে প্রথমেই চলে আসে নদীর কথা। আর নদী হলো যে কোনো ভ্রমণের ক্ষেত্রে সবচেয়ে প্রার্থিত একটা জায়গা। একটু লক্ষ করলেই দেখা যায়, পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই, তাদের মূল পর্যটন ভাবনাটা গড়ে উঠেছে নদীকে ঘিরে। কারণ নদীর কাছে যত সহজে পৌঁছানো যায় আর যতটা নির্ভার হয়ে কিছু মুহূর্ত কাটানো যায়, সেটা অন্য কোনো জায়গায় সম্ভব হয়ে ওঠে না।

ঠিক তেমন ভাবনা থেকেই কদিন আগে গিয়েছিলাম ঢাকার বুকে বয়ে যাওয়া বুড়িগঙ্গা নদী দেখতে। কিন্তু যাওয়ার আগে মনে বেশ দ্বিধাদ্বন্দ্ব ছিল, আদৌ যাওয়াটা ঠিক হবে কি না? কারণ শেষবার যখন নিঝুম দ্বীপ যাওয়ার সময় সদরঘাটের বুড়িগঙ্গার তীরে গিয়েছিলাম, মনটা ব্যথায় বিষণ্ণ হয়ে গিয়েছিল দূষিত রূপ দেখে। গন্ধে দম বন্ধ হওয়ার জোগাড় হয়েছিল। সেই শঙ্কা মাথায় রেখেই পথ ধরেছিলাম। কিন্তু এবার পুরো পরিবার নিয়ে বুড়িগঙ্গার পাড়ে গিয়ে মুগ্ধ হয়েছি।

কারণ সদরঘাটে পৌঁছে কোনো গন্ধ পেলাম না। আহ! স্বস্তি। তারপর পাঁচ টাকার টিকেট কেটে ঢুকে পড়লাম বিশাল তিনতলা লঞ্চের ওপর গিয়ে নদী দেখতে, আর নদীর বাতাস খেতে। আর তারপর একটা অলস দুপুর কাটিয়েছিলাম বুড়িগঙ্গার ঢেউয়ের দোলায়, ঝিরঝিরে বাতাসে, মিহি রোদে।

তিনজন মিলে লঞ্চের ছাদে কখনো দাঁড়িয়ে, কখনো চেয়ারে বসে উপভোগ করছিলাম, বুড়িগঙ্গার টলমলে জল, ঢেউয়ে ভেসে-ভেসে চলা খেয়ানৌকা, ধীরে বয়ে চলা স্টিমার, মালবোঝাই কার্গো, ভাসমান ফলের দোকান, দুই পাড়ের মানুষের জীবন, ওপরে শরতের মেঘমুক্ত ঝকঝকে নীল আকাশ, অল্প কিছু সাদা মেঘের বিচরণ, মুক্ত বিহঙ্গদের ওড়াউড়ি, হেমন্তের হিমেল হাওয়া, মাঝে মাঝে বড় বড় ঢেউয়ের দোলায় লঞ্চের দুলে ওঠা। এটা একটা বাড়তি আকর্ষণ ছিল। অনেকটা অবসর সময় অলস কাটিয়ে দেওয়া যায় বুড়িগঙ্গার যে কোনো লঞ্চের ছাদে বা ভেতরে। দেখা যায় জলজ জীবনের নিত্যকার জীবন। লঞ্চের মধ্যেই রান্না, খাওয়া, গোসল আর ঘুমের অন্য রকম এক জীবন।

আপনিও চাইলে বেরিয়ে পড়তে পারেন কোনো এক ছুটির দুপুরে বা বিকেলে। ঘুরে আসতে পারেন বুড়িগঙ্গার তীরে। কাটিয়ে আসতে পারেন একটি বিলাসী বিকেল বা সোনালি সন্ধ্যা। চাইলে লঞ্চ উঠতে পারেন, নামতে পারেন কোনো খেয়াঘাটে, শীতল জলে পা ভেজাতে, চড়তে পারেন খেয়া নৌকায়, এপার-অপার করে নদীকে আরো কাছ থেকে ছুঁয়ে ছুঁয়ে উপভোগ করতে। এমনকি চাইলে ঘণ্টাব্যাপী ভাড়াও করতে পারেন কোনো নৌকা। ভেসে পড়তে পারেন প্রিয়জনের হাত ধরে। দেখবেন একটা অসাধারল মনে রাখার মতো বিকেল পাবেন।

ঢাকার যে কোনো জায়গা থেকে ৩০ থেকে ৫০ টাকা বাস ভাড়া দিয়ে চলে যেতে পারেন সদরঘাট বা বুড়িগঙ্গার তীরে। এপার-অপার নৌকা ভাড়া পড়বে ১০ টাকা করে। সদরঘাট, কালীগঞ্জ, শ্যামবাজার ছাড়াও আছে আরো বেশ খেয়া পারাপারের ঘাট। যে কোনোটি আপনি বেছে নিতে পারেন।

এ ছাড়া ঘণ্টাব্যাপী নৌকা ভাড়া ২০০-৩০০ টাকা। দরদাম করে নেওয়ার ওপরে নির্ভর করবে।

তাই আপনি ঘুরে আসতে পারেন ছুটির দিনে কোনো এক অবসরে বুড়িগঙ্গার তীরে।