ছুটির দিনে
সোমেশ্বরীর দেশে
![](https://ntvbd.com/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2017/11/15/photo-1510735655.jpg)
আমাকে সে নিয়েছিলো ডেকে;
বলেছিলো: 'এ নদীর জল
তোমার চোখের মত ম্লান বেতফল:
সব ক্লান্তি রক্তের থেকে
স্নিগ্ধ রাখছে পটভূমি;
এই নদী তুমি।’
জীবনানন্দ দাশের ‘সে’ কবিতার মুগ্ধতার মতোই মুগ্ধতা ছিল নেত্রকোনার বিরিশিরির সোমেশ্বরী নদী নিয়ে। ইউটিউবে সোমেশ্বরীর স্বচ্ছ নীলজলতরঙ্গমালা আর ডিঙিনৌকায়-জাল ছেপে পাথর-বালু-নুড়ি তোলায় দৃশ্য এত এতবার দেখেছি যে রীতিমতো সোমেশ্বরীর সৌন্দর্যে মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে পড়েছিলাম। একই মুগ্ধতা ছিল বিরিশিরির আরেক ঐতিহ্য বিজয়পুরের সাদামাটির (চীনামাটি) গারো পাহাড়ঘেঁষা নীলজলের লেক নিয়ে।
মূলত এই দুইয়ের আকর্ষণেই শেষ পর্যন্ত একটি পর্যটকদল দাঁড় করিয়ে ফেললাম। সাতজনের দল। গত অক্টোবরের ৬ তারিখ ঠিক হলো ‘বিরিশিরি ভ্রমণ’। জোগাড়যন্ত শুরু হলো জোরেশোরেই। ঠিক হলো একদিনেই গারো পাহাড় ঘুরে, সোমেশ্বরীর জলে প্রাণ জুড়িয়ে হাতে সময় থাকলে সুসং রাজবাড়িতেও ঢুঁ মারব। ভ্রমণটা যথাসম্ভব আরামদায়ক করতে ট্রেনে যাওয়াই স্থির হলো- হাওর এক্সপ্রেসে। বুধবার ছাড়া প্রতি রাত সাড়ে ১১টার দিকে কমলাপুর থেকে ছেড়ে যায় ট্রেনটি। ভোর নাগাদ পৌঁছা সম্ভব নেত্রকোনায়।
বিমানবন্দর স্টেশন থেকে ট্রেনের টিকেট কেটে নিলাম দুদিন আগেই। দল বেঁধে-আড্ডার জন্য ট্রেনে শোভন সিটই উৎকৃষ্ট, ফলে একসারিতে সাতটি অগ্রিম টিকেট কেনা হলো ১৬৫ টাকা হিসেবে। ভ্রমণের জন্য নির্দিষ্ট টি-শার্ট ও লাল গামছা কেনা হলো প্রত্যেকের জন্য। হাওর এক্সপ্রেসে খাবারের তেমন ব্যবস্থা না থাকায় আগেভাগেই নাশতার জন্য পানির বোতল, শুকনা খাবার ও কোমল পানীয় কিনে রাখলাম।
যাত্রা শুরু
৫ তারিখ রাত সাড়ে ১১টায় পৌঁছে গেলাম বিমানবন্দর স্টেশনে। পোশাক বদলে টি-শার্ট পরে ও গলায় গামছা জড়িয়ে নিলাম (পরদিন এ গামছা নানাবিধ উপকারে এসেছিল)। স্টেশনে এই মাঝরাত্তিরে একই পোশাকের দলকে দেখে মানুষজন বেশ অবাক হচ্ছিল। সোয়া ১২টার মধ্যেই ট্রেন আসার কথা থাকলেও হাওর এক্সপ্রেস এলো বেশ দেরি করে। রাত সোয়া ১টায়। ট্রেনে যথেষ্ট সিট খালি থাকবে, উঠেই আমার জম্পেশ আড্ডা জমাতে পারব-এমনটাই ভেবেছিলাম। ট্রেনে উঠে তো থ, লোকে গিজগিজ করছে। আমাদের সিটগুলোও বেদখল। টিকেট দেখিয়ে সিটগুলো পুনরুদ্ধার করলাম, কিন্তু আমাদের আড্ডার পরিকল্পনা মাঠে মারা গেল। কামরার দেয়াল ঘেঁষে, মেঝেতে, সিটের কোণায় ঠেস দিয়ে- নানাভাবে মানুষজন যাচ্ছেন। অবস্থা এমন যে, দুই পাশে ভাগ হয়ে বসা আমাদের দলটা পরস্পর মুখোমুখি কথা বলাই কঠিন।
আশপাশের যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, নেত্রকোনাগামী প্রতি রাতের এ ট্রেনের চাহিদা ব্যাপক। ভাড়াও কম। কিন্তু আসলে ভাড়ারই কোনো বালাই নেই। টিকেট চেকিং ও ভেতর থেকে ভাড়া আদায় এতই অনিয়মিত যে, বেশির ভাগ লোকই বিনা টিকেটে যাতায়াত করে। এ কারণেও ভিড় এত বেশি।
সাতজনের দল হলেও ট্রেনে ছিলাম ছয়জন। আরেক ব্ন্ধু আমাদের সঙ্গে যোগ দেবে ময়মনসিংহ থেকে। ফোনে বারবার যোগাযোগ হচ্ছিল। ময়মনসিংহ স্টেশনে ট্রেন থামল রাত ৪টার পর। বন্ধু উঠল সেখান থেকে। সঙ্গে আরো কিছু যাত্রী। শেষ রাত্তিরেও ট্রেনের কামরাগুলো হয়ে উঠল ‘মাছ বাজার’।
স্থানীয় যাত্রীদের পরামর্শে নেত্রকোনার আগে ময়মনসিংহের শেষ স্টেশন শ্যামগঞ্জে নামলাম ভোর সাড়ে ৫টায়। বিরান স্টেশনে বসে থাকা ছাড়া উপায় কী? দুর্গাপুরগামী পরের ট্রেন সাড়ে ৭টায়। এ পথে ট্রেন ভিন্ন অন্য কোনো উপায়ও নেই। স্টেশনের পাশের হোটেল থেকে ‘প্রায় অখাদ্য’ নাশতা সারতে হলো। টিকেট কেটে ট্রেনে উঠলাম। জারিয়া-ময়মনসিংহ রুটে একমাত্র এ ট্রেন দিনে তিনবার চলাচল করে। শ্যামগঞ্জ থেকে ভাড়া ১০ টাকা। তবে ময়মনসিংহ থেকে এলে ২০ টাকা। তবে ট্রেনে উঠে আগের অভিজ্ঞতাই হলো। এতেও আসলে বিনামূল্যেই চলাচল করে প্রায় সবাই।
মিশন বিরিশিরি
দুর্গাপুর স্টেশনে গিয়ে ট্রেন থামল ৯টার পর। নেমেই আর দেরি নয়। আমাদের মূল গন্তব্য সোমেশ্বরী নদী ও নদীর ওপারের গারো পাহাড়। স্টেশনের বাইরে সারি সারি ইঞ্জিনচালিত অটোরিকশা। জনপ্রতি ৪০ টাকা ভাড়ায় যায় বিরিশিরির উকিলবাজার ও নদীর ঘাট পর্যন্ত। আমরা সাতজন বিধায় পুরো গাড়ি নিলাম। দুর্গাপুর-বিরিশিরির প্রচলিত রাস্তার অবস্থা খুব খারাপ থাকায় বিকল্প রাস্তায় মোড়ের বাজার হয়ে কংস নদের পাড় ঘেঁষে ছুটল অটোরিকশা। এই শেষ বর্ষাতেও কংস নদের সৌন্দর্য বিমোহিত করার মতো। দুর্গাপুর থেকে সোজা পথ ধরে বিরিশিরি যাওয়া যায়। কিন্তু এ পথের অবস্থাও খুব সুবিধের নয়। দ্রুতগতির অটোরিকশাও এ খানাখন্দ ভরা ২০ কিলোমিটারেরও বেশি পথ পাড়ি দিয়ে সোমেশ্বরীর ঘাটে আসতে প্রায় ঘণ্টা পার করল। তবে অটোরিকশায় এলে সাধারণত চালকরা নদীতীরে তেলী বাজার ঘাটে যেতে চান না। পর্যটকদের তেলীবাজারের আগেই উকিলপাড়া মোড়ের কাছে নামিয়ে দিতে চান। তবে জানা থাকলে তেলী বাজার ঘাটেই নামা সম্ভব। এ ছাড়া দুর্গাপুর স্টেশন থেকে বের হয়ে সরাসরি সড়কেও বিরিশিরি যাওয়া যায়। কিন্তু এ সড়কের অবস্থা এতটাই খারাপ যে, নামে এটা পাকা সড়ক হলেও চর্মচক্ষে পাকার অস্তিত্ব বোঝা কঠিন।
তেলী বাজার ঘাট ছুঁয়ে লম্বালম্বি বয়ে গেছে সোমেশ্বরী। শীতে এটি সরু হয়ে এলেও বর্ষায় টইটম্বুর হয়ে ওঠে। কিন্তু ছবিতে, ইউটিউবে সোমেশ্বরীর যে স্বচ্ছ নীলাভ জলরাশি দেখেছি, তার সঙ্গে যেন মেলাতে পারছিলাম না। ঘাটের শ্রমিকরা জানালেন, পানি স্বচ্ছ ও নীল রূপ ধারণ করে মূলত শীতে- জানুয়ারির দিকে চর জাগতে থাকলে। সে সময় সোমেশ্বরী শুকিয়ে এতই সরু ও অগভীর হয়ে আসে যে, পর্যটকরা অনেকে হেঁটেই নদী পার হন। তবে এখন সোমেশ্বরীর ভরা যৌবনের শেষ সময় চলছে। ঘাটে স্তূপ করে রাখা পাথর, বালু, কয়লা, নুড়ি। বসানো হয়েছে বড় বড় মেশিন, তা দিয়েও নদী থেকে তোলা হচ্ছে পাথর ও বালু। নদীজুড়েও অনেকে নৌকা নিয়ে পাথর-বালু তুলতে ব্যস্ত। নদীর ওপারে জাগা চরে অপরূপ সফেদ কাশবন। তারও কিছুটা দূরে সীমান্তরেখা—ওপারে ভারত।
বিরিশিরি মূলত নদীর ওপারের এক ইউনিয়ন। সেখানে যেতে আড়াআড়ি নদী পাড়ি দিতে হবে। একটিমাত্র খেয়ানৌকা পালা করে চলছে। তাতে পার হলাম। পারাপারে জনপ্রতি ৫ টাকা, মোটরসাইকেলও ৫ টাকা। পার হলে ওপারে শিবগঞ্জ বাজারে উঠলাম। বাজারের প্রায় মাঝখানে হাট প্রাঙ্গণজুড়ে অতি বিশালাকার এক বৃক্ষ। বসলে মুহূর্তেই প্রাণ জুড়িয়ে আসে। বাজার পেরিয়ে শিবগঞ্জের মূল রাস্তায় উঠেই পড়লাম অটোরিকশা চালক সিন্ডিকেটের কব্জায়।
শিবগঞ্জ বাজার থেকে রিকশা ও মোটরসাইকেল ও ব্যাটারিটালিত অটোরিকশায় দরদাম করে ঘুরতে পারেন পর্যটকরা। ভাড়া স্পট ও যাত্রীভেদে বিভিন্ন। তবে দল বেঁধে ঘুরতে অটোরিকশার জুড়ি নেই। বেশ দরদাম শেষে সন্ধ্যা পর্যন্ত ৯০০ টাকায় অটোরিকশা ভাড়া করলাম। চুক্তি অনুযায়ী তাদের তালিকাবদ্ধ ১৫টি স্পট ঘোরাবেন বলে জানালেন চালক। কিন্তু এতে রয়েছে শুভঙ্করের ফাঁকি। স্পট মূলত পাঁচ-সাতটি। সিন্ডিকেটকে ফি দিতে হলো ২০ টাকা। শুরু হলো পথচলা। তবে এপারের রাস্তা সুপরিসর, ঝকঝকে ও দারুণ। চালক জানালেন, পর্যট্ন এলাকা বলেই এ রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছে।
সাদামাটির পাহাড় ও রানীখং মিশন
চালক নিয়ে গেলেন ভারত সীমান্ত প্রায় ছুঁযে ছুঁয়ে চলা রাস্তা ধরে গান্ধুয়াপাড়া সীমান্ত হয়ে রানীখং মিশনে (খ্রিস্টান মিশনারি স্কুল ও চার্চ এলাকা)। যেতে যেতে পথের দুই ধারে টিলা, ভারতের সীমান্ত টাওয়ার, চা বাগান দেখলাম। সূর্যের উত্তাপ যেন আগুন ঢালছে। কিন্তু প্রকৃতি সে ভোগান্তি ভুলিয়ে দিলে নিমিষেই। কিছু কিছু জায়গায় রাস্তার কয়েকশ গজ দূরেই ভারতীয় বাড়িঘর-ভূখণ্ড। পথেই এক বাড়ি দেখলাম, যার একটি ঘর ভারত অপর ঘরটি বাংলাদেশ অংশে। বাংলাদেশি ওই বাড়ির উঠানেই সীমান্ত নির্ধারক সাদা পতাকা খুঁটিতে পোঁতা রয়েছে। রানীখং মিশন মূলত দুর্গাপুরের শেষ ময়মনসিংহের ধোবাউড়া সীমান্তে। অনুমতি না থাকায় দেখা হলো না রানীখং মিশন। তবে পাশেই একটি পাহাড় কেটে পাড় সমতল করে ফেলা হয়েছে। কাছে যেতেই দেখলাম চীনামাটির পাহাড়। হালকা গোলাপি, লালচে ও সাদা রঙের মাটি। শ্রমিকরা কাটছেন। প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত ২০০ টাকার বিনিময়ে মাটি কেটে ওপরে তুলে রাখা হচ্ছে। চীনামাটির এক টুকরো স্মৃতিচিহ্ন রাখতে পকেটে চালান করলাম।
আহ! সোমেশ্বরী
রানীখং না দেখতে পেয়ে শুরু হলো বিরিশিরি সীমান্তের শেষে বিজিবি ক্যাম্পের উদ্দেশে। সেখানকার সোমেশ্বরী ঘাট থেকে নীলজলরাশি দর্শন। যেতে যেতে প্রায় দুপুর ১টা। ভরদুপুর, ঘেমে-নেয়ে আমরা একাকার। গরমে হাঁস-ফাঁস করছি। বিজিবি গেটে গাড়ি থেকে নেমে হেঁটে নদীর ঘাটে গেলাম। বাঁধানো ঘাট। বর্ষায় পানি কিছুটা ঘোলাটে হলেও দূরে তা নীলাকার ধারণ করেছে। আড়াআড়ি নদীর ওপারেই ভারত। পারের কিছু দূরে পাহাড়ের ওপর ভারতীয় কাঁটাতারের বেড়া। প্রস্তুতি ছিল গোসলের। সাধারণত সোমেশ্বরীতে পর্যটকদের গোসলে নিষেধ থাকলেও আমরা নেমে গেলাম। মুহূর্তেই শরীর-মনে সে এক স্বর্গীয় প্রশান্তি। পায়ের নিচে তীব্র স্রোতের ধাক্কা ও ভারতের উজান থেকে ধেয়ে আসা বালু ও ক্ষুদ্র পাথর বাধছিল। এ বালু ও পাথরই কুড়িয়ে ডাঙায় তোলা হয়।
গোসল সেরে বিজিবি গেটের অদূরে স্থানীয় দোকানে বসলাম। সেখানে ভারতীয় সব প্রসাধনী ও চকলেটের সমাহার। দাম বাংলাদেশি মূল্যের প্রায় অর্ধেক। অনেকেই সাধ্যানুযায়ী কেনাকাটা করলেন।
গারো পাহাড় ও সাদামাটির খনি
এবার গন্তব্য গারো পাহাড়, সাদামাটির খনি ও নীল পানি। দুর্গাপুর উপজেলা পরিষদ থেকে সাত কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে কুল্লাগড়া ইউনিয়নের আড়াপাড়া ও মাইজপাড়া মৌজায় বিজয়পুরে এ বিখ্যাত গারো পাহাড়। সেখানে পৌঁছালাম দুপুর ২টার কিছু আগে। রোদের উত্তাপে পা-গা পুড়ে যাচ্ছিল। মাথা গামছায় ঢেকে নিলাম। সাদা কোয়ারি এলাকায় পৌঁছেই হাঁটা দিলাম। গাইড হিসেবে না চাইতেও পিছু নিল তিন স্কুলপড়ুয়া শিশু। গারো পাহাড় নিয়ে মনে যতটা রোমাঞ্চ ছিল- বাস্তবে দেখে কিছুটা ধাক্কা খেলাম। একপাশে সাদামাটির স্তূপ ছাড়া সাদামাটির অস্তিত্ব নেই তেমন। কারণ এখন খনি থেকে মাটি তোলা বন্ধ।
তবে মন কেড়ে নিলো পাহাড়ের শেষাংশে সাদামাটি কাটার ফলে খনি বা কৃত্রিম বিশালাকার সরু খাল। ইউটিউবে দেখা খালটা প্রায় হুবহু। তবে বর্ষার প্রভাবে পানি কিছুটা নীল হারিয়েছে। খালপাড়ে শুরু হলো ছবি তোলার ঘুম। নীলপানি ঘেঁষে পাহাড়ের নামও বিচিত্র। পাহাড়গুলোর শিলার রং লালচে, কালচে ও সাদাটে থাকায় নামও বিচিত্র। স্থানীয়ভাবে এগুলো কোহিনুর পাহাড় ও নীলপানি, লাল পাহাড় ও বেঙ্গল পাহাড় নামে পরিচিত বলে জানা গেল। নীলপানির পাড়ে ফটোসেশন সেরে ঢুকলাম গারো পাহাড়ের ভেতরের অংশে। ক্ষুদ্র উপত্যকাসদৃশ একটা জায়গার পাহাড় দেখে যে কেউই মুগ্ধ হতে বাধ্য। এখানকার গারো পল্লী আরো ভেতরে, সময় না থাকায় যাওয়া হলো না।
রাশিমণি স্মৃতিসৌধ
ততক্ষণে পেটে ছুঁচোর কীর্তন শুরু হয়েছে। চালক জানালেন তালিকার সব স্থান নাকি শেষ। গারো পাহাড়েই অধিকাংশ স্পট। ফেরার পথে পেলাম টংক ও কৃষক আন্দোলনের নেত্রী হাজংমাতা প্রাণ উৎসর্গকারী রাশিমণি স্মরণে নির্মিত রাশিমণি স্মৃতিসৌধ। দুর্গাপুর উপজেলা পরিষদ থেকে ছয় কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে কুল্লাগড়া ইউনিয়নের বহেড়াতলী গ্রামের চৌরাস্তা মোড়ে রাশিমণি স্মৃতিসৌধ।
ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর কালচারাল একাডেমি
এবার গন্তব্য বিরিশিরি কালচারাল একাডেমি। ফলে নির্ধারিত সময়ের আগেই সোমেশ্বরীর তীরঘেঁষা আরেক ঘাটে এসে সময়ের আগেই ছেড়ে দিলাম অটোরিকশা। কালচারাল একাডেমি সোমেশ্বরীর ওপারে- দুর্গাপুর বাজারঘেঁষে। তবে সেটা নদীঘাট থেকে হেঁটে মিনিট দশেক দূরত্বে। প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত এটি খোলা থাকে। ভেতরে ৩০ মিনিটের বেশি থাকার নিয়ম নেই। পাশের দুর্গাপুর বাজার ঘুরে কয়েকটা খাবার হোটেল পেলেও খাবার পেলাম মাত্র একটিতে। কোনোরকমে নাকে-মুখে খাওয়া শেষ করতেই প্রায় ৫টা বেজে গেল। কালচারাল একাডেমি দেখার সাধও জলাঞ্জলি দিতে হলো।
ফেরা
জারিয়া থেকে ময়মনসিংহের ট্রেন ৬টায়। ফলে বিরিশিরি-দুর্গাপুরে নেমেই পাকা সড়ক হয়ে ছুটলাম আরেক অটোরিকশায়। সারা পথ অসহ্য ঝাকি সহ্য করে দুর্গাপুর স্টেশনে পৌঁছালাম ৬টার কয়েক মিনিট পর। গিয়েই ট্রেন পেলাম। প্রায় যাত্রীভর্তি ট্রেনে আপাতত গন্তব্য ময়মনসিংহ শহর। সেখান থেকে বাসে ঢাকা। টিকেট কাটার সময় না থাকায় চেকারকে ভাড়া দেব বলে ইচ্ছা ছিল। কিন্তু বিনা ভাড়ার এ ট্রেনে এবারও কোনো চেকার পেলাম না।
সতর্কতা
দুর্গাপুর-বিরিশিরির এলাকাগুলো প্রত্যন্ত হওয়ায় সঙ্গে পর্যাপ্ত পানি, স্যালাইন ও হ্যাট, আরামদাময়ক জুতা ও পোশাক জরুরি। গামছা আমাদের ছাতা হিসেবে দারুণ কাজে দিয়েছিল। সোমেশ্বরীতে গোসল করতে লোকালয়ের গৃহবধূদের ব্যবহার করা ঘাট সবচেয়ে নিরাপদ-অন্যান্য জায়গায় হঠাৎ গভীরতা বাড়তে পারে। গাড়ি ভাড়ার ক্ষেত্রে দরদাম করে নেওয়া জরুরি। সেই সঙ্গে চালক ও দায়িত্বশীল কারো ফোন নম্বর।
থাকা-খাওয়া
সোমেশ্বরীর এপারে উকিলপাড়া ও দুর্গাপুর বাজার এবং ওপারে শিবগঞ্জ বাজারই ভারী খাবারের জন্য ভরসা। ফলে সঙ্গে রাখতে পারেন শুকনা ও হালকা খাবার। আর রাতযাপনের জন্য দুর্গাপুর বাজার এলাকায় রয়েছে সাধ্যের মধ্যেই বেসরকারি কিছু হোটেল। এ ছাড়া রয়েছে উপজেলা ডাকবাংলো এবং কালচারাল একাডেমির রেস্ট হাউস।
যাতায়াত ও ভ্রমণ খরচ
যানবাহনের ভিন্নতা ও ভ্রমণের স্থায়িত্বের ওপরই খরচ নির্ভর করে। তবে ট্রেনে গিয়ে ও ময়মনসিংহ থেকে বাসে ফিরে, সারা দিন অটোরিকশায় ঘুরে আমাদের মোট খরচ হয়েছিল আট হাজার টাকার মতো। সাতজনের দলের জনপ্রতি ১১০০ টাকার কিছু বেশি।