ঘোরাঘুরি
পানি জাদুঘর
নদীমাতৃক বাংলাদেশে প্রাকৃতিক বিপর্যয় ও মনুষ্য সৃষ্ট নানা প্রতিকূলতার কারণে মরে যাচ্ছে নদ-নদী, ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে পানির উৎসগুলো। পানির উৎস সংরক্ষণ, সচেতনতা বৃদ্ধি ও পানির গুরুত্ব সবার মধ্যে তুলে ধরতে উপকূলীয় জেলা পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় নির্মিত হয়েছে পানি জাদুঘর।
জন্মকথা
নদীবহুল বাংলাদেশে পানি খুবই সহজলভ্য হওয়ায় পানি নিয়ে জাদুঘর প্রতিষ্ঠার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন থাকতেই পারে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে ভূমি উন্নয়নকেন্দ্রিক কর্মকাণ্ডের ফলে সময়ের বিবর্তনে এই সহজলভ্য পানিই হয়ে উঠতে পারে দুষ্প্রাপ্য এক বস্তু। নদী ও পানিসম্পদ রক্ষায় সরকার ও নীতিনির্ধারকদের উদ্যোগী করা, মানুষের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধি ও পানিসম্পদ রক্ষায় পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় ঢাকা-কুয়াকাটা মহাসড়কের পাশে একটি দ্বিতল ভবনে ২০১৪ সালের ২৯ ডিসেম্বর জাদুঘরটি প্রতিষ্ঠা করে আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্হা অ্যাকশনএইড বাংলাদেশ। বেসরকারি সংস্থা আভাস-এর সহযোগিতায় পানি জাদুঘরটি পরিচালনা করছে কলাপাড়া জনকল্যাণ সমিতি।
যা দেখতে পাবেন
জাদুঘরটির সামনে ইটের তৈরি দেয়ালের মাঝে রয়েছে একটি শেকলবদ্ধ নৌকা, যা বাঁধ তৈরির ফলে খুন হয়ে যাওয়া নদীর প্রতীক হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে। প্রতীকটি শুকিয়ে যাওয়া নদী ও পানি সংকটের ভয়াবহতা তুলে ধরছে জনসাধারণের মাঝে। এখানে রয়েছে স্বচ্ছ কাচের পাত্রে সংরক্ষিত প্রায় ৫৭টি নদীর পানির নমুনা ও প্রায় ৭০০টি নদীর ইতিহাসসমৃদ্ধ বই-পুস্তক। জাদুঘরটির মেঝেতে সাজানো রয়েছে গ্রামবাংলার মাছ ধরার বিভিন্ন বিলুপ্তপ্রায় উপকরণ, মাটির ও কাসার তৈরি প্রাচীনসব তৈজসপত্র। এ ছাড়া ব্যতিক্রমধর্মী জাদুঘরটিতে রয়েছে স্থানীয় নদীগুলোর তথ্যসমৃদ্ধ কয়েকটি মানচিত্র। ছোট্ট একটি ঘরে নান্দনিক সব উপকরণ দিয়ে সাজানো-গোছানো জাদুঘরটি মুগ্ধ করবে যে কাউকে।
সময়সূচি ও দর্শনার্থী ফি
সপ্তাহে মঙ্গলবার ছাড়া প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত খোলা থাকে জাদুঘরটি। দর্শনার্থী ফি নির্ধারণ করা হয়েছে মাত্র ১০ টাকা।
যাতায়াত
ঢাকা থেকে সড়ক ও নৌপথে সরাসরি পটুয়াখালী আসা যায়। সায়েদাবাদ ও গাবতলী থেকে সাকুরা, ঈগল, সোনারতরী, সুরভী, কনকসহ বিভিন্ন বাস সার্ভিসযোগে পটুয়াখালী পৌঁছাতে জনপ্রতি খরচ হবে ৪০০-৬০০ টাকা। অন্যদিকে সদরঘাট থেকে সুন্দরবন, কাজল, সাত্তার খান, প্রিন্স আওলাদ ও এআর খান লঞ্চযোগে পটুয়াখালী পৌঁছাতে লাগবে ৩০০-১০০০ টাকা। এ ছাড়া আকাশপথে বরিশাল পর্যন্ত আসা যাবে। সেখান থেকে গাড়িযোগে কলাপাড়ার পানি জাদুঘরে পৌঁছাতে খরচ হবে ২০০ টাকার মতো।
থাকা-খাওয়া
পটুয়াখালী জেলা শহরে থাকার জন্য রয়েছে প্রায় ১৫টি আবাসিক হোটেল। জাদুঘরটি সমুদ্রসৈকত কুয়াকাটার কাছাকাছি অবস্থিত হওয়ায় সেখানেও রয়েছে থাকা-খাওয়ার সুব্যবস্থা।