বিশ্বের কিছু অদ্ভুতুড়ে হোটেল
কোথাও বেড়াতে যাওয়ার মজা অনেকগুণ বেড়ে যেতে পারে ভালো হোটেলে থাকার স্বাদ পেলে। ভ্রমণের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশও হয়ে ওঠে হোটেল নির্বাচনের বিষয়টি। আর বেড়াতে গিয়ে হোটেলটাই যদি হয়ে ওঠে অন্যতম আকর্ষণীয় ব্যাপার, তাহলে তো কথাই নেই। বিশ্বের আনাচে-কানাচে এমন অনেক হোটেল আছে, যেগুলো হয়ে উঠতে পারে ভ্রমণের মূল লক্ষ্য। শুধু হোটেল দেখার জন্যই চলে যেতে পারেন সেসব জায়গায়। জেনে নেওয়া যাক তেমনই অদ্ভুতুড়ে কিছু হোটেলের হদিস।
১. ফিনল্যান্ডের আর্কটিক রিসোর্ট
উত্তর মেরুর বরফশীতল পরিবেশে থাকতে কেমন লাগে, তা হয়তো অনেকেরই জানতে ইচ্ছা করে। কিন্তু সেখানে যাওয়ার যে প্রস্তুতি, তা হয়তো অনেকেই নিতে পারেন না। তেমন মানুষরা উত্তর মেরুর আবহে ঢুকে যেতে পারেন ফিনল্যান্ডের আর্কটিক রিসোর্টে গেলে। বরফ বা কাচ দিয়ে বানানো ইগলু ঘর বা কাঠের গুঁড়িসদৃশ ক্যাবিনে কাটাতে পারেন মনোরম সময়। বরফের ঘরে রাতে উপভোগ করতে পারেন অদ্ভুতুড়ে আলো-আঁধারির খেলা।
২. যুক্তরাষ্ট্রের হোটেল ক্রিপ্ট
ভৌতিক বা রহস্যময়তা পছন্দ করেন, এমন মানুষরা যেতে পারেন যুক্তরাষ্ট্রের হোটেল ক্রিপ্টে। মূলত এটি নির্মিত হয়েছিল একটি চার্চ হিসেবে। ১৯০৭ সালে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এখানেই যাজক হিসেবে কাজ করতেন চার্চের প্রতিষ্ঠাতা মনসিগনোর থমাস ওয়ালেস। অনেকেই বলেন যে, এই চার্চের ছোট কুঠুরির মতো ঘরগুলোতে ভেসে বেড়াচ্ছে রহস্যময় সব ব্যাপার-স্যাপার। কে জানে হয়তো পেয়ে যেতে পারেন ওয়ালেসের আত্মার সাক্ষাৎ!
৩. যুক্তরাষ্ট্রের ডগ বার্ক পার্ক ইন
দূর থেকে দেখলে মনে হবে যেন একটা বিশাল কুকুর দাঁড়িয়ে আছে একটা বাচ্চা কুকুর নিয়ে। কাছে গেলে দেখা যাবে, কুকুরটা আসলে একটা হোটেল। যুক্তরাষ্ট্রের উদায়ো প্রদেশে দেখা মিলবে এই অদ্ভুত হোটেলের। এখানে থাকার সিদ্ধান্ত নিলে আপনাকে ঢুকে যেতে হবে কুকুরের পেটের মধ্যে!
৪. যুক্তরাষ্ট্রের কোকোপেল্লি কেভ বেড
আদিম মানুষরা কীভাবে গুহার মধ্যে জীবন-যাপন করত, তা জানার কৌতূহল হয়তো অনেকেরই আছে। কিন্তু আধুনিক এই সময়ে গুহাবাসী হওয়ার সুযোগ কম। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের নিউ মেক্সিকোতে গেলে আপনি সত্যিই পেয়ে যেতে পারেন গুহাবাসী হওয়ার অভিজ্ঞতা। মাটি থেকে প্রায় ৭০ ফুট নিচে একটি গুহার মধ্যে অবস্থিত এই অদ্ভুতুড়ে হোটেল। তবে আদিম গুহাবাসীর মতো আপনাকে অবশ্য আগুন জ্বালানোর জন্য পাথরে পাথর ঘষতে হবে না। আধুনিক সময়ের সব উপকরণই পাবেন এই গুহা হোটেলে।
৫. সুইডেনের ট্রি হোটেল
গাছের ওপর বাড়ি বানিয়ে থাকার শখ অনেকেরই হয়। অনেককে নিজের মতো করে বানিয়েও নিতে দেখা যায় গাছ-বাড়ি। কিন্তু এত কিছুর মধ্যেও সুইডেনের ট্রি হোটেল আলাদাভাবেই নজর কাড়বে। গাছের ওপর পাখির বাসার মতো আদল দিয়ে বানানো হয়েছে একটি ঘর। বাইরে থেকে মনে হবে যেন শুধুই কাঠের জঞ্জাল। কিন্তু ভেতরে গেলেই পাওয়া যাবে অতি অপরূপ মনোরম পরিবেশ। আরেকটি ঘর বানানো হয়েছে ইউএফওর আদলে। সেখানে ঢুকলে হয়তো পেয়ে যেতে পারেন ভীনগ্রহের প্রাণী হওয়ার আমেজ।
৬. ভিয়েতনামের ক্রেজি হাউস
শুধু এই হোটেলের জন্যই ভিয়েতনামের দালাত সিটি পরিণত হয়েছে আকর্ষণীয় পর্যটনকেন্দ্রে। নাম শুনেই টের পাওয়া যায় হোটেলটির মধ্যে আছে একটা পাগলামো পাগলামো ভাব। আধুনিক হোটেলের যাবতীয় সুবিধা থাকলেও বাইরে থেকে দেখে মনে হতে পারে পুরো হোটেলটিই খুব অগোছালো। বাঁশকাঠ দিয়ে তৈরি এই হোটেলটি বাইরে থেকে একনজর দেখে মনে হতে পারে বিমূর্ত কোনো ভাস্কর্য। কিন্তু ভেতরে ঢুকলেই অবাক হয়ে যেতে হবে দর্শনার্থীদের। অগোছালো-এলোমেলো ভাবের মধ্য দিয়েই দারুণভাবে সাজানো হয়েছে ভিয়েতনামের এই পাগলাটে হোটেল!
৭. যুক্তরাজ্যের স্পিটব্যাংক ফোর্ট
চারপাশে বিস্তীর্ণ জলরাশি। যেদিকেই তাকানো হোক না কেন, ডাঙ্গা চোখে পড়বে না সহজে। যুক্তরাজ্যের পোর্টসমাউথে এমন জায়গাতেই নির্মিত হয়েছিল স্পিটব্যাংক ফোর্ট। ১৮৫৯ সালে এই দুর্গ নির্মাণের উদ্দেশ্য ছিল বহিঃশত্রুর হাত থেকে সুরক্ষার জন্য। তবে সামরিক এই স্থাপনাটি এখন পরিণত হয়েছে বিলাসবহুল এক হোটেলে। সমুদ্রের বিশালতায় নিজেকে মিলিয়ে দেওয়ার বাসনা নিয়ে অনেকেই হাজির হয়ে যান স্পিটব্যাংক ফোর্টে। অভিজাতরা প্রায়শই পার্টির জন্য বেছে নেন এই ফোর্টকে।
৮. চীনের পান্ডা ইন
নিরীহ প্রাণী পান্ডাকে দেখলে ভালো লাগে না, এমন মানুষ হয়তো পাওয়াই যাবে না। চীনে এই পান্ডা এতটাই জনপ্রিয় যে তার আদলে বানানো হয়েছে একটা হোটেলও। এই হোটেলে ঢুকলে সব জায়গাতেই পাওয়া যাবে পান্ডার স্পর্শ। বিছানা-বালিশ থেকে শুরু করে ঘরের দেয়াল সর্বত্রই শুধু পান্ডা আর পান্ডা।
৯. জার্মানির ভি-এইট হোটেল
গাড়িতে করে শুধু কি ঘোরাই যায়? এখানে-ওখানে যাওয়ার জন্যই কি শুধু ব্যবহার করবেন চার চাকার যানটি? কেমন হতো যদি গাড়িই হতো আপনার থাকার জায়গা? জার্মানির ভি-এইট হোটেলে গেলে আপনি পেতে পারেন এমন স্বাদ। গ্যাস স্টেশন, গাড়ি ধোয়ার জায়গা ইত্যাদির আদলে সাজানো হয়েছে জার্মানির এই অদ্ভুতুড়ে হোটেলটি। এখানকার বিছানাটাও পাতা হয়েছে গাড়ির মধ্যে।
১০. ফ্রান্সের বাবল হোটেল
গোল কাচের বাক্সে নানা ধাঁচের পুতুল। এমন ধরনের জিনিস ঘর সাজানোর জন্য অনেকেই পছন্দ করেন। কিন্তু কেমন হতো আপনিই যদি হতে পারতেন তেমন পুতুলের মতো? থাকতে পারতেন গোল একটা স্বচ্ছ কাচের মধ্যে? আগ্রহ পেলে ঢুঁ মারতে পারেন ফ্রান্সের বাবল হোটেলে। চারদিকে গাছপালা ঘেরা এই বাবলে ঢুকে পড়লে হতে পারে অন্যরকম অনুভূতি। আর তুষারপাতের সময় কাঁচের ওপর সাদা সাদা বরফ দেখে আবেগে আপ্লুত হওয়া খুবই স্বাভাবিক।