ছুটির দিনে

২০ রুপির উপহার

Looks like you've blocked notifications!

যারা ভালোবাসেন অরণ্য এবং ট্রেন ভ্রমণ, এই গল্পটা তাঁদের জন্য। ডুয়ার্স পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়ি জেলার বিখ্যাত একটি অভয়ারণ্য। যেখানে একই সাথে পাওয়া যায় গভীর অরণ্যের স্বাদ, ভাগ্য ভালো থাকলে পেতে পারেন হাতি, হরিণসহ বন্য চিতার দর্শন। ময়ুরের দেখা তো পাবেন একটু পর পরই। আর এখানে পাবেন নির্জনতা ও সবুজ সমুদ্রের এক বিশাল সমারোহ সমতল ও পাহাড়ি চা বাগান। আর আছে গভীর অরণ্যের মাঝ দিয়ে, সবুজ চা বাগানের বুক চিরে চলে যাওয়া ধাবমান ট্রেনের নান্দনিক এক ভ্রমণের সুযোগ। আর সেটাও হতে পারে মাত্র ২০ রুপি খরচের বিনিময়ে।

হ্যাঁ মাত্র ২০ রুপির বিনিময়েই আপনি পেতে পারেন, একই সাথে পাহাড়, অরণ্য, সবুজ চা বাগান, বন্য পশু-পাখির দর্শন, ঝর্নার গান আর ট্রেনের ঝিকিঝিক ছন্দ তো আছেই। এসবই আপনি পাবেন ডুয়ার্সে ভেতরের এক অনিন্দ্য সুন্দর স্টেশন লাটাগুড়ি থেকে শিলিগুড়ি যাবার অপরূপ প্রকৃতির মাঝ দিয়ে বয়ে চলা রেল পথে।

বুড়িমারি বা চ্যাংরাবান্দা সীমান্ত থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরের ডুয়ার্সের অরণ্য শুরু হয় ময়নাগুড়ি থেকে। আর বিস্তৃত আরও প্রায় ২০-২২ কিলোমিটার গেলেই লাটাগুড়ি পর্যন্ত। পথে যেতে যেতে চোখে পড়বে ডুয়ার্সের নান্দনিকতা একে, একে। দুই পাশে ঘন সবুজ চা-বাগানের বিস্তীর্ণ এলাকা, মাঝে মাঝে বিশাল বিশাল গাছ-পালায় ঘেরা নির্জন অরণ্য, কোনো কোনো অরণ্যের মাঝে দুই একটি অপরূপ কটেজ, অরণ্যের মাঝ দিয়ে চালসা, মালবাজার হয়ে আরো ঘন অরণ্যের মাঝে যাওয়ার রাস্তা। এখানেই পাবেন সোনার বাংলা নামক এক অদ্ভুত সুন্দর রিসোর্ট। যে রিসোর্টের গল্প আলাদা করে বলব।

লাটাগুড়ির এই রিসোর্ট থেকে লাটাগুড়ি স্টেশন হাটা পথেই মাত্র ১০ মিনিট। এখান থেকে প্রতিদিন সকাল ৯টায় একটি ট্রেন ছেড়ে যায় শিলিগুড়ি স্টেশনের উদ্দেশে। যেটা কুচবিহার থেকে সকালে ছেড়ে আসে। সময় লাগে তিন ঘণ্টা। ভাড়া মাত্র ২০ রুপি জনপ্রতি। এই লাটাগুড়ি থেকে শিলিগুড়ি জিপ রিজার্ভ করে যেতে ভাড়া লাগে দুই হাজার ৫০০ থেকে তিন হাজার রুপি। সময় লাগে প্রায় দুই ঘণ্টার উপরে। যে পথটা আপনি যেতে পারেন মাত্র ২০ রুপি খরচ করে। ভ্রমণের এক অন্য রকম স্বাদ নিতে নিতে।

লাটাগুড়ি স্টেশনটাই প্রথমে আপনাকে মুগ্ধ করে দেবে। এর রূপ ও নির্জনতা দিয়ে। লাটাগুড়ি থেকে শিলিগুড়ি পর্যন্ত প্রায় ৬০-৭০ কিলোমিটার পথ যেতে সাত-আটটি অদ্ভুত সুন্দর রেল স্টেশন আপনার জন্য অপেক্ষা করবে প্রকৃতির সাজে সেজে। বনের মধ্যে কোথাও চোখে পড়বে ময়ূরের দল, হরিণের পাল, হাতিদের রোদ পোহানো, আরো পাবেন হাজারো পাখির অপার্থিব কলরব।

কোনো কোনো স্টেশনে দাঁড়িয়ে রয়েছে কোনো পাহাড়ি ছড়ার পাশ ঘেসে, কোনোটা গভীর কোনো অরণ্যের মাঝে দারুণ নীরব আর নির্জনতা নিয়ে আবার কোনোটা কোনো পাহাড়ি নদীর তীর ঘেঁসে, কুলকুল করে ছুটে চলা পানির ছন্দের সাথে ট্রেনের ঝিকঝিক ছন্দে মিলেমিশে একাকার হয়ে। আর বেশির ভাগ স্টেশনই আপনার জন্য অপেক্ষা করবে দুই পাশে সবুজের সমুদ্র, ঝকঝকে চা বাগানের সবুজ নিয়ে, আপনাকে মুগ্ধ করে দিতে। একদম শেষ দিকে সেভক স্টেশনে পৌঁছে আপনি পাবেন বিশাল বিশাল পাহাড়ের হাতছানি।

সেভক স্টেশন ছেড়ে সামনে যেতে যেতে গভীর অরণ্যের মাঝে মাঝে আবারও দেখা পাবেন পাহাড়ি নানা রকম বন্য পশুর, পাখির, ছড়া, জলাশয়, নদী, পাথুরে ঝর্ণাসহ কাছে দূরে থাকা নানা রকম পাহাড়ের হাতছানি। এই সবকিছুই পাবেন মাত্র ২০ রুপিতে । তিন ঘণ্টার একটা অন্য রকম স্মরণীয় ট্রেন জার্নিতে। যেটা আপনার ভ্রমণ জীবনের একটা স্মরণীয় সুখের ট্রেন ভ্রমণের অভিজ্ঞতা হয়ে থাকবে। আর এই ভ্রমণের পুরো অংশটা আপনার জীবনে অনেক দিন পর্যন্ত সুখস্মৃতি হয়ে থাকবে।

চোখ বন্ধ করলেই নিমিষেই আপনার মনে হতে পারে আপনি অপরূপ অরণ্য আর মুগ্ধতা ছড়ানো সবুজ চা বাগানের মধ্যে দিয়ে ঝিকঝিক শব্দে ছুটে চলেছেন নানা রকম পশু-পাখি-নদী-ঝর্ণা আর পাহাড়ের মধ্য দিয়ে।

এমন অনন্য একটা ভ্রমণ অভিজ্ঞতা নিতে চাইলে আপনিও চলে যেতে পারেন লাটাগুড়ি, একা, বন্ধু-বান্ধব বা পরিবার নিয়ে। নিতে পারেন চোখে লেগে থাকার মতো আর মনে গেঁথে থাকার মতো একটা অরণ্য ভ্রমণের ব্যাতিক্রমী স্বাদ।

যেভাবে যাবেন লাটাগুড়ি

ঢাকা থেকে ৬৫০টাকা বাস ভাড়ায় বুড়িমারি, সীমান্ত পেরিয়ে ৩৫ টাকায় চ্যাংরাবান্দা বাইপাস। বাইপাস দিয়ে মালবাজার বা চালসার বাসে করে লাটাগুড়ি। ভাড়া ২৫-৩৫ টাকা। আর লাটাগুড়ি থেকে ২০ রুপি বা ২৫ টাকার ট্রেন ভাড়ায় শিলিগুড়ি পর্যন্ত এই ভ্রমণ। ২০ রুপিতে এরচেয়ে ভালো উপহার আর কী হতে পারে?