ছুটির দিনে

সীতাকুণ্ডের চন্দ্রনাথে শিব চতুর্দশী মেলা

Looks like you've blocked notifications!

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে সীতাকুণ্ড উপজেলা। প্রকৃতির অপরূপ এক লীলাভূমি সীতাকুণ্ড। সীতাকুণ্ড বাজার থেকে চার কিলোমিটার পূর্ব দিকে চন্দ্রনাথ পাহাড়। চন্দ্রনাথ পাহাড়ের ওপর থেকে পশ্চিম দিকে তাকালে দেখা যাবে সুবিশাল সমুদ্র আর সবুজ বৃক্ষের সমারোহ।

সীতাকুণ্ড চন্দ্রনাথ মন্দির
নেপালে এক রাজা স্বপ্নে আদিষ্ট হয়ে পাঁচ দেশে পাঁচটি শিবমন্দির নির্মাণ করেন। এইগুলোর মধ্যে বাংলাদেশে দুটি—সীতাকুণ্ডের চন্দ্রনাথ মন্দির ও কক্সবাজার মহেশখালী আদিনাথ মন্দির। অন্য তিনটি হলো নেপালে পশুপতিনাথ মন্দির, ভারতে কাশিতে বিশ্বনাথ মন্দির আর পাকিস্তানে ভূতনাথ মন্দির।

ইতিহাস ও প্রাচীন ধর্মগ্রন্থ থেকে জানা যায়, প্রাচীনকালে এখানে মহামুণি ভার্গব বসবাস করতেন। অযোদ্ধার রাজা দশরথের পুত্র রামচন্দ্র তাঁর বনবাসের সময় এখানে এসেছিলেন। মহামুণি ভার্গব আসবেন জানতে পেরে তাঁদের স্নানের জন্য তিনটি কুণ্ডও তৈরি করা হয়।

রামচন্দ্র এখানে ভ্রমণকালে তাঁর স্ত্রী সীতা এই কুণ্ডে স্নান করেন। পুরাণ অনুসারে, মহামুণি ব্যাসদেব এবং অন্যান্য ঋষি এখানে অশ্বমেধ যজ্ঞ করতেন।

পুণ্যার্থীদের প্রচলিত নিয়ম, শিব চতুর্দশী তিথিতে শম্ভুনাথ মন্দির দর্শনের আগে এই ব্যাস কুণ্ড স্নান করা। এ কারণে এখানকার নাম সীতাকুণ্ড বলে অনেকে ধারণা করে থাকেন। 
সীতাকুণ্ডের ঐতিহ্যবাহী ধর্মীয় স্থানগুলো একনজরে দেখে নেওয়া যাক :
সীতাকুণ্ড বাজারের মধ্য দিয়ে চন্দ্রনাথ যাওয়ার রাস্তা ধরে একটু সামনে গেলে রেললাইন। এখান থেকেই শুরু হয় মেলা। দেখতে দেখতে শুরু হবে মন্দির দর্শন আর খানিকটা এগিয়ে দেখতে পাবেন ভোলানন্দ গিরি আশ্রম, প্রেম তাল, নবগ্রহ বাড়ি, কালীবাড়ি আস্তানা, ভৈরব বাড়ি এরপর শংকর মঠ মন্দির, তার পাশে ব্যাসকুণ্ড।

এরপর একেক করে বিভিন্ন মন্দির দর্শন করতে করতে ওপরে যাওয়ার পথে পাবেন শ্রীকৃষ্ণ মন্দির, কেন্দ্রীয় মহাশ্মশান, দধি ভৈরব, দধিকুণ্ড, গয়াক্ষেত্র, শুরুধুনা, হনুমান মন্দির, জগন্নাথ মন্দির, জ্যোতির্ময় মন্দির, লবণাক্ষ তীর্থ, রামকুণ্ড ও লক্ষ্মণকুণ্ড, পঞ্চবটী, পাতালপুরি মন্দির, শম্ভুনাথ মন্দির, অন্নপূর্ণা মন্দির, বিষ্ণু মন্দির, সীতাকুণ্ড, সূর্যকুণ্ড, ঊনকোটি শিবমন্দির, ভবানী মন্দির, বিরুপাক্ষ মন্দির হয়ে আরো প্রায় আধা কিলোমিটার দূরে চন্দ্রনাথ মন্দির।

এটি এখানকার প্রধান মন্দির। এই মন্দিরের অধিষ্ঠিত শিবের নামে এই চন্দ্রনাথ। এই মন্দির সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১২০০-১৩০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত।

প্রতিবছর বাংলা ফাল্গুন মাসে ও ইংরেজি ফেব্রুয়ারি বা মার্চ মাসে শিবরাত্রি তথা শিব চতুর্দশী তিথিতে বিশেষ পূজা হয়। আর এই উপলক্ষে সীতাকুণ্ডের পুরো এলাকায় উৎসবের আমেজ বিরাজ করে। 

এই চন্দ্রনাথ মন্দির দর্শনের জন্য দেশ-বিদেশ থেকে অনেক সাধু-সন্ন্যাসী ও নর-নারী, বিশেষ করে নেপাল, ভারত, শ্রীলঙ্কা থেকে পুণ্যার্থীরা তীর্থ দর্শন করতে আসেন ।
কীভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে আসার অনেক এসি, ননএসি বাস আছে। ইউনিক, এস আলম, সৌদিয়া, গ্রিনলাইন, দেশ পরিবহন, শ্যামলী, সোহাগসহ বিভিন্ন বাসে করে আপনি সীতাকুণ্ড বাজারে নামতে হবে। সেখান থেকে হেঁটে যেতে হবে চন্দ্রনাথ মন্দিরের দিকে।

সীতাকুণ্ড মেলা উপলক্ষে বিশেষ ট্রেন সার্ভিসও থাকে ঢাকা ও চট্টগ্রাম থেকে, আপনি চাইলে এই বিশেষ সার্ভিসেও যেতে পারবেন। মেলা ও তীর্থস্থান দেখে রাতেই বাসে বা ট্রেনে করে ফিরে যেতে পারবেন।

খাবার-দাবার ও থাকা
ঐতিহ্যবাহী সীতাকুণ্ড চন্দ্রনাথ মেলা উপলক্ষে খাবার-দাবারের তেমন সমস্যা নেই বললেই চলে। বিভিন্ন সংগঠন থেকে খাবার বিতরণ করা হয় বিনামূল্যে। আপনি চাইলে অবশ্য কিনেও খেতে পারবেন। নিরামিষ খাবারের ব্যবস্থা থাকে। এ ছাড়া মেডিকেল সেবাও পাবেন বিনামূল্যে।

এই মেলা উপলক্ষে পুরো সীতাকুণ্ড বাজারে যে হোটেলগুলো আছে, সেগুলো বুক করা হয়ে যায়। তাই আগেই আপনাকে হোটেল বুক করতে হবে। অবশ্য একদিনে জন্য যদি আপনি মেলা আর তীর্থস্থানগুলো দেখতে যান, তাহলে হোটেলে থাকতে হবে না। 

সতর্কতা
আপনার মনে রাখতে হবে, সীতাকুণ্ড চন্দ্রনাথ মন্দির কিন্তু পাহাড়ের ওপরে আঁকাবাঁকা পথ, সরু রাস্তা, কিছু পথ কাঁচা, আবার কিছু পথ পাকা, সিঁড়ি দেখেশুনে চলতে হবে।

সেইসঙ্গে মনোবলও থাকতে হবে। সঙ্গে মনে করে যে জিনিসগুলো নেবেন : স্যালাইন, খাওয়ার উপযোগী পানি, প্রয়োজনীয় ওষুধ, মোমবাতি, লাইট, ভালো একটি ব্যাগ ও পাহাড়ে চড়ার উপযোগী জুতা।

শিশুদের সঙ্গে না নেওয়াই ভালো। চন্দ্রনাথ মন্দির যাওয়ার জন্য চাঁদের গাড়িও আছে, তবে ভাড়া ঠিক করে নিতে হবে আগেই।

এবার শিব চতুর্দশী মেলা অনুষ্ঠিত হবে ১৩ থেকে ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।