পূজায় ঘোরাঘুরি
মন্দিরের গ্রাম নন্দীরহাটে
চট্টগ্রামের খাগড়াছড়ি-রাঙামাটি মহাসড়কে হাটহাজারী থানা অন্তর্গত নন্দীরহাট অতিপ্রাচীন একটি গ্রাম, যা এখন সিটি কপোরেশন ১ নম্বর ওয়ার্ডের আওতায় পড়েছে। অক্সিজেন বাস টার্মিনাল থেকে হাটহাজারী, নাজিরহাট, রাউজান, খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি বাস যায়। এগুলো সবই যায় নন্দীরহাটের ওপর দিয়ে। তাই যেকোনো বাসে করেই যাওয়া যায় নন্দীরহাটে। সময় লাগবে ৩০-২০ মিনিট।
এইবার বলি কেন নন্দীরহাটকে মন্দিরের গ্রাম বলা হয়। ব্রিটিশ আমলে নন্দীরহাটে ছিলেন কয়েকজন জমিদার, তাঁদের প্রত্যেকের বাড়িতেই ছিল বড় বড় মন্দির। সেসব মন্দির এখনো কালের গর্ভে পুরোপুরি বিলীন হয়ে যায়নি। এখনো টিকে আছে লক্ষ্মীচরণ সাহা, নন্দীবাড়ি, সেনবাড়ি, রক্ষিতবাড়িসহ আরো নাম না জানা অনেক জমিদারবাড়ির মন্দির। জায়গাটির নাম নন্দীবাড়ির নামেই নন্দীর ঘাট হয়েছে।
এবার বলা যাক, কোথায় কোন মন্দিরগুলো রয়েছে। নন্দীরহাট বাজারের পাশ দিয়ে শুরু করি, রাস্তার পাশে প্রাচীন মগধেশ্বরী মায়ের মন্দির, এরপর বাজারের দুই পাশে রয়েছে অতিপ্রাচীন দুই মন্দির : রাস্তার বাঁ পাশে শ্রীশ্রী জগন্নাথ মন্দির আর ডান পাশে নিস্তারানী মায়ের কালীবাড়ি মন্দির, যার দেখাশোনা করতেন নন্দীবাড়ির লোকজন ।
নিস্তারানী কালীবাড়ি থেকে আধা কিলোমিটার নিহারপুড় গ্রাম, সেখানে রয়েছে আরো দুটি মন্দির : একটি শ্রীশ্রী বাসুদেব সেবা আশ্রম, পাশেই দুর্গাবাড়ি। বাসুদেব সেবা আশ্রমে এখন অনাথ ছেলেমেয়ের সংখ্যার শতাধিক। তারা সবাই পড়ালেখার পাশাপাশি মন্দিরে পূজা-অর্চনায় সহযোগিতা করে।
এইবার নন্দীরহাট বাজারে বাঁ পাশে একুশে পদক পাওয়া, সুরকার ও সংগীত পরিচালক সত্য সাহা সড়ক দিয়ে একটু ভেতরে গেলে চোখে পড়বে শ্রীশ্রী অনুকূল ঠাকুরের মন্দির। এর পাশে পুকুরপাড়ে শ্মশানঘাট এলাকা। এর একটু পর সাহাপাড়া, ১৫০ বছরের পুরোনো মন্দিরটি এখানে, নাম শ্রীশ্রী রাধাকৃষ্ণ জিউর মন্দির, যা ধর্মঘর নামে পরিচিত। এর একটু পরে বৈষ্ণব বাড়ি রয়েছে, শ্রীশ্রী রঘুনাথ গোস্বামী সমাধি মন্দির নামে, তার পরে ঐতিহ্যবাহী লক্ষ্মীচরণ সাহার জমিদারবাড়ি, যা সত্য সাহা বাড়ি নামে পরিচিত। এই বাড়িতে একসঙ্গে তিনটি মন্দির : প্রথমটি শ্রীরাধাকৃষ্ণ মন্দির, পাশে শ্রীলক্ষ্মী মন্দির, এরপর পারিবারিক শ্রীদুর্গামন্দির। প্রতিবছর সব পূজাই হয়ে থাকে এই বাড়িতে।
ফতেয়াবাদ জংশন আর জংশনে পাশে নাগবাড়ি ও দাশবাড়িরও রয়েছে নিজেদের কালীবাড়ি। ফতেয়াবাদ জংশন ফেলে গেলে চোখে পড়বে শ্রীশ্রী লোকনাথ বাবা সেবা আশ্রম (চট্টগ্রাম কেন্দ্র)। এই মন্দিরটি সারা বাংলাদেশে সুপরিচিত। এই মন্দিরের পাশে আরো দুটি মন্দির আছে, একটা শিবমন্দির আর একটি বিষ্ণু মন্দির ।
এরপর ব্রাহ্মণপাড়া যেতে পড়বে শ্রীশ্রী তিননাথ মন্দির। এর একটু পরে প্রাচীন শ্রীশ্রী গোপাল জিউর মন্দির, এই মন্দিরে যেতে যেতে চোখে পড়বে শ্রীমদধেশ্বরী মায়ের মন্দির। এগুলো শেষ করে শৈলবালা স্কুলের রাস্তা ধরে আসার সময় চোখে পড়বে নতুন তৈরি হওয়া শ্রীশ্রী রামঠাকুরে ধাম ।
এইবার নন্দীরহাট বাজারে এসে একটু দূরে উত্তরপাড়া নামে আরেকটি একটি গ্রাম আছে, ওখানে রয়েছে দুটি মন্দির : একটি রাধাগোবিন্দ মন্দির, অন্যটি কালীমন্দির। এসব মন্দির ঘুরে দেখতে সময় লাগবে সারা দিন। প্রতি বৃহস্পতি ও শুক্রবার নন্দীরহাট লোকনাথ মন্দির ও রাধাকৃষ্ণ মন্দিরসহ বিভিন্ন মন্দিরে কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায় পুণ্যার্থী ও ভক্তবৃন্দের পদচারণায়। আর বছরজুড়ে মন্দিরগুলোতে চলে নানা আচার অনুষ্ঠান ।
যদি দুর্গাপূজার সময় ঘুরতে আসেন, তাহলে পূজামণ্ডপ পরিদর্শন করতে পারবেন ছয়-সাতটি একই সঙ্গে। অন্য মন্দিরগুলোও ঘুরে দেখতে পারবেন। সেইসঙ্গে দেখতে পারবেন জমিদারবাড়িগুলোও।
কীভাবে যাবেন
চট্টগ্রাম আসার জন্য ঢাকা থেকে বিভিন্ন এসি বা ননএসি বাস আছে। দামপাড়া বাস কাউন্টারে আসতে হবে। দামপাড়া বা জিসি মোড় থেকে ৩ নম্বর কিছু বাস আছে, সেইগুলো করে নন্দীরহাট যেতে পারবেন। সেইসঙ্গে এখন পাঠাও, আইমন্টো সার্ভিস আছে, কার বা মোটরসাইকেল করেও যেতে পারবেন নন্দীরহাট এলাকাতে। শহর থেকে ৩ নম্বর বাসে ভাড়া ১৫ টাকার মতো, আর পাঠাও বা আইমন্টো সাভির্স চার্জ যা আসে সেটাই, তবে খুব বেশি একটা আসে না। আবার জিসি মোড় থেকে রিকশা বা সিএনজিতে করে ২ নম্বর গেট ঘোলশহর জংশন যেতে হবে সেইখান থেকে চবি শাটল ট্রেন ফ্রি আর ড্রেমু ট্রেনের ভাড়া জনপ্রতি ১০ টাকা নেবে ফতেয়াবাদ জংশন পর্যন্ত।
খাবার দাবার
যদি সকালবেলা ঘুরতে যান, তাহলে দুপুরে মন্দিরগুলোতে প্রসাদ নিতে পারবেন। আর না হয় বাজারে বেশ কিছু হোটেল আছে, সেগুলোতে খেতে পারবেন। খাবারের দাম তেমন বেশি নয়।
খরচপাতি
ঢাকা থেকে যদি ঘুরতে যান, এর মধ্যে বাস, ট্রেন বা হোটেল থাকাসহ তিন-চার হাজারের মধ্যে একজনের হয়ে যাবে।
সঙ্গে করে ক্যামেরা নিয়ে আসতে ভুলবেন না যেন!