ঘোরাঘুরি

পূজায় ঘুরে আসুন কুমারটুলি থেকে

Looks like you've blocked notifications!
ছবি – লেখক

সনাতন ধমাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় অনুষ্ঠান দুর্গাপূজা আর কয়েক দিন পরে । এই সময় মৃৎশিল্পীরা ব্যস্ত প্রতিমা তৈরিতে। আপনিও চাইলে ঘুরে আসতে পারেন কলকাতার কুমারটুলি থেকে ।

১৭৫৭ সালে পলাশীর যুদ্ধে জয়লাভের পর ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ভারতে ঔপনিবেশিক সাম্রাজ্য বিস্তারে মনোনিবেশ করে। গোবিন্দপুর গ্রামে কোম্পানি ফোর্ট উইলিয়াম দুর্গ স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয়। এই অঞ্চলের বাসিন্দাদের সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় সুতানুটি অঞ্চলে। গোবিন্দপুরের ধনিক সম্প্রদায় পাথুরিয়াঘাটা ও জোড়াসাঁকো অঞ্চলে বসতি স্থাপন করে। এর পাশাপাশি গড়ে ওঠে অন্যান্য কয়েকটি অঞ্চলও। কোম্পানির ডিরেক্টরদের আদেশানুসারে জন জেফানিয়া হলওয়েল ‘কোম্পানির মজুরদের জন্য পৃথক পৃথক অঞ্চল বণ্টন করেন।

এভাবে কলকাতার দেশীয়দের অঞ্চলগুলি বিভিন্ন পেশাভিত্তিক পাড়ায় বিভক্ত হয়ে পড়ে। এভাবেই শুঁড়িপাড়া, কলুটোলা, ছুতারপাড়া, আহিরীটোলা ও কুমারটুলি প্রভৃতি অঞ্চলের উৎপত্তি ঘটে। ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষভাগে বড়োবাজার অঞ্চলের আগ্রাসনের শিকার হয়ে উত্তর কলকাতার মৃৎশিল্পীরা শহর ছেড়ে চলে যান। কিন্তু কুমারটুলির পটুয়ারা, যাঁরা গঙ্গামাটি সংগ্রহ করে মাটির পাত্র ইত্যাদি তৈরি করে সুতানুটি বাজারে (অধুনা বড়বাজার) বিক্রি করতেন,  তাঁরা টিকে যান। পরবর্তীকালে তাঁরা ধনী সম্প্রদায়ের বাড়ির পূজার নিমিত্ত দেবদেবীর প্রতিমা নির্মাণ করতে শুরু করেন। কলকাতা ও বাইরে বারোয়ারি বা সার্বজনীন পূজার প্রচলন হলে পূজাকমিটিগুলি কুমারটুলি থেকে প্রতিমা সংগ্রহ করতে থাকেন।

১৯৮৯ সালে প্রথম অমরনাথ ঘোষের তৈরি করা শোলার দুর্গাপ্রতিমা সুইডেন, অস্ট্রেলিয়া, মালয়েশিয়া ও নাইজেরিয়ায় পাঠানো হয়। মাত্র তিন কেজির এই প্রতিমাগুলো বিমানযোগে প্রেরণের ক্ষেত্রে আদর্শ ছিল। ২০০৬ সালে কুমারটুলি থেকে ১২ হাজার ৩০০টি দুর্গাপ্রতিমা সরবরাহ করা হয়। প্রতি বছর বিশ্বের ৯৩টি রাষ্ট্রে কলকাতার এই পটুয়াপাড়া থেকে প্রতিমা প্রেরণ করা হয়ে থাকে। এই সংখ্যা বর্তমানে আরো বৃদ্ধি পেয়েছে।

কুমারটুলির প্রতিমাশিল্পীদের মধ্যে সর্বাধিক জনপ্রিয় হলেন মোহনবাঁশী রুদ্রপাল ও তাঁর দুই পুত্র সনাতন রুদ্রপাল ও প্রদীপ রুদ্রপাল, রাখাল পাল, গণেশ পাল, অলোক সেন, কার্তিক পাল, কেনা পাল প্রমুখ। বর্তমান যুগে ‘থিম শিল্পী’দের রমরমা সত্ত্বেও সনাতন প্রতিমার গুণগ্রাহী আজও কুমারটুলির মৃৎশিল্পীদের দিয়ে প্রতিমা নির্মাণ করান।

কীভাবে যাবেন

হাওড়া থেকে বাসে করে বাগবাজার এর পর অটো বা টানা রিক্সা করে কুমারটুলি। অথবা ট্যাক্সি করে যেতে পরবেন কুমারটুলিতে।