শীতের ছুটিতে

তারাপুর বাগানের সবুজ গালিচায় একদিন

Looks like you've blocked notifications!

যেদিকে চোখ যায় কেবল সবুজ আর সবুজ। চা-বাগানগুলোর বৈশিষ্ট্যই এমন। চাগাছ আর ছায়া বৃক্ষের সবুজে নয়ন জুড়িয়ে যায়, পাওয়া যায় মানসিক প্রশান্তিও। এবার শীতে যারা সিলেট ভ্রমণে যাচ্ছেন বা ইতিমধ্যে চলে গেছেন, তারা নামমাত্র খরচে একটা বিকেল কাটিয়ে আসতে পারেন সিলেট শহরতলীর ঐতিহাসিক চা বাগান তারাপুরে।

যা দেখবেন

সিলেট শহরতলীর পাঠানটুলা এলাকায় অবস্থিত তারাপুর চা বাগান। বাগানটিতে প্রবেশের আগে হাতের বাঁদিকে দেখবেন রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। বাগানের প্রবেশপথ দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে বা রিকশায় যেতে যেতে ডানে-বাঁয়ে দেখতে থাকুন সবুজ আর সবুজের সমারোহ। একটু সামনে অগ্রসর হলেই মেডিকেলের হোস্টেল। এটিও নির্মাণ করা হয়েছে চা-বাগানের টিলায়। তার আগেই আছে একাত্তরে ঘটে যাওয়া নারকীয় গণহত্যার স্মারক। মুক্তিযুদ্ধ শুরুর দিকে (১৮ এপ্রিল) বাগানটির মালিক পক্ষের লোকজনসহ মোট ৩৯ জন চা শ্রমিককে হত্যা করেছিল হায়েনারা। সেই শহীদদের স্মরণে স্থাপিত স্মৃতিস্তম্ভের সামনে দাঁড়িয়ে মুহূর্তের জন্য হলেও আপনি হারিয়ে যাবেন বিভীষিকাময় দিনগুলোতে। স্মৃতিস্তম্ভে তাঁদের নামগুলো লেখা রয়েছে।

ডানে বাগানের বাংলোও আছে। আছে কারখানা। এই স্মৃতিস্তম্ভের ডানে-বাঁয়ে দুদিকেই দুটি পিচঢালা রাস্তা সামনে এগিয়েছে। যেতে পারেন যেকোনোটি ধরে। ঘুরতে ঘুরতে রাস্তা ছেড়ে বাগানের ভেতরে প্রবেশ করতে পারেন। দেখবেন চা-কন্যারা পিঠে চমৎকার ঝুড়ি নিয়ে সারি বেঁধে হয় কারখানার দিকে, নয় পাতা কুড়াতে বাগানের সরু পথে ধীরপদক্ষেপে এগিয়ে যাচ্ছে। তাদের কারো কারো পিঠের ঝুলায় শিশুসন্তান বহনের দৃশ্যটিও আপনাকে মুগ্ধ করবে।

আপনি যদি বাঁয়ের রাস্তা দিয়ে এগোতে থাকেন তাহালে ৮-১০ মিনিট পায়ে হাঁটলে পাবেন গোয়বাড়ি বাজার। ছোটখাটো এই বাজারটিও কিন্তু বিখ্যাত একটি বিশেষ কারণে। তা হলো গরুর খাঁটি দুধের চা। মানসম্পন্ন হোটেল বা চাস্টল না হলেও পাঁচ টাকায় গরুর খাঁটি দুধের চা আপনার ভ্রমণ ক্লান্তি দূর করে দেবে। এই বাজারের উত্তর দিকে আরো কয়েক মিনিট হাঁটলে পাবেন আরেকটি বাগানের দেখা। আর যদি আপনি ফিরে আসতে চান তাহলে এখান থেকে রিকশায় চেপে বসতে পারেন। পাঠানটুলা পয়েন্ট পর্যন্ত ভাড়া নেবে ২০ টাকা। বাগানটি ভ্রমণের ক্ষেত্রে বাংলোতে যোগাযোগ করে ম্যানেজার বা কর্তৃপক্ষকে অবগত করে যাওয়াই ভালো। তাহলে চা-শ্রমিক বা অন্যদের সহযোগিতা পাওয়া যেতে পারে।

তা ছাড়া বনভোজনের উদ্দেশ্য যদি থাকে তাহলে বাংলোটি ভাড়াও নিতে পারেন। খরচ পড়বে পাঁচ-ছয় হাজার টাকা। নিজস্ব বাবুর্চি না থাকলে তারাই ব্যবস্থা করে দেবে। কারখানাও ঘুরে দেখতে পারবেন। বছরের যেকোনো সময় চা-বাগান ভ্রমণ উপযোগী হলেও জোসনা রাতে সুবজের বুকে রূপালি আলোর খেলা আপনাকে স্বর্গদর্শনের আনন্দে মোহিত করবে।

যেভাবে যাবেন

রাজধানী থেকে বাস ট্রেন বা বিমানযোগে আপনি সিলেট মহানগরীতে প্রবেশ করতে পারেন। সায়দাবাদ-ফকিরেরপুল থেকে দূরপাল্লার বাসে সিলেটের দক্ষিণ সুরমাস্থ কদমতলী যেতে আপনার খরচ পড়বে সাড়ে ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা। সেখান থেকে বন্দরবাজার যেতে রিকশায় খরচ হবে ৩০ থেকে ৫০ টাকা আর সিএনজি অটোরিকশায় ৭০ থেকে ১০০ টাকা। বন্দরবাজার থেকে পাঠানটুলাস্থ রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজ বা তারাপুর বাগানের প্রবেশমুখ পর্যন্ত সিএনজি অটোরিকশায় যেতে খরচ পড়বে জনপ্রতি ১৫ টাকা। রিজার্ভ নিয়ে গেলে খরচ ৮০ থেকে ১২০ টাকা।

যেখানে থাকবেন

সিলেট শহরের বন্দরবাজার, জিন্দাবাজার, দরগা গেইট এলাকায় প্রচুর আবাসিক হোটেল রয়েছে। এসব হোটেলে থাকার খরচ পড়বে ২৫০ থেকে ৫০০ টাকা। এ ছাড়া কয়েকটি অভিজাত হোটেলও আছে।

সতর্কতা

বাগানের শ্রমিকরা সহজ সরল হলেও কিন্তু খুব স্পর্শকাতর। তাই তাদের সঙ্গে কথা বলার সময় খুব সতর্ক থাকা উচিত। নইলে বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে পারেন।