ঘোরাঘুরি

ইলিশ খেতে নদীর তীরে!

Looks like you've blocked notifications!

হরেক রকম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আর প্রাণিবৈচিত্র্যে ঘেরা আমাদের এই ভূখণ্ড। নদীমাতৃক এই বাংলাদেশে কত প্রজাতির মাছ রয়েছে তা সত্যিকার অর্থে কারোই জানা নেই। তবে, মাছের রাজার প্রসঙ্গ ভিন্ন। মাছ খেতে ভালোবাসেন অথচ ইলিশ খান না, এমন লোক প্রায় বিরল বলা যায়। আর সেই ইলিশ যদি হয় পদ্মার তবে তো সোনায় সোহাগা। পদ্মার টাটকা ইলিশ ভাজার কথা কল্পনা করলে ছেলে, বুড়ো কারোরই জিভে জল আসা বাকি থাকে না। দৈনন্দিন জীবনে যখন হাঁপিয়ে উঠছেন ঠিক তখনই মাত্র একদিনের একটি ভ্রমণে জুড়িয়ে নিতে পারেন প্রাণ আর পেতে পারেন টাটকা ইলিশের মজা। শহরের কোলাহল পেরিয়ে, কর্মচঞ্চল জীবনকে একটু শান্তি দিতে ঘুরেই আসা যায় ঢাকা থেকে মাত্র ৪০ কিলোমিটার দূরে মাওয়াতে। গ্রামীণ পরিবেশ, পদ্মার ঘ্রাণসহ অনেক কিছু পাবেন মাওয়াতে। আর মাছের রাজার দেখা তো মিলছেই। পাবেন পদ্মাতীরের জীবনযাত্রা যা আপনাকে করবে মুগ্ধ। অবিরল তাকিয়ে থেকে দেখবেন পদ্মার চোখজুড়ানো দৃশ্য।

দেখতে পাবেন আপনার সামনে দিয়েই নৌকো থেকে নামানো হচ্ছে সদ্য ধরে আনা পদ্মার হরেক রকম টাটকা মাছ আর সেই সাথে মাছের রাজা রুপালি ইলিশ। ইচ্ছে করলে একটু দামাদামি করে কিনে নিতে পারেন এই টাটকা মাছগুলো থেকে আপনার পছন্দমতো যেকোনো পরিমাণে। কিনে নিতে পারেন তাজা গোটা চারেক রুপালি ইলিশ। এক জোড়া বড় ইলিশ কিনতে গেলে খুব বেশি একটা খরচ হবে না। পেয়ে যাবেন ১৫০০-২০০০ টাকার মধ্যেই দুই কেজি বা তার বেশি পরিমাণ দুটো তাজা ইলিশ। দাম অবশ্য ঋতুর ওপর নির্ভর করে। দূর থেকে আসা ভোজনরসিকরা নিয়ে যাওয়ার জন্য পাবেন বরফের ব্যবস্থা। পদ্মাপারের জেলেরাই সাহায্য করবে এ ব্যাপারে। এসব কিছু দেখে আপনি যখন খিদের জালায় ভুগছেন ঠিক তখনই ফেরিঘাটে পেয়ে যাবেন অসংখ্য রেস্টুরেন্ট যা ভাতের হোটেল নামেই বেশি পরিচিত। ওপরে টিনের চালা আর তিনদিকে টিনের দেয়াল দেওয়া এসব হোটেল দেখতে যেমনই মনে হোক না কেন, এখানকার গরম ভাত আর গরম গরম ভাজা, পদ্মার টাটকা ইলিশের স্বাদই আলাদা। আছে ঝোলমাখানো ইলিশের তরকারিও।

ফেরিঘাটের শুরুতেই যেই দোকানগুলো সেগুলো মোটামুটি। তবে সারির মাঝামাঝি ‘আলাউদ্দিন ভাতের হোটেল’-এর বেশ নামডাক। টিনের চাল, বড় জানালার মতো করে একপাশে খোলা টিন। বর্ষার দিনে পদ্মার পানি দেখা যায় ক্ষেতগুলোতে। পরিবেশটি যেমন আলাদা, তেমনি এখানে ভোজনের আনন্দ আর স্বাদও অবশ্যই আলাদা। নিজের অজান্তে কখন দু-চারটা ভাজা মাছ খেয়ে ফেলবেন টেরই পাবেন না। এ ছাড়া চিংড়ি, রুই, শুঁটকি ভর্তা আর সব ধরনের মাংস তো আছেই। প্রতি টুকরো ভাজা ইলিশ পাবেন ৮০ টাকায়। যদি কয়েকজন মিলে যান তাহলে আছে আস্ত ইলিশ ভাজাও। খরচ পড়বে ৮০০-১০০০ টাকা। খেতে পারবেন ইলিশের ডিম ভাজাও; যা মুখে দিলে তৃপ্তির ঢেঁকুর তোলা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। গরম ভাতের সাথে ইলিশের ডিম ভাজা আর তেলে ভাজা শুকনো মরিচ খেয়ে পেয়ে যাবেন অতুলনীয় স্বাদ। প্রতি টুকরো আস্ত ডিম ভাজার দাম পড়বে ১০০ টাকা। এ ছাড়া ফেরিঘাটে পেয়ে যাবেন অসংখ্য জেলে যারা হাতে প্লেট নিয়ে বিক্রি করছে ইলিশ ভাজা। তবে এদের সাথে দরদাম করে নেওয়াই ভালো।

কীভাবে যাবেন  

গুলিস্তান থেকে সরাসরি মাওয়াগামী বাস আছে। ইলিশ, আনন্দ, গোধূলিসহ রয়েছে বিআরটিসির বাস সার্ভিসও। ভাড়া ৭০ টাকা। বিআরটিসির এসি বাস সার্ভিসও রয়েছে। ভাড়া পড়বে ১০০ টাকা। এ ছাড়া মিরপুর থেকে ‘স্বাধীন’ পরিবহন গুলিস্তান হয়ে মাওয়া যায়। ভাড়া ৯০ টাকা।

কোথায় বিশ্রাম নেবেন

ঘোরাঘুরি করে ক্লান্ত হয়ে গেলে সাময়িক বিশ্রাম নিতে পারেন চায়ের দোকানগুলোতে। ফেরিতেও চড়তে পারেন। তবে খেয়াল রাখতে হবে ফেরি ছাড়ার আগেই নেমে যেতে হবে।