তে-গাঙ্গা : সুরমা-কুশিয়ারার আঁতুড়ঘরে একদিন

Looks like you've blocked notifications!

নাগরিক ব্যস্ততায় জীবনটাকে মাঝেমাঝে বড়ই একঘেয়ে মনে হয়। এ অবস্থায় ঘোরাঘুরি অনেকটা মহৌষধের মতো। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমণ্ডিত স্থানগুলো দেখে হৃদয় জুড়ানোর পাশাপাশি একঘেয়েমিও কাটানো যায়। এ ক্ষেত্রে সিলেটের জকিগঞ্জ উপজেলার আমলসীদ হতে পারে একটি আদর্শ স্থান। এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য যেমন উপভোগ্য, তেমনি প্রধান দুটি নদীর জন্মস্থান দর্শন কৌতূহলী নদীপ্রেমীদের জন্য এক বিরল সুযোগ। প্রকৃতির বিচিত্র খেয়ালের এক অভূতপূর্ব নিদর্শন আমলসীদ গ্রামের তে-গাঙ্গা। ভারতের মণিপুরে উৎপত্তি ও আসাম রাজ্যের বুকচিরে এইখানে এসে বরাক তার আরো দুটি শাখার জন্ম দিয়েছে। একটি সুরমা নামধারণ করে বাঁদিকে বেঁকে  জকিগঞ্জ-কানাইঘাট হয়ে বয়ে গেছে একেবারে কিশোরগঞ্জের ভৈরবের দিকে। মিশেছে মেঘনায়।

আরেকটি সোজা জকিগঞ্জ-বিয়ানীবাজার হয়ে এগিয়েছে হবিগঞ্জের আজমিরির দিকে। এটিরও গন্তব্য মেঘনা। বাংলাদেশের উত্তর-পূর্ব সীমান্তের শেষ গ্রামে এ দুটি নদী আরো বিচিত্র লীলাখেলায় মত্ত। আর তাই আমলসীদ নিয়ে মানুষের অসীম কৌতূহল।

যা দেখবেন

ভারতের মণিপুর প্রদেশের পাহাড়ে উৎপত্তি সেদেশের অন্যতম প্রধান নদী বরাকের। এরপর মিজোরাম ও আসাম হয়ে প্রায় ৪৭৫ কিলোমিটার (২৯৫ মাইল) পাড়ি দিয়ে জকিগঞ্জের আমলসীদে এসে কি এক আজব খেয়ালে জন্মদিয়েছে সুরমা-কুশিয়ারার। বাঁদিকে বেঁকে গেছে সুরমা আর সোজা কুশিয়ারা।  মাঝখানে তিন নদীর মিলনস্থল। তবে এর আরো আগে কিন্তু বাংলাদেশের সীমান্ত শুরু। মোটামুটি জিরো পয়েন্টের পর আর সুরমা-কুশিয়ারা শুরুর আগে বাংলাদেশের সীমান্তে বরাকের অংশবিশেষ প্রবাহমান। সে  হিসেবে নদীটির মালিকানা কেবল ভারতের নয়, বাংলাদেশেরও। বাঁয়ে বাঁক নিয়ে সুরমা আবারও কিছুটা উজানে, মানে যেদিক থেকে বরাক এসেছে সেদিকেই আবারও কিছুটা এগিয়ে পরে আবার আস্তে আস্তে ভাটির দিকে। বরাকের পশ্চিম ও সুরমার পূর্বতীরে বাংলাদেশের যে স্থলভূমি, তা অনেকটা তীরাকৃতির।

এর ভারতীয় অংশে কাঁটাতারের বেড়া আছে, আছে বিএসএফের একটি ক্যাম্পও। আর তিন নদীর মিলনস্থলটিতে শুকনো মৌসুমে ছোটখাটো একটি চর জেগে উঠে। কুশিয়ারা ছুটেছে সোজা। এর পূর্বতীর বাংলাদেশের। নদী তীর থেকে আরো কিছু পূর্বে ভারত সীমান্ত শুরু। কালো কাটাতারের বেড়া দেখা যায়। দেখা যায় কয়েকটি সবুজ গ্রাম। নদী তীরে কৃষিজমি আছে বাংলাদেশের, হচ্ছে রবিশষ্যের চাষ।  বিজিবির অনুমতি নিয়ে এই চরে বিশ্রাম নেওয়া যায়, চাইলে নৌকায় নদী পেরিয়ে যাওয়া যায় ওপারে।  তবে বিএসএফের চৌকি থেকে হঠাৎ গুলি ছোড়ার আশংকা কিন্তু সবসময়। তাই নদী পার না হওয়াই ভালো। স্রোতস্বিনী কুশিয়ারা আমলসীদ হয়ে আবারও ভারতে প্রবেশ করেছে। 

তারপর বাঁক নিয়ে আবার এসেছে আমলসীদের দক্ষিণ দিয়ে।  উত্তরে বাংলাদেশ, দক্ষিণে ভারতের আসাম রাজ্যের কাছাড় জেলার ভাঙ্গারবাজার।  স্থানটি খেয়াঘাট নামে পরিচিত। তবে সাবধান। ঘাটটি কিন্তু বাংলাদেশের নয়। এপারে দাঁড়িয়ে ওপারের বাজারসহ রাস্তাঘাটে গাড়িচলাচল দেখা যায়। অথচ এপারে, আমাদের আমলসীদে তেমন কোনো অবকাঠামোই গড়ে তোলা সম্ভব হয়নি গত প্রায় ৪৬-৪৭ বছরে। কাঁচা মেঠোপথে হাঁটতে হাঁটতেই আপনাকে দেখতে হবে নদীর লীলাখেলা।

যেভাবে যাবেন

ঢাকার কমলাপুর ও ক্যান্টনমেন্ট রেলস্টেশন থেকে প্রতিদিন তিনটি ট্রেন ছাড়ে সিলেটের উদ্দেশে। ৩০০ থেকে ৭০০ টাকায় পৌঁছে যাবেন দক্ষিণ সুরমার কদতলী বাস স্ট্যান্ডে। এ ছাড়া বাসে খরচ পড়বে ৩০০ থেকে ৮০০ টাকা। সিলেটের কদমতলী থেকে জকিগঞ্জে সিএনজিচালিত অটোরিকশা রিজার্ভ নিয়ে যেতে হবে। এ ক্ষেত্রে খরচ এক হাজার ২০০ থেকে দেড় হাজার টাকার মতো। বাসেও যাওয়া যায়। জনপ্রতি খরচ পড়বে ১০০ থেকে ১৩০ টাকার মতো।

যেখানে থাকবেন

সিলেট মহানগরীর জিন্দাবাজার, বন্দরবাজার, মিরাবাজার দরগাহ গেইট আম্বরখানা এলাকায় বিভিন্ন মানের আবাসিক হোটেল আছে। এসব হোটেলে থাকতে জনপ্রতি খরচ পড়বে ২০০ থেকে ৬০০ টাকা। এ ছাড়া সিলেটে বেশ কিছু অভিজাত আবাসিক হোটেলও আছে।