ছুটির দিনে
আগরতলায় রাজা কিশোর মানিক্য রাজবাড়িতে
ত্রিপুরা আগরতলা ঐতিহ্য ঘেরা একটি শহর। ত্রিপুরা হচ্ছে প্রাচীন রাজাদের আদি নিবাস। সুগন্ধি আগর গাছের নাম থেকেই ত্রিপুরা আগরতলা নামকরণ করা হয়।এই ত্রিপুরা শহরজুড়েই রয়েছে রাজাদের বিভিন্ন নিদর্শন। পুরো আগরতলা ঘুরে দেখতে পারবেন এক দিনে। আগরতলা শহরটি খুব সুন্দর পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন বেশ চওড়া রাস্তা। বেড়ানো জন্য অত্যন্ত আকর্ষণীয় জায়গা তাই পুরো পরিবার নিয়ে এক সপ্তাহের ছুটিতে ঘুরে আসতে পারেন ত্রিপুরা রাজ্যটিতে।
ত্রিপুরা আগরতলা ইতিহাস
১৯৪৭ সালে ভারতের অন্তর্ভূক্ত হওয়ার আগ পর্যন্ত এই ত্রিপুরা শাসন করত মানিক্য রাজবংশ। প্রায় আড়াই হাজার বছর ধরে এই রাজবংশের ১৮৬ জন রাজা ত্রিপুরা শাসন করেন ।
ত্রিপুরার সীমানা বিস্তৃত ছিল গারো পাহাড় থেকে বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত। ১২৬৮ থেকে ১২৮১ সাল পর্যন্ত বাংলার শাসক ছিলেন তুগরল খান। তিনিই সর্বপ্রথম ত্রিপুরার একটি অংশ জয় করে বাংলার সঙ্গে যুক্ত করেন। সুলতান হুসনে শাহ ১৫১৩ সালে ত্রিপুরার সমভূমি অঞ্চলের বৃহত্তর অংশ অধিকার করেন।
বাংলার মুঘল সুবাদার ইব্রাহিম খান ১৬৮৯, ১৬৯৮ ত্রিপুরাকে মুঘল সাম্রাজ্যের একটি করদ রাজ্যে পরিণত করেন। মুর্শিদ কুলি খানের শাসনকালে ত্রিপুরার সমভূমি অঞ্চলের নতুন নামকরণ হয় রওশনাবাদ পরগনা। ত্রিপুরা রাজকে সে অঞ্চলের জমিদার ঘোষণা করা হয়। সে সময় ত্রিপুরার মানিক্য রাজারা পাহাড়ি ত্রিপুরার অধীনস্থ রাজা হিসেবে পরিচিত ছিলেন।
বর্তমান বাংলাদেশের হবিগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লা ও ফেনী জেলা সমন্বয়ে গঠিত হয় এই রওশনাবাদ পরগনা। কুমিল্লা ছিল রাজার জমিদারির সদর দপ্তর। ১৭৯০ সালে গঠিত নতুন ত্রিপুরা জেলার মূল অংশ ছিল ত্রিপুরা রাজার জমিদারি এলাকা।
ব্রিটিশ ভারতে ত্রিপুরা হয় স্বাধীন করদ রাজ্য। তৎকালীন দক্ষিণ ত্রিপুরা উদয়পুর ছিল স্বাধীন রাজতান্ত্রিক ত্রিপুরার রাজধানী। আঠারো শতকে মহারাজ মানিক্য পুরাতন আগরতলায় রাজধানী স্থানান্তর করেন। ঊনবিংশ শতাব্দীতে রাজধানী স্থানান্তরিত হয় অধুনা আগরতলায়। ১৮৩৮ সালে আগরতলার পত্তন হয় মহারাজা কিশোর মানিক্যর হাতে। সূচনা হয় ত্রিপুরার আধুনিক যুগের। পরে ব্রিটিশ শাসনব্যবস্থার অনুকরেণ ত্রিপুরার প্রশাসন পুনর্গঠন করেন মহারাজ বীরচন্দ্র মানিক্য বাহাদুর দেববর্মা।
যা দেখবেন
আগরতলা প্রাণকেন্দ্র অবস্থিত রাজবাড়িটি। যা উত্তর-পূর্ব ভারতের সবচেয়ে সমৃদ্ধ উজ্জয়ন্ত প্রাসাদ জাদুঘর এটি।এই রাজবাড়িটি প্রায় ২০ একর জমির ওপর অবস্থিত।
১৯০১ সালে দিকে তৎকালীন রাজা রাধা কিশোর মানিক্য এই বাড়িটি তৈরে করেন। রাজ প্রাসাদটি খুব পরিস্কার ও পরিচ্ছন্ন। প্রাসাদের বাইরে দিকে দুইটি বড় বড় দিঘি রয়েছে। রাজবাড়ি নিচে আর উপরে রয়েছে সুন্দর পরিপাটি সাজানো জাদুঘর। জাদুঘরটিতে আছে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যগুলো প্রত্নতত্ত্ব, চারুশিল্পের অনেক নির্দশন।
জাদুঘরের প্রত্নতত্ত্ব বস্তর পাশে লেখা আছে ত্রিপুরা জাতির নিজস্ব ভাষা ককবরক, বাংলা ও ইংরেজি বিবরণ। একই সাথে বিভিন্ন গ্যালারিতে সাজানো রয়েছে দেবদেবীর মূর্তি, মৃৎশিল্প, পোড়া মাটি ও ব্রোঞ্জ নির্মিত মূর্তি। সোনা-রুপা ও তামার মুদ্রাসহ তৈলচিত্র, বস্ত্র, অলঙ্কারও আছে। আদিম যুগের বেশ কিছু শিলালিপি ও সাজানো আছে সাথে বিভিন্ন মানচিত্রও।
মহাকাব্য সংগ্রহে আছে এখানে। ত্রিপুরা রাজা মানিক্য রাজবংশের চিত্র ও ইতিহাস। উপজাতির সংস্কৃতি পেইন্টিং ভারতীয় বিভিন্ন সংস্কৃতির নিদর্শন। আরো আছে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথের বিভিন্ন বই রবীন্দ্র গ্যালারিতে।
এক জায়গা গিয়ে চোখ আটকে গেল বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের গ্যালারিতে। এই গ্যালারিতে রয়েছে মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশে থেকে আসা শরর্ণাথীদের বিভিন্ন দুর্লভ ছবি। আর এই ছবিগুলো তুলেছেন তৎকালীন ফটোসাংবাদিক রবিন সেনগুপ্ত।
ছবিগুলোতে ফুটে উঠছে শরর্ণাথীদের দুর্দশার চিত্র। ১৯৭১ সালে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ ও অপারেশনসহ যুদ্ধের সময় বিভিন্ন পত্রিকাতে প্রকাশিত সংবাদ, ৭ মার্চের ভাষণের প্রতিকৃতি সাজানো রয়েছে গ্যালারিতে; যা নিজ চোখে না দেখলে বুঝানো যাবে না।
এই রাজবাড়ি জাদুঘর মন্দির দীঘি ঘুরে খুব ভালো লাগবে। জাদুঘরটিতে দুষ্পাপ্য অনেক জিনিস দেখেত পারবেন। পুরো রাজবাড়ি ঘুরে সাথে জাদুঘরে বিভিন্ন জিনিস দেখে ভারতের বিভিন্ন সংস্কৃতি সম্পর্কে জানতে পারবেন।
রাজবাড়ির বাহিরে যত ছবি তোলা তুলতে পারবেন কিন্তু ভিতরে ছবি তোলার উপায় নেই। রাজবাড়িতে প্রবেশ মূল্য ভারতীয়দের জন্য ১৫ রুপি বিদেশি পর্যটকদের জন্য ১৫০ রুপি দিতে হবে।
ভিসা
ভারতের ভিসার সব ডকুমেন্ট, ন্যাশনাল আইডি, ব্যাংক স্টেটমেন্ট, ডলার এনডোর্স, ক্রেডিট কার্ড, লেটার অব ইন্ট্রোডাকশনসহ ইত্যাদি লাগবে। বাংলাদেশ ও ভারতের আখউড়া স্থলবন্দর দিয়ে যেতে পারবেন আপনি।
কখন যাবেন
ত্রিপুরা আগরতলা আবহাওয়া আমাদের দেশের ম তো সারা বছরই যেতে পারবেন। তবে পূজার সময় গেলে খুব বেশি ভিড় থাকে। আর বর্ষার সময় না যাওয়া ভালো ।
কোথায় থাকবেন
আগরতলা শহরে মধ্যে বেশ কিছু ভালো মানের হোটেল আছে। আপনাকে দেখেশুনে রুম বুকিং দিতে হবে। হোটেল ভাড়া এক হাজার রুপির মধ্যে। গ্রুপ করে বেড়াতে গেলে ভালো। কারণ এখানকার হোটেলগুলোতে দুই বেডে চারজন থাকার ব্যবস্থা আছে।
কোথায় খাবেন
আগরতলা শহরে অনেক খাবার হোটেল আছে। সেখানে মাছ-ভাত, মাংসসহ বিভিন্ন ভর্তা খেতে পারবেন। জনপ্রতি ১৫০ রুপি থেকে ২৫০ রুপি খরচ হবে।
প্রয়োজনীয় টিপস
আগরতলা নিউমার্কেট এলাকাতে ডলার ভাঙানো যায়। ডলার ব্যাংকি আওয়ারের মধ্যে পারলে ব্যাংক থেকে ভাঙানো যাবে।