ঘোরাঘুরি
মহানায়কের সমাধিসৌধে
নাগরিক জীবনের হাজারো ব্যস্ততার ফাঁকে একটুখানি ভ্রমণের সুযোগ যেন সঞ্জীবনী শক্তি এনে দেয়। তাই ছুটিছাটা মিললেই দলবেঁধে হোক আর একাকী, সময়টাকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করি। অনেক দিন থেকেই মাথায় ঘুরছিল দক্ষিণবঙ্গের জেলা বরগুনা ভ্রমণের চিন্তা। তাই তিন দিনের বন্ধ পেয়ে সুযোগটা কাজে লাগাতে আর ভুল করিনি। তবে বরগুনা দিয়ে যাত্রা শুরু হলেও গ্রামবাংলার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অবলোকনের ভাবনা থেকেই অবশেষে পিরোজপুর-বাগেরহাট হয়ে গন্তব্য এসে ঠেকেছিল জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর জন্মস্থান গোপালগঞ্জে। এর আগে গোপালগঞ্জ এসেছিলাম প্রায় অর্ধযুগ আগে। এরই মধ্যে অনেকটাই বদলে গেছে শহরের হালচাল।
টুঙ্গিপাড়ার পথে
সকালে ঘুম ভাঙতেই ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে পড়লাম। শহর থেকেই টুঙ্গিপাড়ার দূরত্ব প্রায় ১৯ কিলোমিটার। লঞ্চঘাট মোড় থেকে নিয়মিত বিরতিতে বাস ও মাহেন্দ্র ছেড়ে যায় টুঙ্গিপাড়ার দিকে। পাটগাতি অথবা ঘোনাপাড়া থেকে অটোতে করেই যাওয়া যায় সমাধি কমপ্লেক্সে। মাহেন্দ্রতেই রওনা হলাম টুঙ্গিপাড়ার পথে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় পেছনে ফেলে ঘোনাপাড়া মোড়ে এসে নাশতা সেরে আবার অটোতে উঠলাম। নিলফা বাজার পেরিয়ে পাটগাতি হয়ে পৌঁছলাম টুঙ্গিপাড়ার সমাধি কমপ্লেক্সের প্রধান ফটকের সামনে। রাস্তার পাশেই সাইনবোর্ড টানানো আছে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর সমাধি। এখানে শুয়ে আছেন বাঙালি জাতির সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ নেতা।
গেটের নিরাপত্তাবলয় পার হয়ে ভেতরে ঢুকতে চোখে পড়ল দুই পাশের লাল সিরামিক ইটের চমৎকার মসজিদ ও পাঠাগার কমপ্লেক্স। এসব স্থাপনা পেরিয়ে সোজা কিছুদূর এগোতেই দেখা মেলে সাদা পাথরে নির্মিত গোলাকার এক গম্বুজবিশিষ্ট স্থাপনা। এর ভেতরেই রেলিং দিয়ে ঘেরা বঙ্গবন্ধু ও তাঁর বাবা-মায়ের কবর। দেয়াল ও ছাদ ধরে আলো প্রবেশের চমৎকার ব্যবস্থাপনা ভেতরের পরিবেশকে আরো ভাবগম্ভীর ও সৌম্য করে তুলেছে। সমাধিসৌধের একটু আগে বাঁ পাশে রয়েছে শেখ পরিবারের বড় তালাব বা বড় পুকুর। পুকুরপাড়ের স্নিগ্ধ ছায়ায় ঘুরেফিরে বঙ্গবন্ধুর বাড়ির দিকে গেলাম।
সমাধিসৌধের পাশেই হলুদ রঙের শেখ পরিবারের বাড়ি। দেয়ালে টানানো রয়েছে বঙ্গবন্ধুর চমৎকার প্রতিকৃতি। কমপ্লেক্সের ২ নম্বর গেট থেকে বেরিয়ে ডান দিকে গেলেই চোখে পড়বে ধ্বংসস্তূপপ্রায় শেখ পরিবারের আদিবাড়ি। বাড়ির রাস্তা ফেলে আরেকটু সামনে ডানদিকে ডোবার পাশে হিজলতলা নামে একটি সাইনবোর্ড লক্ষণীয় যেখানে বঙ্গবন্ধু গোসল করতেন বলে জানা যায়।
পাশের চায়ের দোকানে বসে স্থানীয় মুরব্বিদের মুখে শেখ পরিবারের গল্প শুনেই কেটে গেল অনেকটা সময়। একই বাড়ির হওয়ায় এর মধ্যে কেউ কেউ বেশ কাছ থেকেই দেখেছেন বঙ্গবন্ধুকে। চায়ের আড্ডা শেষে প্রস্থানের প্রস্তুতি নিলাম। শেষবারের মতো শ্রদ্ধা নিবেদন করে রওনা হলাম ব্যস্ত নগরী ঢাকার উদ্দেশে।
যাতায়াত ও রাত্রিযাপন
যাঁরা ঘুরতে যাবেন, তাঁদের জন্য জেনে রাখা ভালো, সমাধি কমপ্লেক্স খোলা থাকে প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত। এখানে কোনো এন্ট্রি ফি নেই। ঢাকা থেকে গোপালগঞ্জ যেতে হলে গাবতলী থেকে আরিচা হয়ে এবং গুলিস্তান থেকে মাওয়া হয়ে দুভাবেই যাওয়া যায়। তবে মাওয়া হয়ে গেলে দূরত্ব কম এবং ফেরি পারাপার বিধায় ভাড়া কিছুটা কম পড়বে। গাবতলী থেকে গোল্ডেন লাইন, সেবা গ্রিন লাইন, কমফোর্ট লাইন নামে বেশ কিছু বাস ছেড়ে যায়। এ ছাড়া গুলিস্তান থেকে ছেড়ে যায় টুঙ্গিপাড়া এক্সপ্রেস, সেবা গ্রিনলাইনসহ বেশ কিছু এসি ও নন-এসি বাস। ভাড়া পড়বে এসি, নন-এসিভেদে ৩০০-৪০০ টাকা। সময় লাগতে পারে পাঁচ-ছয় ঘণ্টা।
গোপালগঞ্জে থাকার জন্য শহরের চৌরঙ্গী মোড়ে ও পোস্ট অফিস মোড়ে বেশ কিছু মাঝারি মানের হোটেল রয়েছে। যেখানে ২০০ থেকে ৮০০ টাকায় রাত্রিযাপন করা যাবে। এ ছাড়া টুঙ্গিপাড়ায় থাকতে চাইলে উপজেলা পরিষদের পাশে মধুমতি নামে পর্যটনের একটি মোটেল আছে। চাইলে সেখানেও আগে যোগাযোগ করে নেওয়া যায়।