কবিগুরুর শ্বশুরবাড়িতে
প্রতিদিনের অফিস-কাজ কারই বা ভালো লাগে? ব্যস্ত নগরজীবনে কাজকর্মের চাপে যখন আপনি পিষ্ট হয়ে যাচ্ছেন, ঠিক তখনই ঢাকার বাইরে কোনো দর্শনীয় স্থান ঘুরে আসতে পারেন। একঘেয়েমি দূর হওয়ার পাশাপাশি ইতিহাস-ঐতিহ্যের সান্নিধ্য পাবেন খুব কাছ থেকে। ঢাকার বাইরে পরিবার-পরিজন নিয়ে ঘুরতে যাওয়ার জায়গার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতি বিজড়িত স্থান দক্ষিণডিহি। ফুল, ফল আর বিচিত্র গাছ-গাছালিতে ঠাসাসৌম্য-শান্তগ্রাম দক্ষিণডিহি। খুলনা শহর থেকে ১৯ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে ফুলতলা উপজেলা। উপজেলা সদর থেকে তিন কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে গেলে দক্ষিণডিহি গ্রাম। গ্রামের ঠিক মধ্য খানে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে রবীন্দ্র স্মৃতিধন্য একটি দোতলা ভবন। এটাই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শ্বশুর বাড়ি।
যা দেখবেন
দক্ষিণডিহি গ্রামের প্রবেশ রাস্তার দুই পাশে দেখা যাবে শত শত সবুজ দেবদারু, সেগুন, শিরিশ, মেহগনি গাছের সারি। মাথা নুয়ে হয়তো প্রথমে ওরাই আপনাকে অভিনন্দন জানাবে । শূন্য প্রান্তরে গড়ে উঠেছে কিছু বসতবাড়ি।এসব কিছুকে পেছনে ফেলে সর্পিল রাস্তায় কিছুটা এগিয়ে গেলে জমিদারবাড়ির বিশাল প্রাঙ্গণ। দক্ষিণডিহির এই বাড়িটি সংস্কৃতিসেবীদের কাছে ‘দক্ষিণডিহি রবীন্দ্র কমপ্লেক্স’ নামে স্বীকৃতি পেয়েছে।
রবীন্দ্র কমপ্লেক্সে পৌঁছালেই প্রথমে দেখা যানে মনোরম এক দোতলাবাড়ি। কমপ্লেক্স প্রবেশের আগে টিকেট কাটতে হবে।কমপ্লেক্স প্রবেশ করে প্রথমেই দেখা যাবে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও মৃণালিনী ঠাকুরের ভাস্কর্য। দোতলা বাড়িজুড়েই আছে রবি ঠাকুরের বিভিন্ন সময়ে ধারণকৃত ছবি এবং কবির সাহিত্যকর্মের হাতে লেখা অনুলিপি যেমনঃ কবি গুরুর ১২ বছর বয়সের ছবি,তার হাতে লেখা গীতাঞ্জলি, কবির আঁকা ছবি সহ ইত্যাদি। বাড়ির সিঁড়ির কারুকার্য ছিল মনোমুগ্ধকর। রয়েছে ছোট একটা লাইব্রেরি। তবে এই রবীন্দ্র কমপ্লেক্স ভ্রমণের আদর্শ সময় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্ম অথবা মৃত্যুদিন। তখন কমপ্লেক্স প্রাঙ্গণে বিশাল আয়োজন করা হয়। বিভিন্ন জায়গা থেকে কবিভক্তের সমাগম হয় এই সময়। আর একটা মজার বিষয় মৃণালিনী দেবীর প্রকৃত নাম কিন্তু মৃণালিনী দেবী ছিল না। তাঁর নাম ছিল ভবতারিণী দেবী ওরফে পদ্ম ওরফে ফুলি ওরফে ফেলি। ভবতারিণীর বয়স যখন ১১ বছর তখন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সাথে বিয়ে হয়। বিয়ের পর ঠাকুর পরিবারে রীতি অনুযায়ী নাম রাখা হয় মৃণালিনী দেবী।
কীভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে আকাশ, রেল কিংবা সড়ক পথে যেতে পারেন খুলনা। তবে আকাশ পথে যেতে হলে প্রথমে আপনাকে ঢাকা শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে যেতে হবে যশোর। পরবর্তী সময়ে বাস কিংবা রেলে করে পৌঁছে যাবেন খুলনা। তবে ট্রেনে চেপে সরাসরি খুলনা চলে যেতে পারেন । এছাড়া আপনি সড়ক পথে পদ্মা সেতু দিয়ে খুলনা যেতে পারেন। ঢাকা-আরিচা পথে অথবা ঢাকা-মাওয়া পথে যেতে পারেন। উভয় পথে নন এসি অথবা এসি বাস আছে।
যা খাবেন
ভোজন রসিকদের জন্য রয়েছে সুখবর। রবীন্দ্র কমপ্লেক্সের একেবারেই কাছে রয়েছে বিখ্যাত বেজেরডাঙ্গা মুসলিম হোটেল।এখানকার চুই ঝাল দিয়ে গরুর মাংস এবং খাশির মাংস অত্যন্ত বিখ্যাত।এই মাংসের স্বাদ না নিলে ভ্রমণ অপূর্ণ রয়ে যাবে।
কোথায় থাকবেন
দক্ষিণডিহি গ্রাম অথবা ফুলতলা উপজেলা রাত্রিযাপনের সুব্যবস্থা নাই। রাত্রিযাপনের জন্য চলে আসতে হবে খুলনা শহরে। খুলনা শহরে রয়েছে বিভিন্ন মানের হোটেল।
খেয়াল রাখবেন
খুলনার পানি লবণাক্ত। যদি লবণ পানিতে কারো সমস্যা থাকে তবে মিনারেল ওয়াটার কিনে খেতে পারেন। খুলনার মানুষ খুবই আন্তরিক। তবুও অপরিচিত মানুষের দেওয়া খাবার এড়িয়ে চলুন।